গাদ্দাফির রক্তে শান্তি আসবে লিবিয়ায়? by ফৌজিয়া সুলতানা
আরব বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করেছেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। টানা ৪২ বছর শক্ত হাতে লিবিয়াকে পরিচালনা করেছেন তিনি। ফলে সেই অর্থে তেমন কোনো বিরোধী দল বা নেতা তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় তাঁর অনুপস্থিতিতে অনুমিতভাবেই লিবিয়ার শাসন ক্ষমতায় বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে। প্রায় আট মাস ধরে চলা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর লিবিয়ার পরিস্থিতি এখন কী হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বিশ্লেষকদের মধ্যে।
গাদ্দাফির মৃত্যু বিদ্রোহীদের হাতে হয়েছে, নাকি তাঁর অনুগতদের গুলিতে হয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। তবে তাঁর মৃত্যুর খবরকে বিশ্বের জন্য আচমকা কোনো ঘটনা বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। বিদ্রোহীদের হাতে লিবিয়ার অধিকাংশ এলাকার দখল চলে যাওয়ায় এবং গাদ্দাফি ত্রিপোলি ছেড়ে পালানোর পর যেকোনো সময় এ ধরনের খবর পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বিশেষজ্ঞদের মত, গাদ্দাফির মৃত্যু লিবিয়াকে শান্তির পথে নিয়ে যাবে_এ মুহূর্তেই এ রকম ধারণা করা ঠিক হবে না।
অত্যাচারী স্বৈরশাসকের অপসারণের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার নজির বিশ্বের অনেক দেশেই আছে। বিপরীত উদাহরণও রয়েছে। প্রায় ২২ বছরের শাসনের পর ১৯৯১ সালে সোমালিয়ার স্বৈরশাসক মোহাম্মদ সিয়াদ বাররে ক্ষমতাচ্যুত হন। কেনিয়ায় নির্বাসনে যাওয়ার চার বছর পর মারা যান তিনি। কিন্তু সিয়াদের অপসারণের পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উল্টো আরো অবনতির দিকে যায়। সেই থেকে জাতিগত সংঘাত সোমালিয়ায় অনেক গভীরে শিকড় গেড়েছে। লিবিয়াতেও একই ধরনের ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
লিবিয়ার অসংখ্য উপজাতী গোষ্ঠীকে একত্র করা সহজ হবে না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। ঐতিহাসিকভাবেই লিবিয়ার পূর্ব ও পশ্চিম এলাকার উপজাতী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একধরনের বিভেদ কাজ করছে। সম্পদ ভাগবাটোয়ারা করার উদ্যোগ নিয়েও গাদ্দাফি এদের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন করতে পারেননি। মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, 'আমার ধারণা, মিলিশিয়া বা রক্ষী বাহিনীই এ সমস্যার মূলে কাজ করছে। শুধু ত্রিপোলিতেই ২৮টি মিলিশিয়া গোষ্ঠী রয়েছে। প্রত্যেক উপজাতী গোষ্ঠীরই নিজস্ব বাহিনী আছে। এরাই আসল সমস্যা। লিবিয়ায় শান্তি অর্জনের জন্য এসব মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে অস্ত্র সমর্পণে রাজি করাতে হবে এবং জাতীয় সেনা ও পুলিশ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।'
গত জুলাই থেকে বিদ্রোহীদের অন্তর্বর্তী জাতীয় পরিষদ (এনটিসি) লিবিয়ার বৈধ সরকারের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এখনো নেতৃত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে অস্থিরতা কাটেনি। গাদ্দাফির মৃত্যুর মাত্র এক দিন আগেই মার্কিন সাময়িকী টাইমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনটিসির প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল জানান, এ সপ্তাহেই পদত্যাগের পরিকল্পনা করছেন তিনি। জিবরিল বলেন, 'আমরা সীমাহীন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ অস্থিরতা কাটানোর জন্য অর্থ, প্রতিষ্ঠান, অস্ত্র ও মতাদর্শের প্রয়োজন। এর কোনোটাই আমার নেই বলে আশঙ্কা আমার।'
পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত মাহমুদ জিবরিল এরই মধ্যে ইসলামপন্থী যোদ্ধাদের বিরাগভাজন হয়েছেন। মিসরাতার নিয়ন্ত্রণ নিতে সাহায্যকারী মিলিশিয়া বাহিনীও তাঁর বিরোধিতা করছে। বিরোধীদের ধারণা, পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত আমলা ও সাবেক গাদ্দাফি সরকারের কর্মকর্তারা নতুন লিবিয়ার নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা থেকে তাদের দূরে রাখবে। তারা এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেছে। লিবিয়ার প্রভাবশালী ইসলামী নেতা আলী আল সাল্লাবি ও ত্রিপোলি সামরিক পরিষদের নেতা আবদেল হাকিম বেলহাজ প্রকাশ্যেই জিবরিলের সমালোচনা করেছেন এবং তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন।
গাদ্দাফিবিরোধী যুদ্ধে অনেক দলই বিচ্ছিন্ন বা গোষ্ঠীগতভাবে লড়েছে। তাদের জাতীয় কোনো অবস্থান নেই। তবে এর মধ্যে মিসরাতার যোদ্ধারা কিছুটা শক্তিশালী অবস্থানে আছে। অভিযোগ রয়েছে, এনটিসি তাদের একপাশে ঠেলে রেখেছে। লিবিয়ার পরিস্থিতি 'জাতীয় সংগ্রামের দিক থেকে তৃণমূল পর্যায়ের বিশৃঙ্খলার দিকে যাচ্ছে' বলেও মন্তব্য করে জিবরিল। তিনি আরো বলেন, লিবিয়ায় 'নিজস্ব এজেন্ডা' বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। কারণ গাদ্দাফিকে সরানোর ব্যাপারে সাহায্যকারী দেশগুলো নিজ নিজ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করবে। এরই মধ্যে ইসলামী কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে আর্থিক সহায়তা ও অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগে সিরিয়ার সমালোচনা করেছে এনটিসি।
লিবিয়ায় গাদ্দাফি বাহিনীর হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেওয়ার পরপরই প্রায় প্রতিটি শহরের অস্ত্রাগার লুট করেছে বিদ্রোহীরা। আশঙ্কা রয়েছে, বিদেশি যেসব শক্তির সাহায্যে তারা গাদ্দাফিকে সরিয়েছে, সেই সব দেশের হেলিকপ্টার গুলি করে মাটিতে নামাতেই তারা হয়তো এসব অস্ত্রের ব্যবহার করবে। লিবিয়ায় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতি চালু হলে গাদ্দাফির অনুগতরাও দল গঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। তবে এদের মোকাবিলার কোনো পরিকল্পনা এখনো এনটিসির নেই।
লিবিয়ার অর্থনীতির প্রাণ বলে বিবেচিত তেল সম্পদকে কেন্দ্র করেও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পশ্চিমা সাহায্যকারীরা শুধু এই তেলের প্রলোভনেই লিবিয়ার দিকে এগিয়েছে। কেবল তাদের তৃপ্ত করতে পারলেই লিবিয়া আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রে পরিণত হবে না। সূত্র : ফরেনপলিসি, টাইম অনলাইন।
গাদ্দাফির পরিবারের কে কোথায়
অত্যাচারী স্বৈরশাসকের অপসারণের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার নজির বিশ্বের অনেক দেশেই আছে। বিপরীত উদাহরণও রয়েছে। প্রায় ২২ বছরের শাসনের পর ১৯৯১ সালে সোমালিয়ার স্বৈরশাসক মোহাম্মদ সিয়াদ বাররে ক্ষমতাচ্যুত হন। কেনিয়ায় নির্বাসনে যাওয়ার চার বছর পর মারা যান তিনি। কিন্তু সিয়াদের অপসারণের পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উল্টো আরো অবনতির দিকে যায়। সেই থেকে জাতিগত সংঘাত সোমালিয়ায় অনেক গভীরে শিকড় গেড়েছে। লিবিয়াতেও একই ধরনের ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
লিবিয়ার অসংখ্য উপজাতী গোষ্ঠীকে একত্র করা সহজ হবে না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। ঐতিহাসিকভাবেই লিবিয়ার পূর্ব ও পশ্চিম এলাকার উপজাতী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একধরনের বিভেদ কাজ করছে। সম্পদ ভাগবাটোয়ারা করার উদ্যোগ নিয়েও গাদ্দাফি এদের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন করতে পারেননি। মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, 'আমার ধারণা, মিলিশিয়া বা রক্ষী বাহিনীই এ সমস্যার মূলে কাজ করছে। শুধু ত্রিপোলিতেই ২৮টি মিলিশিয়া গোষ্ঠী রয়েছে। প্রত্যেক উপজাতী গোষ্ঠীরই নিজস্ব বাহিনী আছে। এরাই আসল সমস্যা। লিবিয়ায় শান্তি অর্জনের জন্য এসব মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে অস্ত্র সমর্পণে রাজি করাতে হবে এবং জাতীয় সেনা ও পুলিশ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।'
গত জুলাই থেকে বিদ্রোহীদের অন্তর্বর্তী জাতীয় পরিষদ (এনটিসি) লিবিয়ার বৈধ সরকারের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এখনো নেতৃত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে অস্থিরতা কাটেনি। গাদ্দাফির মৃত্যুর মাত্র এক দিন আগেই মার্কিন সাময়িকী টাইমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনটিসির প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল জানান, এ সপ্তাহেই পদত্যাগের পরিকল্পনা করছেন তিনি। জিবরিল বলেন, 'আমরা সীমাহীন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ অস্থিরতা কাটানোর জন্য অর্থ, প্রতিষ্ঠান, অস্ত্র ও মতাদর্শের প্রয়োজন। এর কোনোটাই আমার নেই বলে আশঙ্কা আমার।'
পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত মাহমুদ জিবরিল এরই মধ্যে ইসলামপন্থী যোদ্ধাদের বিরাগভাজন হয়েছেন। মিসরাতার নিয়ন্ত্রণ নিতে সাহায্যকারী মিলিশিয়া বাহিনীও তাঁর বিরোধিতা করছে। বিরোধীদের ধারণা, পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত আমলা ও সাবেক গাদ্দাফি সরকারের কর্মকর্তারা নতুন লিবিয়ার নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা থেকে তাদের দূরে রাখবে। তারা এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেছে। লিবিয়ার প্রভাবশালী ইসলামী নেতা আলী আল সাল্লাবি ও ত্রিপোলি সামরিক পরিষদের নেতা আবদেল হাকিম বেলহাজ প্রকাশ্যেই জিবরিলের সমালোচনা করেছেন এবং তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন।
গাদ্দাফিবিরোধী যুদ্ধে অনেক দলই বিচ্ছিন্ন বা গোষ্ঠীগতভাবে লড়েছে। তাদের জাতীয় কোনো অবস্থান নেই। তবে এর মধ্যে মিসরাতার যোদ্ধারা কিছুটা শক্তিশালী অবস্থানে আছে। অভিযোগ রয়েছে, এনটিসি তাদের একপাশে ঠেলে রেখেছে। লিবিয়ার পরিস্থিতি 'জাতীয় সংগ্রামের দিক থেকে তৃণমূল পর্যায়ের বিশৃঙ্খলার দিকে যাচ্ছে' বলেও মন্তব্য করে জিবরিল। তিনি আরো বলেন, লিবিয়ায় 'নিজস্ব এজেন্ডা' বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। কারণ গাদ্দাফিকে সরানোর ব্যাপারে সাহায্যকারী দেশগুলো নিজ নিজ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করবে। এরই মধ্যে ইসলামী কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে আর্থিক সহায়তা ও অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগে সিরিয়ার সমালোচনা করেছে এনটিসি।
লিবিয়ায় গাদ্দাফি বাহিনীর হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেওয়ার পরপরই প্রায় প্রতিটি শহরের অস্ত্রাগার লুট করেছে বিদ্রোহীরা। আশঙ্কা রয়েছে, বিদেশি যেসব শক্তির সাহায্যে তারা গাদ্দাফিকে সরিয়েছে, সেই সব দেশের হেলিকপ্টার গুলি করে মাটিতে নামাতেই তারা হয়তো এসব অস্ত্রের ব্যবহার করবে। লিবিয়ায় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতি চালু হলে গাদ্দাফির অনুগতরাও দল গঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। তবে এদের মোকাবিলার কোনো পরিকল্পনা এখনো এনটিসির নেই।
লিবিয়ার অর্থনীতির প্রাণ বলে বিবেচিত তেল সম্পদকে কেন্দ্র করেও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পশ্চিমা সাহায্যকারীরা শুধু এই তেলের প্রলোভনেই লিবিয়ার দিকে এগিয়েছে। কেবল তাদের তৃপ্ত করতে পারলেই লিবিয়া আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রে পরিণত হবে না। সূত্র : ফরেনপলিসি, টাইম অনলাইন।
গাদ্দাফির পরিবারের কে কোথায়
No comments