সপ্তাহজুড়ে নানা প্রণোদনা

দেশের শেয়ারবাজার আলোচিত আরও একটি সপ্তাহ পার করল। ধারাবাহিক দরপতন ঠেকাতে একদিকে নানা প্রণোদনার ঘোষণা, অন্যদিকে পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের ‘আমরণ অনশন’—এসব মিলিয়ে গত সপ্তাহটি ছিল দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। বড় দরপতন দিয়ে সপ্তাহটি শুরু হলেও সপ্তাহ শেষে আবারও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশা জাগিয়ে শেষ হয় লেনদেন। দরপতন ঠেকাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) নানা উদ্যোগ নেয়।
এ ছাড়া প্রণোদনা হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত সোমবার শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট করবিষয়ক আলাদা তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ ছাড়া সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে নতুন করে আরও বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) এক বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সংগঠনটির চেয়ারম্যান কে মাহমুদ সাত্তার চলতি সপ্তাহ থেকে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে যেসব ব্যাংকের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা (নিজস্ব বিনিয়োগ ও শেয়ারের সব ঋণ মিলিয়ে) আমানতের ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে, তাদের নতুন করে বিনিয়োগে কোনো আইনি বাধা নেই।’
এই ঘোষণায় গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়। ওই দিনই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। একই দিন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) শেয়ারের মূল্যসূচক বেড়েছে।
অন্যদিকে, ধারাবাহিক দরপতনের প্রতিবাদে রোববার থেকে রাজধানীর মতিঝিলের ডিএসই ভবনের সামনের সড়কে ‘আমরণ অনশন’ শুরু করেন আন্দোলনরত বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। তবে সোমবার সকালে পুলিশ অনশনকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দিলে জাতীয় প্রেসক্লাব ও শহীদ মিনারে আশ্রয় নেন তাঁরা। সেসব জায়গায় পুলিশ বিনিয়োগকারীদের কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়। পুলিশি বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
গত সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিনই ডিএসইতে দরপতন ঘটেছে। সপ্তাহের প্রথম দিনেই ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ১৮১ পয়েন্ট কমে যায়। সোমবার এনবিআরের কর প্রণোদনার খবরে ওই দিন মূল্যসূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে সেটি স্থায়ী হয়নি। মঙ্গল ও বুধবার আবারও দরপতন ঘটে। এই দুই দিনে ডিএসইর সাধারণ সূচক কমে ১৬৬ পয়েন্ট। তবে বৃহস্পতিবার ব্যাংকের বিনিয়োগের ঘোষণায় বাজারের চিত্র পাল্টে যায়। এক দিনেই ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক বাড়ে ২৮৭ পয়েন্ট। এই ঊর্ধ্বগতির পরও সূচক আগের সপ্তাহের অবস্থান ছাড়াতে পারেনি। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ২৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে পাঁচ হাজার ৫৪৫ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে ঢাকার বাজারে প্রায় এক হাজার ৩৭৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়, আগের সপ্তাহে এর পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন প্রায় ২১৯ কোটি টাকা কমেছে।
মোট লেনদেনের পরিমাণের পাশাপাশি কমেছে দৈনিক গড় লেনদেন। গত সপ্তাহে ডিএসইর দৈনিক গড় লেনদেন নেমে এসেছে ২৭৫ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩১৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা।
সপ্তাহ শেষে ডিএসইর মূল্য আয়ের অনুপাতের (পিই রেশিও) গড় ভারিত্ব কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৫১-এ। আগের সপ্তাহেও যা ছিল ১৪ দশমিক ৫৯।

No comments

Powered by Blogger.