নিত্যপণ্য ও সারের দাম বৃদ্ধি : আইনশৃঙ্খলার অবনতি : ভালো নেই গ্রামের মানুষ by মাহাবুবুর রহমান
ইউরিয়া সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে ভালো নেই গ্রামের মানুষ। স্বল্প বেতনের সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা অতিকষ্টে দিন কাটায়। দিনমজুরদের অবস্থা আরও বেহাল। কাজ নেই, তাই দু’বেলা ভাত জোটে না। সারের মূল্য বৃদ্ধি এবং বৃষ্টি না হওয়ায় কীটপতঙ্গ দমন ও সেচ দিতে গিয়ে চাষীদের মাথায় হাত। ঘরের মজুত চাল বিক্রি করে ধানক্ষেতের জন্য ইউরিয়া ও কীটনাশক কেনায় অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে অনেক কৃষককে।
এবার ধানের উত্পাদন ব্যয় কেজিপ্রতি এক টাকা বাড়বে বলেও আভাস দিয়েছেন তারা। উত্তরাঞ্চলের আট জেলার বেশ ক’জন কৃষক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীর সঙ্গে আলাপে ওঠে আসে তাদের কষ্টের জীবন চিত্র। এসব মানুষ জাতীয় রাজনীতিতে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি, অকার্যকর সংসদ কিংবা প্রতিবেশীদের সঙ্গে চুক্তির বিষয় নিয়ে ভাবে না। তবে নিত্যদিনের খাদ্যপণ্য সংগ্রহে অনিশ্চয়তায় বেশ উদ্বিগ্ন তারা। আর সংবিধান থেকে ‘আল্লাহ’র নাম মুছে ফেলা এবং নারীনীতির খসড়ায় সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার নিয়ে মুসলিম আইন বাতিলে বিক্ষুব্ধ ধর্মভীরু মুসলমানরা।
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট থানার শংকরপুর গ্রামের অধিবাসী নূর ইসলাম। পেশায় কৃষক। কেমন আছেন? জানতে চাইলে বলেন, ‘এক কথায় ভাল নাই। ঘরে চাল নাই, যা ছিল সার কিনতে বেচে দিছি। এখন খাওন নাই। বড় কষ্টে আছি।’ তিনি জানান, পাঁচ বিঘা ধানের জমিতে সাধারণত তিন বস্তা ইউরিয়া সার ব্যবহার করি। এতে ১ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হয়। এবার সারের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়ায় দুই বস্তা সার দিয়েছি। এতেই খরচ পড়ছে ২ হাজার
২০০ টাকা। আর কম সারে ফলনও কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। নূর ইসলাম বলেন, ‘সব মিলিয়ে খুবই কষ্টে জীবন কাটছে। বাজারে যেন আগুন লেগেছে। শখের খাবার দূরে থাক, দু’বেলা খাওয়াই দুরূহ। এর মধ্যে সন্তানদের পড়াশোনা করানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।’
সারের মূল্য বৃদ্ধিতে শুধু ধানচাষী নয়, পাটচাষীরাও বিপাকে। বেশি দামে সার কেনায় উত্পাদন খরচ অনেক বেশি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষক আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘এবার উত্পাদন খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে দেড়গুণ। এসব হিসাব করলে ফসলের তেমন কিছু আমাদের হাতে থাকবে না।’
নওগাঁ সদর উপজেলার পিরোজপুরের কৃষক জাফর আলী বলেন, ‘সরকার সারের দাম বাড়ানোয় বিপদে পড়েছি। এখন ধানের দাম কি তারা বাড়াতে পারবে?’ তিনি জানান, তার গ্রামের সব কৃষকই দুর্ভোগে রয়েছেন। সরকার কম মূল্যে সার দেয়ার কথা বললেও দ্বিগুণ মূল্যে এখন সার কিনছেন তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি না। নইলে সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল দিতাম। দাম না কমাতে পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দাও।’ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কারও কাছে জানিয়েছেন কি-না জিজ্ঞেস করলে জাফর আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনাকে বললাম। আমরা হাটে গেলে চায়ের দোকানে আলোচনা করি। আওয়ামী লীগের লোকদেরও বলি, কিন্তু কাজ হবে কি, যারা আওয়ামী লীগের নেতা, তারাও বেশি দামে সার কিনেছেন। ওরাও রেগে আছেন।’
শিবগঞ্জ উপজেলা সদরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের একটি দোকানে। পারিবারিক ও ব্যবসায়িক জীবনের নানা অধ্যায় আলোচনায় তিনি সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, ‘সব কিছুর দাম কমানো, রাস্তাঘাট করা ও সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক নিরাপত্তা দিতে পারলে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে কোনো কাজ না করলে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকত না। সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম মুছে দেয়ায় গ্রামের মানুষ ক্ষুব্ধ। যারা ঠিকমত নামাজ পড়ে না, তারাও সরকারের সমালোচনা করছে।’ শতাধিক কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা অনুরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বগুড়ার শেরপুর সদর উপজেলার কৃষক মনির হোসেন জানান, এবার ইউরিয়া সারসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে প্রতি কেজি রোপা আমন উত্পাদন খরচ এক টাকা বাড়বে। এক বিঘা জমিতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার প্রায় ৩৫ কেজি। এতে বিঘায় অতিরিক্ত তিনশ’ টাকার সার দিতে হয়েছে। আর এক বিঘা জমিতে আমনের উত্পাদন হয় গড়ে ১৬-২০ মণ। এতে প্রতি মণ ধানের উত্পাদন খরচ বাড়বে কমপক্ষে ২০ টাকা। আর কেজিতে বাড়বে ৫০ পয়সা। এছাড়া দিনমজুর, তেলচালিত সেচ ও কয়েকবার কীটনাশক ব্যবহারসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধিতে কেজিপ্রতি আরও ৫০ পয়সা উত্পাদন ব্যয় বাড়বে। এতে আসন্ন মৌসুমে ধানের দামও বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
এসব বিষয়ে নওগাঁ জেলার কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক আব্বাস আলী বলেন, ‘ইউরিয়া সারের দাম বাড়ায় কৃষকরা কিছুটা অসুবিধায় পড়েছে এটা সত্য। তবে কৃষি সংশ্লিষ্ট একজন ব্যক্তি হিসেবে আমি মনে করি, এর একটি ইতিবাচক প্রভাবও আছে। কেননা গ্রামের কৃষকরা ইউরিয়া দিয়ে বীজ কালো বানানোর চেষ্টা করে। এটা খুব বেশি সুফল দেয় না। আবার সরকার কত আর ভর্তুকি দেবে?’ তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি না থাকায় ভ্যাপসা গরমে পোকামাকড় মারতে একাধিকবার কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে। তেলচালিত সেচ পাম্প দিয়ে ক্ষেত্রে পানি দিতে হচ্ছে। এতে উত্পাদন ব্যয় বাড়বে।’
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট থানার শংকরপুর গ্রামের অধিবাসী নূর ইসলাম। পেশায় কৃষক। কেমন আছেন? জানতে চাইলে বলেন, ‘এক কথায় ভাল নাই। ঘরে চাল নাই, যা ছিল সার কিনতে বেচে দিছি। এখন খাওন নাই। বড় কষ্টে আছি।’ তিনি জানান, পাঁচ বিঘা ধানের জমিতে সাধারণত তিন বস্তা ইউরিয়া সার ব্যবহার করি। এতে ১ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হয়। এবার সারের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়ায় দুই বস্তা সার দিয়েছি। এতেই খরচ পড়ছে ২ হাজার
২০০ টাকা। আর কম সারে ফলনও কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। নূর ইসলাম বলেন, ‘সব মিলিয়ে খুবই কষ্টে জীবন কাটছে। বাজারে যেন আগুন লেগেছে। শখের খাবার দূরে থাক, দু’বেলা খাওয়াই দুরূহ। এর মধ্যে সন্তানদের পড়াশোনা করানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।’
সারের মূল্য বৃদ্ধিতে শুধু ধানচাষী নয়, পাটচাষীরাও বিপাকে। বেশি দামে সার কেনায় উত্পাদন খরচ অনেক বেশি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষক আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘এবার উত্পাদন খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে দেড়গুণ। এসব হিসাব করলে ফসলের তেমন কিছু আমাদের হাতে থাকবে না।’
নওগাঁ সদর উপজেলার পিরোজপুরের কৃষক জাফর আলী বলেন, ‘সরকার সারের দাম বাড়ানোয় বিপদে পড়েছি। এখন ধানের দাম কি তারা বাড়াতে পারবে?’ তিনি জানান, তার গ্রামের সব কৃষকই দুর্ভোগে রয়েছেন। সরকার কম মূল্যে সার দেয়ার কথা বললেও দ্বিগুণ মূল্যে এখন সার কিনছেন তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি না। নইলে সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল দিতাম। দাম না কমাতে পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দাও।’ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কারও কাছে জানিয়েছেন কি-না জিজ্ঞেস করলে জাফর আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনাকে বললাম। আমরা হাটে গেলে চায়ের দোকানে আলোচনা করি। আওয়ামী লীগের লোকদেরও বলি, কিন্তু কাজ হবে কি, যারা আওয়ামী লীগের নেতা, তারাও বেশি দামে সার কিনেছেন। ওরাও রেগে আছেন।’
শিবগঞ্জ উপজেলা সদরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের একটি দোকানে। পারিবারিক ও ব্যবসায়িক জীবনের নানা অধ্যায় আলোচনায় তিনি সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, ‘সব কিছুর দাম কমানো, রাস্তাঘাট করা ও সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক নিরাপত্তা দিতে পারলে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে কোনো কাজ না করলে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকত না। সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম মুছে দেয়ায় গ্রামের মানুষ ক্ষুব্ধ। যারা ঠিকমত নামাজ পড়ে না, তারাও সরকারের সমালোচনা করছে।’ শতাধিক কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা অনুরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বগুড়ার শেরপুর সদর উপজেলার কৃষক মনির হোসেন জানান, এবার ইউরিয়া সারসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে প্রতি কেজি রোপা আমন উত্পাদন খরচ এক টাকা বাড়বে। এক বিঘা জমিতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার প্রায় ৩৫ কেজি। এতে বিঘায় অতিরিক্ত তিনশ’ টাকার সার দিতে হয়েছে। আর এক বিঘা জমিতে আমনের উত্পাদন হয় গড়ে ১৬-২০ মণ। এতে প্রতি মণ ধানের উত্পাদন খরচ বাড়বে কমপক্ষে ২০ টাকা। আর কেজিতে বাড়বে ৫০ পয়সা। এছাড়া দিনমজুর, তেলচালিত সেচ ও কয়েকবার কীটনাশক ব্যবহারসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধিতে কেজিপ্রতি আরও ৫০ পয়সা উত্পাদন ব্যয় বাড়বে। এতে আসন্ন মৌসুমে ধানের দামও বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
এসব বিষয়ে নওগাঁ জেলার কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক আব্বাস আলী বলেন, ‘ইউরিয়া সারের দাম বাড়ায় কৃষকরা কিছুটা অসুবিধায় পড়েছে এটা সত্য। তবে কৃষি সংশ্লিষ্ট একজন ব্যক্তি হিসেবে আমি মনে করি, এর একটি ইতিবাচক প্রভাবও আছে। কেননা গ্রামের কৃষকরা ইউরিয়া দিয়ে বীজ কালো বানানোর চেষ্টা করে। এটা খুব বেশি সুফল দেয় না। আবার সরকার কত আর ভর্তুকি দেবে?’ তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি না থাকায় ভ্যাপসা গরমে পোকামাকড় মারতে একাধিকবার কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে। তেলচালিত সেচ পাম্প দিয়ে ক্ষেত্রে পানি দিতে হচ্ছে। এতে উত্পাদন ব্যয় বাড়বে।’
No comments