সন্ত্রাসীর পক্ষে 'ভাই'য়ের সুপারিশ!-গৌরনদী থানায় আলামিনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে by রফিকুল ইসলাম,

প্রিয়জনীয় (প্রয়োজনীয়) ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করা গেল_আলহাজ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, সাবেক চিফ হুইপ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ।' গৌরনদীর থানার তালিকাভুক্ত এক সন্ত্রাসীর পক্ষে এভাবেই লিখিত সুপারিশ করেন দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে 'ভাই' বলে পরিচিত আবুল হাসানাত। সাকুরা বাস কাউন্টারের জন্য পরিবহনের প্রধান বরাবরে পাঠানো আলামিন হাওলাদারের আবেদনে তিনি এ সুপারিশ করেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কসবা গ্রামের হোসেন আলী হাওলাদারের ছেলে আলামিন হাওলাদার। সে গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক এবং পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী।


পুলিশের কাছে ট্যারা আলামিন হিসেবেই সে পরিচিত। গৌরনদী উপজেলা শহরের লোকজন, এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে ট্যারা আলামিন নামে চেনেন। ২০০১ থেকে মহাজোট ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত সে আত্মগোপনে ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের বিশেষ নজরদারিতে রাখতে গৌরনদী পুলিশ অপরাধীদের তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকার ১৩ নম্বরে আলামিন হাওলাদারের নাম রয়েছে। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা থাকার কথাও এই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন। গৌরনদী থানায় আলামিনের বিরুদ্ধে যে চারটি মামলা রয়েছে ও একাধিক জিডি থাকার বিষয়টি ওই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ওই এলাকায় সরকারদলীয় ক্যাডাররা একাধিক বাহিনী গঠন করে। তাদেরই একটি বাহিনীর দায়িত্বে ছিল আলামিন। জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, যাদের কারণে ২০০১ সালের নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হয়েছে, তারাই এখন ভাইকে ঘিরে থাকে। ফলে ত্যাগী নেতা-কর্মীরা তাঁর পাশেই যেতে পারেন না।
এ প্রসঙ্গে মো. আলামিন হাওলাদার কালের কণ্ঠকে বলে, 'ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আমার বিরুদ্ধে চার থেকে পাঁচটি মামলা হয়েছিল। বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলাটি থেকে আমি সম্প্রতি মুক্ত হয়েছি।' বর্তমানে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও বিচারাধীন নেই বলে দাবি করে আলমিন। তবে অপরাধীর তালিকায় নাম থাকার ব্যাপারে বলে, 'একসময় দলের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হয়েছি। কিন্তু বর্তমানে সে তালিকায় নাম থাকার কথা নয়।'
স্বাভাবিক জীবন যাপনের উদাহরণ টেনে আলামিন আরো বলে, 'মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমার বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি। তবে জোট সরকারের সময় আমার অনুপস্থিতিতে একাধিক মামলা হয়েছে। সাকুরা পরিবহনের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া কাউন্টারটি পরিচালনার জন্য ভাইয়ের সুপারিশসহ গত বছরের ৮ জুলাই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাবরে আবেদন করি।' তার দাবি, কাউন্টারের সাবেক পরিচালক ও উপজেলা যুবদলের সহসম্পাদক খোন্দকার মনিরুজ্জামান এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
অপপ্রচারের অভিযোগ অস্বীকার করে খোন্দকার মনিরুজ্জামান মনির বলেন, '১৯৯৪ সাল থেকে আমি কাউন্টারটি পরিচালনা করে আসছি। এটিই ছিল আমার উপার্জনের একমাত্র পথ। হঠাৎ করে বিনা কারণে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছি।' এ প্রসঙ্গে সাকুরা ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, 'বিষয়টি অমানবিক হলেও ভাইয়ের সুপারিশ ফেলে দেওয়া যায় না।' সুপারিশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আফতাব আহম্মেদ বলেন, 'ছেলেটি দলীয় কর্মী, তাই আবেদনে ভাই সুপারিশ করেছেন।'
তবে আলামিনের পক্ষে সাফাই গেয়ে গৌরনদী থানার ওসি নুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আলামিন খুবই ভালো ছেলে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের নেতা-কর্মীদের হামলার শিকার হয়ে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিল। ওই সময় পুলিশ সন্ত্রাসীদের যে তালিকা করেছে, সেখানে তার নাম ছিল।'
সাকুরা বাস কাউন্টারের জন্য আলামিনের আবেদনে সুপারিশের ব্যাপারে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

No comments

Powered by Blogger.