ভোট কারচুপির আশঙ্কা করছেন আইভী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা করেছেন মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। একই সঙ্গে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া সাংসদ নাসিম ওসমানের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রভাবিত করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ এসেছে সাবেক এ পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে। তার আরও অভিযোগ, ভোট ডাকাতির চেষ্টা শুরু করেছেন এক প্রার্থী। আইভীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন গতকাল শুক্রবার রিটার্নিং অফিসারের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।


অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারও প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ আনেন। ডা. আইভীর পক্ষ থেকে দেওয়া অভিযোগে উলেল্গখ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে ১৭নং ওয়ার্ডের পাইকপাড়া শাহ সুজা রোডে আইভীর পক্ষে ১০-১২ কর্মী লিফলেট বিতরণ করতে থাকলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মামুন মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের এসআই জহিরুল ইসলামসহ
ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রচারে বাধা দিয়ে দশ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৪ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। যা যুক্তিসঙ্গত নয়। অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়, আচরণবিধি অনুযায়ী ১০-১২ জন প্রচারপত্র বিলি করতে পারবে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার বিকেলে ১নং ওয়ার্ডের মিজমিজি এলাকায় লিফলেট বিতরণের সময় এক ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ এসে লিফলেট ছিনিয়ে নেয় এবং পুলিশ বলে, লিফলেট মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও তারিখ না থাকায় এ লিফলেট বিলি করা যাবে না। অথচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালার কোথাও এমন ধারা নেই যে লিফলেটে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও তারিখ থাকতে হবে। একই দিন ৭নং ওয়ার্ডের কদমতলী হাইস্কুলের সামনে থেকে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট আইভীর একটি ফেস্টুন খুলে নেন। ফেস্টুনটি ৩ মিটারের চেয়েও বড় এমন অভিযোগ এনে তা খুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ আইভীর কোনো ফেস্টুনই ৩ মিটারের বড় নয়। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, শামীম ওসমানের ৩ মিটারের চেয়েও বড় ফেস্টুনগুলো বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শিত হচ্ছে। অথচ তা খুলে নেওয়ার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
অভিযোগে বলা হয়, পক্ষপাতমূলক অবস্থানের কারণে বর্তমান প্রশাসনের রদবদল দাবি করা হয়েছিল। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের বিতর্কিত জেলা প্রশাসক ছুটিতে গেলেও তার সহকর্মী ও সহযোগীদের দিয়ে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আইভী সমর্থকরা শঙ্কিত।
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, 'নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কারণ এমন অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন যারা অতীতে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারের সময় আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। সমর্থকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করি নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জবাসীকে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে। আমি কোনো ব্যক্তিকে প্রতিপক্ষ মনে করি না। আমার লড়াই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এবং আমি মনে করি ৩০ অক্টোবর আমার পক্ষে গণরায়ের মাধ্যমেই সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের বিজয় অর্জিত হবে।'
আইভী অভিযোগ করেন, মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমানের ভাই নাসিম ওসমান প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন, ৩০ তারিখ সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই ফল ঘোষণা করা হবে এবং আইভী পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারবে। স্থানীয় সাংসদ যখন প্রকাশ্যে এভাবে কথা বলেন, তখন সবার মনে আশঙ্কা জাগা স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, তার পক্ষের সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ হয়রানি করছে। তাদের গ্রেফতারের ভয় দেখাচ্ছে। তার কর্মীরা গণসংযোগ করতে গেলে সেখানে প্রশাসনের সহায়তায় বাধা দেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসনের বিরুদ্ধে তৈমুরেরও অভিযোগ
নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার প্রসঙ্গে এক মন্তব্য নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত শুনানিতে অংশ নেন তৈমুর। শুনানি শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'বেশ কিছু স্থানে নির্বাচনী প্রচারে অযথা বাধা দেওয়ার কারণে প্রশাসনের আচরণ নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে। কর্মী-সমর্থকদের ভয়-ভীতি দেখানোর ঘটনা উল্লেখ করে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছি না।' তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই প্রশাসনের নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে শহরের চাষাঢ়ায় জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে শুরু হয় শুনানি। এতে তৈমুরের পক্ষে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাবেক নেতা কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন ইভিএমের উদ্ভাবক বুয়েটের প্রকৌশলী এস এম লুৎফুল কবির। এ সময় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান, তৈমুর আলম খন্দকারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা শুনানি চলে।
শুনানি শেষে সাংবাদিকদের কাছে শামা ওবায়েদ বলেন, ইভিএম মেশিন ভারতে তৈরি ইভিএমের আদলে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ মেশিনে ভোট গ্রহণ হতো। হ্যাকিংসহ কারচুপির কারণে ওইসব দেশে এ মেশিন ব্যবহার বাতিল করা হয়েছে। শামা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, 'আমাকে এ মেশিন ৭ দিনের জন্য দিলে আমি এর কারচুপি ও হ্যাকিং প্রমাণ করতে পারব।'
ইভিএম মেশিনের উদ্ভাবক এস এম লুৎফুল কবির সাংবাদিকদের জানান, তৈমুর সাহেব ও তার বিশেষজ্ঞদের বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে এসে তারা যত খুশি তত পরীক্ষা করতে পারবেন। ইভিএম মেশিন দিয়ে নির্বাচনে কারচুপি কিংবা হ্যাকিংয়ের কোনো সুযোগ নেই।
রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তৈমুর আলম খন্দকার ও তার সঙ্গে আসা তাদের বিশেষজ্ঞ এ মেশিনে হ্যাকিং সম্ভব দাবি করে মেশিন চেয়েছেন। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
 

No comments

Powered by Blogger.