ভোটের মাঠ দখলে নিচ্ছে ওসমান খলিফারা by আলাউদ্দিন আরিফ

স্থানীয় মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত ‘ওসমান খলিফা’রা এখন নারায়ণগঞ্জ দখলে নিচ্ছে। তারা কাজ করছে আগামী ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে। শামীম ওসমানের পক্ষে কাজ করার জন্য তাদের অনেকেই এখন কাউন্সিলর পদে প্রার্থী। পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক বহিরাগত দাগী সন্ত্রাসীও এখন নারায়ণগঞ্জে। তারা অপর দুই মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভী ও অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের ভোটের হিসাব এখন ওসমান পরিবারের পক্ষে ও বিপক্ষে।


ওসমান পরিবারের লোকজন জেতার জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছেন। তারা পারিবারিক মর্যাদার পাশাপাশি বিষয়টিকে দেখছেন আধিপত্য বিস্তার ও ভবিষ্যতে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে। অন্যদিকে এন্টি ওসমান গ্রুপ হিসেবে যারা পরিচিত তারা বলছেন, শামীম ওসমান নির্বাচনে জিতে গেলে নারায়ণগঞ্জ হবে ত্রাসের রাজত্ব। ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি।
স্থানীয় ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা পক্ষ নিয়ে কাজ করছে কীনা এ প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, একটি মহল তার বিরুদ্ধে মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের পরিবারের লোকজন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। এসব অবান্তর অভিযোগ তুলে নির্বাচনে ফায়েদা হাসিলের চেষ্টা করছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসিন্দারা বলেন, শামীম ওসমানের ভাই নাসিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের এমপি ও জাতীয় পার্টির সভাপতি মণ্ডলীর
সদস্য। তিনি বিগত ৩ বছরে এলাকার উন্নয়নে তেমন কোনো কাজ করেননি। নারায়ণগঞ্জ শহরের মূলকেন্দ্র চাষাঢ়া
থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কটির বেহাল দশা দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, নাসিম ওসমান একজন প্রভাবশালী এমপি। তিনি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে শহরের প্রধান সড়কটির এই বেহাল দশা হতো না। এলাকায় উন্নয়নমূলক কোনো কাজ না করলেও তার হাঁকডাক থেমে নেই। নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরি ওসমান ও শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান গ্রুপের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কাছেও এলাকার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকারি তোলারাম কলেজ রোডে তাদের বেশ কয়েকটি টর্চার সেল আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যেখানে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। বিশেষ করে অয়ন ওসমান গ্রুপ খুবই বেপরোয়া বলে স্থানীয় লোকজন দাবি করছেন। ’৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালে পর্যন্ত আজমেরি ছিল নারায়ণগঞ্জের স্বঘোষিত ‘যুবরাজ’। ওই সময় চাষাঢ়ায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, লুটপাট, নারী নির্যাতন, প্রতিপক্ষের লোকদের হাতের কব্জি কেটে নেয়াসহ হেন কোনো অপরাধ নেই যা তার বাহিনী করেনি। তার সঙ্গে এখন নতুন ‘যুবরাজ’ হিসেবে দেখা দিয়েছে অয়ন ওসমান। বর্তমান নির্বাচনে আজমেরি ওসমান ও অয়ন ওসমানের বন্ধু বান্ধবরাই নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ওসমান খলিফাদের ক্যাডার হিসেবে কাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও বলেন, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ র্যাব কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে জেলার শীর্ষ অপরাধী হিসেবে শামীম ওসমানের ছবি টানানো ছিল। আর ওই তালিকায় দ্বিতীয় নামটি ছিল আজমেরি ওসমানের। কিন্তু ২০০৯ সালে মহাজোট ক্ষমতায় আসার দিন থেকে তালিকায় আর তাদের ছবি দেখা যায়নি।
আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোল শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে। ইন্টারপোলের নিজস্ব ওয়েবসাইটে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ধরন দেয়া হয়েছে ‘প্রাণ নাশের হুমকি, অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার।’ অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট দেখানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশ থেকে।
ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে শামীম ওসমানের পারিবারিক নাম ‘ওসমান’ পুরোনাম এ কে এম শামীম, জন্ম তারিখ দেয়া হয়েছিল ১ জুলাই ১৯৭৬, জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশ, মুখের ভাষা বাংলা ও ইংরেজি, জাতীয়তা বাংলাদেশী বলা হয়েছে। তার শারীরিক বর্ণনায় বলা হয়েছে, উচ্চতা ১.৫৫ মিটার বা ৬১ ইঞ্চি, ওজন ৭৫ কেজি বা ১৬৫ পাউন্ড, চুল ও চোখের রঙ কালো। ৫ বছর আত্মগোপনে থেকে শামীম ওসমান ২০০৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর দেশে আসেন। এই সময় নারায়ণগঞ্জে তাকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়া হয় এবং বাতিল হয়ে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে টিকিট পান। ওয়ান ইলেভেনের পর আবার আত্মগোপন করে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর এলাকায় ফিরে আসেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ওয়েবসাইটে ছবিসহ শামীম ওসমানকে ধরিয়ে দেয়ার ঘোষণা ছিল। তাকে ধরতে পুলিশের আন্তজাতিক সংস্থা ইন্টারপোলে রেড নোটিশও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখন ৩ জন ওসির বিরুদ্ধেই অভিযোগ রয়েছে যে, তারা শামীম ওসমানের পক্ষে কাজ করছেন। এরই মধ্যে অপর দুই মেয়র প্রার্থী তিন থানার ওসিকে বদলি করার দাবি জানিয়েছেন। ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভি এক সাক্ষাত্কারে বলেন, জেলা প্রশাসক, কয়েকজন ইউএনও, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা, ফতুল্লা থানা, বন্দর থানার এই ৩ থানার ওসি ওসমান পরিবারের লোকজনের খুবই অনুগত। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তারা নাসিম ওসমান, শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের কথায় ওঠে বসে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নারায়ণগঞ্জের প্রেক্ষাপটে একই গ্রুপ কখনও নাসিম ওসমান ও শামীম ওসমানের হয়ে কাজ করছে। বিগত সময়ে ওয়ার্ড কমিটি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির জেলা উপজেলা কমিটিগুলোতে তাদের নেতা বানানো হয়েছে। পেশাজীবীদের মধ্যেও রয়েছে তাদের নেতৃত্ব। ওইসব ক্যাডারকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনের ফল নিজের পক্ষে নেয়ার কাজ করছেন শামীম ওসমান। ওসমান খলিফা হিসেবে পরিচিত ওই গ্রুপের সদস্যদের নেটওয়ার্ক খুবই শক্তিশালী। তারা কমান্ডো স্টাইলে সিঙ্গেল কমান্ডে মুহূর্তের মধ্যেই পুরো এলাকায় যেকোনো তথ্য ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পাওয়ার পর তারা এলাকায় এরই মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে যে, যেকোনো মূল্যে মহাজোট সরকার নাসিক নির্বাচনে শামীম ওসমানকে বিজয়ী করবে। বিষয়টি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, শামীম ওসমানের পক্ষে কাজ করছেন নারায়ণগঞ্জের আন্ডার ওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত শাহ নিজাম। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শাহ নিজাম চট্টগ্রাম থেকে একটি একে-৫৬ রাইফেল সংগ্রহ করেন। এরপর থেকে সে নারায়ণগঞ্জে ত্রাস হিসেবে পরিচিত। ’৯৮ সালের দিকে জালকুড়ি এলাকায় ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন গ্রুপের সঙ্গে একে-৫৬ অস্ত্রটির পরীক্ষামূলক মহড়া দেয়। ওই সময়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিদেশি সিনেমার স্টাইলে একে-৫৬ দিয়ে গুলি করে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। সেই থেকে শাহ নিজামের উত্থান। এখন সে কাজ করছে শামীম ওসমানের খলিফা হিসেবে।
শামীম ওসমানের আরেক খলিফা ক্যাঙ্গারু পারভেজ। অভিযোগ রয়েছে র্যাব ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ক্যাঙ্গারু পারভেজ মহজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়, দোকান দখল, গার্মেন্ট দখলসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে ক্যাঙ্গারু পারভেজ ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। যুবলীগ নেতা পরিচয়দানকারী এই ক্যাডারের নাম জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া পারভেজ ওরফে ক্যাঙ্গারু পারভেজ। ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এক এমপির অন্যতম সেনাপতি হিসেবে তার বিচরণ। নারায়ণগঞ্জে তার ভয়ে কেউ টু-শব্দটি করার সাহস করে না। আর এতে করে ক্যাঙ্গারু পারভেজ শহরবাসীর কাছে মূর্তিমান এক আতঙ্ক। সম্প্রতি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সরকারদলীয় দুই এমপি ক্যাঙ্গারু পারভেজের অপরাধচিত্র তুলে ধরে তার গ্রেফতার দাবি করেছে। পারভেজ বাহিনীর অন্য ক্যাডারদের মধ্যে রয়েছে খানপুর ব্যাংক কলোনির বাদল ও শ্যামল, চাষাঢ়ার জাকির, তল্লার বিপ্লব ও জামান, জামতলার কবির, মাসদাইরের রেজওয়ান, খানপুরের আক্তার ও গোলাম হোসেন এবং অসি, রিয়াদসহ আরও বেশ কয়েকজন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বারের সভাপতি আনিসুর রহমান দীপুকেও অনেকে মনে করেন শামীম ওসমানের খলিফা হিসেবে। তিনি ওসমান পরিবারের পক্ষে মামলার দেখাশোনা, আসামি ছাড়ানো আর মামলায় ফাঁসানোর কাজ বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।
নাসিক এলাকার বাইরের হলেও শামীম ওসমানের ক্যাডার হিসেবে কাজ করছে ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল, আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদল ও বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী। তারা এখন এলাকা দাবড়ে বেড়াচ্ছে শামীম ওসমানকে বিজয়ী করার জন্য।
শামীম ওসমানের আরেক খলিফা ইব্রাহিম চেঙ্গিস। পরিবহন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকারী চেঙ্গিসের সহযোগী মোক্তার হোসেন, শহীদ উল্লাহ ও বোটকা লিটন। তাদের কর্মকাণ্ডও এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করেছে। বন্দর থানা এলাকায় ওসমান খলিফা হিসেবে পরিচিত বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু। তার বিরুদ্ধে দখলসহ বহু অভিযোগ।
সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় শামীম ওসমানের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ২০ মামলার আসামি নূর হোসেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৯ অক্টোবর পুলিশ সুপারকে (এসপি) চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত নূর হোসেন এখন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে বর্তমানে দুর্নীতির তিনটি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা আছে। আগে খুন, মারামারি, চুরি, ভাংচুর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ১০টি মামলা ছিল।
৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ওসমান খলিফা মতিউর রহমান। এলাকায় তিনি ‘সুন্দর মতিন’ নামে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একটি, অপহরণের একটি এবং হত্যার অভিযোগে একটি মামলা আছে। জামিন নিয়ে তিনি নির্বাচন করছেন। তিনি ছয়টি হত্যা মামলার আসামিও ছিলেন। এ ছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে তিনটি এবং চুরি ও মারামারির অভিযোগে ১০টিসহ সব মিলিয়ে ২১ মামলার আসামি তিনি।
সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় শামীম ওসমানের আরেক খলিফা নজরুল ইসলাম ওরফে গোঁয়ার নজরুল। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৫টি মামলা আছে। এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মানুষকে হয়রানি, নির্যাতন, অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও র্যাব-১০ তাকে আটক করে। শামীম ওসমান নিজেই তদবির করে তাকে ছাড়িয়ে নেন বলে জানা গেছে। গোঁয়ার নজরুল কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করেছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছেন নজরুল।
শামীম ওসমানের আরেক খলিফা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আলী হোসেন আলা। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে সরকারি কাজে বাধাদান ও বিস্ফোরক আইনসহ ৪টি মামলা রয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, মূলত শামীম ওসমানের পক্ষে এজেন্ট দেয়াসহ তাকে জেতানোর জন্যই আলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে। শামীম ওসমানের আরেক প্রভাবশালী ক্যাডার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নাসির উদ্দিন ওরফে টুন্ডা নাসির। ককটেল বানাতে গিয়ে তার হাতের আঙুল উড়ে যায়। এরপর থেকে এলাকায় পরিচিত হয় টুন্ডা নাসির হিসেবে। তার বিরুদ্ধে ভাংচুর, চুরি ও জখমের অভিযোগে দুটি, ডাকাতির একটি এবং বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা রয়েছে।
শামীম ওসমানের খলিফা ও ক্যাডার হিসেবে পরিচিতদের অনেকেই নির্বাচনে প্রভাব রাখতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের কয়েকজন হলেন, জাল টাকাসহ গ্রেফতার হওয়া শিমরাইলের আইয়ুব আলী মুন্সী, হত্যা মামলার আসামি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক মেম্বার ও আসাদুজ্জামান আসাদ, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদ প্রার্থী আলাউদ্দিন মেম্বার, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম সারোয়ারের সহযোগী ওমর খৈয়াম ওরফে চঞ্চল, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদপ্রার্থী মনিরুজ্জামান শাহীন ওরফে ‘বন্দুক শাহীন’, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বন্দর থানার পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী শাহেন শাহ, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও নাসিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ আজিজুল হক, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিরর পদপ্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমদ, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ আসাদ, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াহিদুজ্জামান সেলিমসহ অনেকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে এসব ক্যাডার নিজে জয়ী হওয়ার চাইতে শামীম ওসমানকে জেতানোর পক্ষেই বেশি ভূমিকা রাখছেন।
ওসমান পরিবার ও তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, শামীম ওসমান হচ্ছে সুখের পায়রা। দল ক্ষমতায় না থাকলে দেশ ছেড়ে পালায়। দল ক্ষমতায় এলে তারাই আবার হালুয়া রুটি খায়। তাদের কাছে দল কোনো বিষয় নয়। পরিবারই বড় কথা। দল ক্ষমতায় থাকলে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে লাঞ্ছিত করা, নির্যাতন করা ওসমান পরিবারের চরিত্র। তিনি আরও বলেন, শামীম ওসমানকে মনোনয়ন দেয়ায় দল নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ মানুষ এখন আর পেশিশক্তি চায় না। মানুষ চায় উন্নয়ন। বিগত দিনে এই পরিবারের কারণে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

No comments

Powered by Blogger.