সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা : পায়ের তলায় মাটি না থাকলে ক্ষমতাসীনরা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে চায়

বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, লেখক ও সাংবাদিকরা বলেছেন, নতুন কোনো সম্প্রচার নীতিমালার প্রয়োজন নেই। প্রচলিত আইনেই গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। বিরোধী মতকে দমন করা আওয়ামী লীগের পুরনো ঐতিহ্য। আর সরকার যখন সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় এবং যখন মনে করে তাদের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে, তখনই তারা গণমাধ্যমের কণ্ঠ চেপে ধরতে উদ্যত হয়।গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘প্রগতিশীল শিল্পী ও গণমাধ্যম কর্মী ফোরাম’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও প্রস্তাবিত সম্প্রচার নীতিমালা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন।


বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, প্রধান তথ্য কমিশনার এম. জমির, প্রবীণ সাংবাদিক ড. মাহফুজ উল্লাহ, দৈনিক সমকাল-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, ’৭১ টিভি’র বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, এটিএন নিউজের বার্তা সম্পাদক প্রণব সাহা, ’৭১ টিভি’র সাংবাদিক শাকিল আহমেদ, টিভি ব্যক্তিত্ব আবদুন নূর তুষার, মাসিক ভ্যানগার্ড-এর ফখরুদ্দিন কবির আতিক ও এটিএন নিউজের সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার সাগর, সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন নূর সাফা জুলহাজ। উপস্থিত ছিলেন প্রগতিশীল শিল্পী ও গণমাধ্যম কর্মী ফোরামের সদস্য আলী মো. আবু নাঈম, আমিনুল আকরাম, তৌহিদুল ইসলাম রানা, আতিকুর রহমান প্রমুখ।
ড. আকবর আলি খান বলেন, নতুন কোনো নীতিমালার প্রয়োজন নেই, প্রচলিত আইনের কাঠামোর মধ্যেই গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, প্রয়োজনে প্রেস কাউন্সিলকে আরও শক্তিশালী করে, তার ক্ষমতা বাড়িয়ে সাংবাদিকদের পেশাগত জবাবদিহির ব্যবস্থা করা যায়। এক্ষেত্রে সাংবাদিক ও বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের আলাদা আলাদা পেশাগত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা উচিত। তিনি আরও বলেন, নীতিমালায় বলা আছে, বিভ্রান্তিকর-মিথ্যা তথ্য দেয়া যাবে না। এই তথ্যের সঠিকতা-বেঠিকতা যাচাই করবে কে? বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসস্টিকস বলছে, বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৫ শতাংশ। আমাকে পাগল আখ্যা দিয়ে পাবনা পাঠালেও তো আমি এ তথ্য মানতে রাজি নই। তিনি বলেন, সরকার যদি এ নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে চায় তাহলে সে নিজের পায়েই কুড়াল মারবে।
প্রধান তথ্য কমিশনার এম জমির বলেন, নীতিমালা এখনও খসড়া পর্যায়ে। কিন্তু একতরফা কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমের আরও দায়িত্বশীলতা দরকার আছে। ড. মাহফুজ উল্লাহ বলেন, বিরোধী মতকে দমন করা আওয়ামী লীগের পুরনো ঐতিহ্য। আর সরকার যখন মনে করেন তার পায়ের তলার মাটি সরে গেছে, তখনই সে গণমাধ্যমের কণ্ঠ চেপে ধরতে চায়। আবু সাঈদ খান বলেন, বিটিভি’র সংবাদ বেসরকারি টিভিগুলোকে প্রচার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিটিভিকেই বরং বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর সংবাদ প্রচার করতে বলা উচিত। কাবেরী গায়েন বলেন, আমরা গণমাধ্যম কর্মীরা প্রতিরোধের মাধ্যমেই আমাদের পথ তৈরি করে নিতে চাই। সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, আমরা বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য কোনো নীতিমালা চাই না। প্রণব সাহা বলেন, একই লোক যখন বিরোধী দলে থাকেন তখন আমাদের পিঠ চাপড়ান আর যখন মন্ত্রী হন তখন আমাদের সাংবাদিকতা শেখাতে আসেন। আমরা স্বাধীন সাংবাদিকতা চাই। আবদুন নূর তুষার বলেন, সরকার যে আইন প্রস্তাব করেছে নিজেই তার বিরোধী অবস্থান নিয়ে আছে।

No comments

Powered by Blogger.