ছবি তোলার পর ফোকাস!

টোগ্রাফি অর্থাৎ ছবি তোলার ক্ষেত্রে ফোকাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছবির কোন অংশটিকে প্রাধান্য দিয়ে আলো-ছায়া ও অন্যান্য অনুষঙ্গ নির্ধারণ করে ছবিটি তোলা হবে, এর ওপর নির্ভর করে ছবির মান। কিন্তু ফোকাস নির্ধারণ করতে পারার জন্য দরকার পড়ে দক্ষতার। অনেক সময় দক্ষতা থাকার পরও ছবি ঠিক মনমতো
হয় না। আর বাজে ফোকাসে ছবি তুলে ফেলার পর তো আর কিছু করার থাকে না। তবে এ সমস্যা দূর করতে খুব শিগগির বাজারে আসছে এখনকার সর্বশেষ প্রযুক্তির ক্যামেরা 'লাইট্রো'। এ ক্যামেরা একই সময়ে একটি ছবির সম্ভাব্য সব ফোকাস নির্ণয় করে অনেকগুলো ছবি তুলবে।


পরে সেগুলো থেকে পছন্দমতো ফোকাসের ছবিটি বেছে নিলেই হলো। অর্থাৎ ব্যাপারটি আসলে অনেকটা ছবি তোলার পর ফোকাস নির্ধারণের মতোই। আর অভিনব এ সুবিধার জন্য লাইট্রোকে বলা হচ্ছে আশ্চর্য এক ক্যামেরা।
ফটোগ্রাফির বহুবিধ উপযোগিতার কারণে ক্যামেরার কদর ও ব্যবহার বেড়েই চলেছে। নানা সুবিধা পাওয়ার জন্য ক্যামেরাগুলোতে একে একে জুড়ে বসেছে বহু ধরনের যন্ত্রাংশ। সেগুলো ভালো মানের ছবি তোলার অনেক ধরনের সুযোগ করে দিচ্ছে। কিন্তু আধুনিক ক্যামেরাগুলোতে এত বেশি যন্ত্রাংশ আর 'অপশন' থাকে যে সেগুলো নির্ভুলভাবে ব্যবহার করে ছবি তোলার জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে হলেও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তাই শখ থাকা সত্ত্বেও অনেকের পক্ষেই ক্যামেরা চালানো বা ভালো ছবি তোলা সম্ভব হয় না। গবেষকরা বলছেন, এ সমস্যা দূর করবে লাইট্রো। কেননা লাইট্রোতে মাত্র দুটি বাটন আছে_অন/অফ এবং শাটার।
উদ্ভাবকরা জানিয়েছেন, লাইট্রো একটি ছবির সম্ভাব্য সব ফোকাস দূরত্ব ও লেন্সের সামনে থাকা সব আলো নিজের মধ্যে তথ্য হিসেবে সংরক্ষণ করে। পরে ওই সব তথ্য থেকে ক্যামেরাটি নিজেই সম্ভাব্য সব ফোকাসের ছবি পুনরুৎপাদন করে। ছবিগুলো পিসি বা অন্য কোনো স্ক্রিনে দেখে পছন্দের ফোকাসের ছবিটি বাছাই করে নেওয়া যায়। ক্যামেরাটির রয়েছে আরো অনেক সুবিধা। আলো, রং, অবস্থান শুধু নয়_আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ এবং লেন্সের মাধ্যমে ক্যামেরায় আলো প্রবেশের দিকগুলোও সে নিজের তথ্যভাণ্ডারে তথ্য হিসেবে ধারণ করবে। পরে এসব তথ্য থেকে ক্যামেরাটি নিজেই একেকটি বিষয়ের একাধিক করে ছবি তৈরি করবে। এসব ছবি হবে ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি)। চাইলে এসব ছবি কোনো ধরনের থ্রিডি কনভার্টার সফটঅয়্যার ছাড়াই সরাসরি ত্রিমাত্রিক ছবি হিসেবে দেখা যাবে। আবার এসব ছবি স্লাইড শো হিসেবেও দেখা এবং ইন্টারনেটে আপলোড করা যাবে। উদ্ভাবকরা আশা করছেন, এ বছরের শেষদিকেই ক্যামেরাটি বাজারে পাওয়া যাবে। এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯৯ ডলার (প্রায় ৩০ হাজার টাকা)।
৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে উদ্ভাবন করা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরা লাইট্রোর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র আকারের অনেক লেন্স। সেগুলো বিভিন্ন ফোকাস ও ফোকাস দূরত্বের ছবি ধারণ করে। আর এর তথ্যভাণ্ডারও রীতিমতো বিস্ময়কর। উদ্ভাবকরা বলছেন, একটি লাইট্রো যে পরিমাণ তথ্য ধারণ করে রাখতে পারে, এখনকার অন্য আধুনিক ক্যামেরাগুলো দিয়ে ওই পরিমাণ তথ্য ধারণ করতে হলে ওই সব ক্যামেরা যতগুলো লাগবে সেগুলো বড় আকারের একটি কক্ষে রাখলে কক্ষটি ক্যামেরা দিয়ে ভরে যাবে। অথচ একটি লাইট্রোর আকার এতই ছোট যে এটি সহজেই হাতের মুঠোয় বা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে।
উদ্ভাবকদের প্রত্যাশা, সুবিধাজনক এতসব বৈশিষ্ট্যের কারণে ফটোগ্রাফির ইতিহাস পাল্টে দেবে এই লাইট্রো। ফটোগ্রাফির ধরন এবং ব্যবহার এ ক্যামেরার বদৌলতে পাল্টে যাবে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যামেরা কম্পানিগুলো এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, লাইট্রো কখনোই সব সমস্যার সমাধান নয়। ক্যামেরাটি সব শট (ছবি) ভালো হওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারবে না। যেমন_ছবি তোলার সময় হাত কেঁপে যাওয়া একটি বহুল প্রচলিত ব্যাপারের মতোই। এতে ছবি ব্লার (অস্পষ্ট) হয়ে যায়। এ ছাড়া ছবির ফ্রেমিংও বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কাজেই লাইট্রো যে ফটোগ্রাফির বর্তমান ধারাকে পাল্টে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে, তা হয়তো না-ও হতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করবে আসলে ফটোগ্রাফারদের ওপরই_তারা এ প্রযুক্তি কীভাবে নেবে। সূত্র : দ্য ডেইলি মেইল অনলাইন।

No comments

Powered by Blogger.