ইভিএম মেশিনে টেম্পারিং, হ্যাক করা সম্ভব : শুনানিতে তৈমূরের চ্যালেঞ্জ

নাসিক নির্বাচনে যে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হবে তা দিয়ে ট্যাম্পারিং ও হ্যাকিং করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন এক্সপার্ট শ্যামা ওবায়েদ। তিনি এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেও সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেননি নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা। ইভিএম নিয়ে মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের সংবাদ মাধ্যমে দেয়া একটি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন তাকে শোকজ করেন। এ ব্যাপারে তৈমূর ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন নির্বাচন কমিশনে। শুক্রবার বিকাল ৪টায় ছিল এ শুনানির সময়। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে শহরের চাষাঢ়ায় জেলা পরিষদের ডাক বাংলাতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে শুরু হয় শুনানি।


এতে তৈমূরের পক্ষে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাবেক নেতা কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শ্যামা ওবায়েদ। আর নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন ইভিএম এর উদ্ভাবক বুয়েটের প্রকৌশলী এস এম লুত্ফুল কবির। এ সময় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুত্ফর রহমান, তৈমূর আলম খন্দকারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একটানা এ শুনানি চলে।
শুনানি শেষে সাংবাদিকদের কাছে শ্যামা ওবায়েদ বলেন, আমি বিএনপির পক্ষে আসিনি। একজন এক্সপার্ট হিসেবে এসেছি। ইভিএম মেশিন ভারতে তৈরি ইভিএম’র আদলে আধুনিক করে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মেশিনে ভোটগ্রহণ হতো। কিন্তু এ মেশিনে হ্যাকিং সহ কারচুপির কারণে ওইসব দেশে এ মেশিন ব্যবহার বাতিল করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে আসার আগে ইভিএম মেশিনটি যে ট্যাম্পারিং করা যায় তা
তাদের দেখিয়েছি। এই মেশিনটিতে রিকাউন্ট করার কোনো উপায় নেই। কোনো ধরনের পেপার্স নেই। কোনো প্রার্থী কারচুপির অভিযোগ করলে তা পুনরায় দেখার কোনো উপায় নেই। শ্যামা ওবায়েদ আরও বলেন, নাসিক নির্বাচনে যে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হবে সেগুলো দিয়েও হ্যাকিং করা সম্ভব। এসব মেশিন তৈরির পর শুধু বুয়েটে পরীক্ষা করা হয়েছে। বুয়েট ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান এর সায়েন্টিফিক পরীক্ষা করেনি। নির্বাচনের আগে তাদের উচিত্ ছিল অন্যান্য বিশেষজ্ঞ দ্বারা মেশিনটি পরীক্ষা করানো।
শ্যামা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, আমাকে এ মেশিন ৭ দিনের জন্য দিলে আমি এর কারচুপি ও হ্যাকিং প্রমাণ করতে পারব। নির্বাচন কমিশন যে দুই লাখ মেশিন তৈরি করিয়েছে তার থেকে একটি আমাকে দেয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুত্ফর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তৈমূর আলম খন্দকার ও তার সঙ্গে আসা তাদের বিশেষজ্ঞ এ মেশিনে হ্যাকিং সম্ভব দাবি করে মেশিন চেয়েছেন। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। তৈমূর আলম খন্দকার নয়টি ওয়ার্ডের বদলে দুইটি ওয়ার্ডে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন। তৈমূর ইভিএম মেনে নিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। তবে ইভিএম বিষয়ে পলিসি মেকার নির্বাচন কমিশন তিনি নন বলে সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে ইভিএম মেশিনের উদ্ভাবক বুয়েটের প্রফেসর এস এম লুত্ফুল কবির এরআগে শহীদ জিয়া হলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ইভিএম মেশিন দিয়ে নির্বাচনে কারচুপি কিংবা হ্যাকিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। অথচ শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করেন ইভিএম মেশিনে হ্যাক করলেও তা ধরা সম্ভব। নির্বাচনের দিন পোলিং এজেন্টরা হ্যাকিংয়ের বিষয়টি ধরতে পারবেন বলে তিনি জানান। পোলিং এজেন্টরা হ্যাকিং বিষয়ে এক্সপার্ট না হলে কিভাবে ধরবেন এ প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান। তিনি তখন বলেন, হ্যাকিং প্রতিরোধে মেশিনের ভেতরে বিশেষ একটি ডিভাইস বসানো রয়েছে। তারপরও কেউ হ্যাকিং করতে চায় তাহলে সেটা ধরা পড়ে যাবে। তখন মেশিন সতর্কীকরণ শব্দ করবে। তিনি আরও বলেন, বুয়েট মেশিনটি উদ্ভাবন করলেও অন্যান্য সংস্থার স্পেশালিস্টরা মেশিনটি পরীক্ষা করেছেন।
তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে ইভিএম মেশিন চেয়েছি। এ মেশিন আমরা হাতে পেলে ৭ দিনের মধ্যে হ্যাকিং ও কারচুপি প্রমাণ করতে পারবে আমাদের বিশেষজ্ঞরা।
তৈমূর বলেন, চট্টগ্রামে নির্বাচনে ১ কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে নারায়ণগঞ্জের ৯টি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হবে। আর এসব কেন্দ্রে আমার প্রচুর ভোট রয়েছে। তাছাড়া ইভিএম মেশিনে ভোট দেয়া নিয়ে অনেক প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী চলছে। কিন্তু এতে সাধারণ মানুষ এসে ভোট দিতে পারছে না। প্রশিক্ষণেই যদি ভোট দিতে না পারে তাহলে ভোটের দিন কিভাবে দিবে। এ কারণেই সবার স্বার্থে ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.