একটি অন্য রকম প্রথম দিন

উইকেটে ২৫৫ রান। প্রথম দিন শেষের স্কোর হিসেবে খুব আহামরি কিছু না। এর চেয়ে ঢের বেশি রান করে অনেক দল। এর চেয়ে কম উইকেট হারানোর নজিরও অজস্র। কিন্তু দলটি যখন বাংলাদেশ, টেস্টের প্রথম দিনের এই পারফরম্যান্স বিস্ময়কর ব্যতিক্রম। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম দিন 'জয়' করা যে পরিসংখ্যানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল।ক্রিকেট পরিসংখ্যানের খেলা। আর পরিসংখ্যানের খাতাতে বাংলাদেশ নামক দেশটির পাতাগুলো বড্ড জীর্ণ, মলিন। একেবারে ঘুণপোকায় খাওয়া। আরো অনেক কিছুর মতো টেস্টের প্রথম দিনের ব্যাটিং দীনতার ছবিটাও তাই। আগের ৬৯ টেস্টের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করেছে ৪৪ বার।


এর মধ্যে চারটির হিসাব বাদ দিতে হবে, কারণ বৃষ্টির কারণে সেই খেলাগুলোতে নির্ধারিত ওভার হতে পারেনি। রইল বাকি যে ৪০ বার, তার মধ্যে আগে ব্যাটিং করে প্রথম দিনই বাংলাদেশ অল আউট হয়েছিল ২৫ বার। ভুল পড়েননি, ২৫ বারই! এর মধ্যে দলের রান তিন অঙ্কে পেঁৗছার আগে তারা গুঁড়িয়ে গেছে চারবার! আর পরিধি আরেকটু বাড়িয়ে সেটি যদি দেড় শ করা হয়, সংখ্যাটি তাহলে গিয়ে ঠেকবে ১৩-তে! দুই শ করা হলে তা ২১! টেস্টে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশের যে কী হাল, বুঝতেই পারছেন!
টেস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশের ব্যাটিং করার অর্থই তাই ছিল পা কাঁপাকাঁপি। নতুন বলে নতুন উইকেটের পেস-বাউন্সের সামনে অসহায় হয়ে পড়া। বাংলাদেশকে সামনে পেলেই তাই প্রতিপক্ষ দলগুলো নামতা পড়ার মতো তুলে নেয় উইকেট। অথচ শুরুটা কিন্তু ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছিল। অভিষেক টেস্টের প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ২৩৯ রান। হাবিবুল বাশারের ধ্রুপদী ৭১ রানের পাশাপাশি আমিনুল ইসলাম অপরাজিত ছিলেন ৭০ রান করে। পরদিন তাঁর সেঞ্চুরি তো যাকে বলা হয় ইতিহাস! বাংলাদেশও প্রথম ইনিংসে তোলে ৪০০। আগে ব্যাটিং করা পরের দুই টেস্টে প্রথম দিন শেষে ৯ উইকেটে ২৫৬ এবং ৬ উইকেটে ১৯৮_নতুন এক টেস্ট খেলুড়ে দেশের জন্য মন্দ কী!
এরপরই শুরু হয় সেই গ্রহণকাল। একেবারে কৃষ্ণগহ্বরে ঢুকে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং। পরের টানা ১২ টেস্টে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ অল আউট হয়ে গেছে প্রথম দিনই। এরপর থেকে দু-একটি আনন্দদায়ী উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বাদ দিলে এটিই ছিল চেনা চেহারা। যদি সিরিজ হিসেবে ধরেন, তাহলে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বাজে উদাহরণ ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ। সিরিজের তিন টেস্টের প্রতিটিতেই আগে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে মাত্র ৩২.৩ ওভারে ৮৯ রানে অল আউট, পরেরটিতে ২৫.২ ওভারে ৬২ রানে। শেষ টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে খেলা হয়েছিল মাত্র ২৯ ওভার। তাতে ৭২ রান তুলতেই চার উইকেট হারায় তারা। শুরুতেই এই যে কুঁকড়ে যাওয়া, এখান থেকে আর বেরোনোর উপায় থাকে না। প্রতিপক্ষের সেই বজ আঁটুনি ছোটানোর পথ খুঁজে পায় না বাংলাদেশ।
ব্যতিক্রমও আছে। টেস্টে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো দিন গিয়েছিল ২০০৩ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে। প্রথম দিন শেষে দুই উইকেটে ২৪০ রান তোলে তারা। হাবিবুল বাশার ৯৭ রান করে আউট হলেও জাভেদ ওমর অপরাজিত ছিলেন ৯৬ রানে। পরদিন তিনি পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। কালকের দিনের সঙ্গে সেই দিনটির মিল খুঁজে পাচ্ছেন এই ওপেনার, 'হ্যাঁ, শুরুটা তো সেদিনের মতোই হলো। তবে আমরা এটি আর ধরে রাখতে পারিনি। যে কারণে টেস্টটি হেরে যেতে হয়েছিল। আশা করি এই টেস্টে বাংলাদেশ সেটি পারবে।' আরেকটি সফল প্রথম দিন আছে বাংলাদেশের। রান বিবেচনায় সেটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ২০০৬ সালে ফতুল্লা টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম দিনে ৫ উইকেটে ৩৫৫ রান তুলেছিল স্বাগতিকরা। শাহরিয়ার নাফীসের ১৩৮ এবং হাবিবুল বাশারের ৭৬ রান যার হাইলাইটস। 'আমাদের শুরুতে সেবার চমকে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ানরা। এবার সেটি হয়তো হয়নি। তবে আশা করব, প্রথম দিনের ভালো খেলার ধারাটা পুরো টেস্টজুড়েই থাকবে'_সেই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নাফীসের আশাবাদ।
এমন শুরুর পর আশার আবহ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দলেই। হাফ সেঞ্চুরি করা ওপেনার তামিম ইকবালের কণ্ঠেও এর অনুরণন, 'একটা দিন পুরো ব্যাটিং করা আমাদের জন্য ভালো অর্জন। এখান থেকে শেষ পর্যন্ত কত করব বলা মুশকিল। কারণ দ্রুত রান তোলার উইকেট না এটা। রানের জন্য এখানে কষ্ট করতে হবে। কাল যতটুকু সম্ভব ব্যাটিং করার চেষ্টা করব। আমার মনে হয়, ৩২০ থেকে ৩৫০ হতে পারে খুব ভালো স্কোর।'
প্রথম দিনের এমন শুরুর পর প্রত্যাশাটা তো খুব বেশি না, নাকি!

No comments

Powered by Blogger.