শ্রমিক নেতা মোদাচ্ছের হত্যা-শ্রম প্রতিমন্ত্রীকে দায়ী করে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বপাশা সরকারি খাদ্যগুদামের (সিএসডি) শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোদাচ্ছের হোসেন হত্যার ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে দায়ী করেছে মহানগর বিএনপি। বিএনপি নেতারা খুলনায় মন্ত্রীর সব কর্মসূচি বয়কট ও চার দিনের আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা এ ঘোষণা দেন। এদিকে দুই দফা জানাজা শেষে সাড়াডাঙ্গা মাঠ সংলগ্ন গোরস্থানে মোচ্ছাদের হোসেনের লাশ দাফন করা হয়েছে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে দুজন শ্রমিক নেতা খুন হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।


মোচ্ছাদের হত্যার প্রতিবাদে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য ও নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেন, মহেশ্বরপাশা খাদ্যগুদামের পরপর দুবার নির্বাচিত সভাপতি ও বিএনপি নেতা মোদাচ্ছের হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে গত ২৪ জুন তিনি সিবিএর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরদিন সন্ত্রাসীরা তাঁকে হত্যার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ওই সময় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর সহকর্মী শ্রমিক নেতা আবদুস সালাম দুপু নিহত হন। ওই হত্যার ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া আটজন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ও অন্যজন পলাতক থেকে মামলা তুলে নিতে মোদাচ্ছেরকে হুমকি দিয়ে আসছিল। ওই হত্যার সঙ্গে জড়িতরাই তাঁকে হত্যা করেছে। বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিক নেতা দুপু হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ মদদদাতা। দুপুর খুনিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে ওই মন্ত্রীর গাড়িবহরে ঘুরে বেড়ায়। এ কারণে তারা আজ এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সাহস পেয়েছে। এর আগেও মন্ত্রী দৌলতপুর যুবদলের নেতা ওমর ফারুক হত্যা মামলার সাক্ষ্য চলাকালে আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
সংসদ সদস্য মঞ্জু সন্ত্রাসী ও হত্যাকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে প্রতিমন্ত্রীর সব কর্মসূচি বয়কটের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া হত্যার প্রতিবাদে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালো ব্যাজ ধারণ ও দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, আজ শনিবার বিকেলে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, রবিবার মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সোমবার দৌলতপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নগর সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনি, কেন্দ্রীয় নেতা সাহারুজ্জামান মোর্তজা, জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, সেকেন্দার আলী ডালিম, ফকরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ কামাল, রেহেনা আক্তার, অ্যাডভোকেট ফজলে হালিম লিটন, এস এম আরিফুর রহমান মিঠু, আসাদুজ্জামান মুরাদ প্রমুখ।
এদিকে গতকাল দুপুরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মোদাচ্ছের হোসেনের লাশের ময়নাতদন্তের পর মহেশ্বরপাশায় নিয়ে যাওয়া হয়। বাদ জুমা মানিকতলা মসজিদুল মেরাজ প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাঁর মৃতদেহ নিজ বাড়ি ঘোষপাড়ায় নিয়ে গেলে মোদাচ্ছেরের সন্তান, আত্মীয়স্বজনের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাদ আসর মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় নিহতের বাড়িসংলগ্ন বায়তুশ শরফ জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সাড়াডাঙ্গা মাঠসংলগ্ন গোরস্থানে তাঁকে দাফন হয়। নিহত মোদাচ্ছেরের বড় ছেলে মো. আরিফ হোসেন তাঁর বাবার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি করে বলেন, 'দীর্ঘদিন থেকে সন্ত্রাসীরা তাঁকে হত্যার হুমকি দিলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। আজ রাতে (শুক্রবার) থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছি।' দৌলতপুর থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হক ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, 'হত্যার ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। থানায় মামলা হয়নি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।'

No comments

Powered by Blogger.