চীন ও জাপানের আগ্রহে ঘুরপাক খাচ্ছে পাঁচ প্রকল্প by পার্থ সারথি দাস

বিশ্বব্যাংকের কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পে শিগগিরই অর্থায়ন হচ্ছে না। তবে এর বাইরে আরো সেতু নির্মাণ ও সংস্কারের আটটি প্রকল্প নিয়ে সরকার অর্থ জোগাড়ে তৎপর হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে পাঁচটিই নতুন সেতু নির্মাণের প্রকল্প। পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় যাতায়াত সুবিধা বাড়াতে পটুয়াখালীতে পায়রা নদের ওপর লেবুখালী সেতু নির্মাণে কুয়েত তহবিল থেকে ৩৬০ কোটি টাকার ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি মিলেছে। দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও আড়িয়ালখাঁ নদের ওপর কাজীরটেক সেতু নির্মাণে চীন সরকার ঋণ দিতে আগ্রহী।


তবে চীন ও জাপানের আগ্রহের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে পাঁচটি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। পটুয়াখালীতে পায়রা নদের ওপর বহুদিনের প্রত্যাশিত লেবুখালী সেতু নির্মাণে কুয়েত তহবিল (কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট) থেকে ৩৬০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়া যাবে। ১ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ২৪ বছরে এ ঋণ শোধ করতে হবে। তবে গ্রেস পিরিয়ড থাকবে চার বছর। চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের প্রথম দিকে এ ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঋণচুক্তির আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতার জন্য কুয়েত তহবিল কর্তৃপক্ষের তিন সদস্যের একটি মিশন আজ ২২ অক্টোবর ৯ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছে। তারা প্রকল্পের ব্যয় প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখবে। সফরকালে প্রতিনিধিরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবেন।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খান এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় দেখতে কুয়েত তহবিলের মিশনটি আসছে। আমরা আশা করছি, আগামী বছরের প্রথম দিকে এই ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।'
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটার সঙ্গে যাতায়াত সুবিধা বাড়াতে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর লেবুখালী সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ইতিমধ্যে সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। প্রায় তিন মাস আগে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন কুয়েত সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবিত সেতুটি হবে এক হাজার ৪৫০ মিটার দীর্ঘ। প্রস্থ হবে ৫০ মিটার। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কুয়েত তহবিল থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ৩৬০ কোটি টাকা। বাকি অর্থের জোগান দেবে সরকার।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, কুয়েত সরকারের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সাত-আট মাস আগে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে।
চীন-জাপানের আগ্রহে ঘুরছে পাঁচ প্রকল্প : যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ সামলানো ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে সরকার নতুন ছয়টি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি সেতু নির্মাণ ও বিদ্যমান তিনটি সেতু সংস্কার করা হবে। নির্মাণের জন্য পরিকল্পিত তিনটি সেতু হচ্ছে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু, দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু ও দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু। পাশাপাশি বিদ্যমান কাঁচপুর সেতু, মেঘনা সেতুু ও মেঘনা-গোমতী সেতু সংস্কার করা হবে। এসব সেতু নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্পের মধ্যে মেঘনা সেতু সংস্কার ছাড়া বাকি পাঁচটি প্রকল্পেই বৈদেশিক ঋণ সহায়তার চেষ্টা চলছে। এখনো চীন ও জাপান সরকারের আগ্রহের মধ্যেই পাঁচটি প্রকল্প ঘুরছে।
দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণে চীনের কাছে সরকার ২০০৯ সালে ৬৪০ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছিল। জানা গেছে, গত আগস্ট মাস থেকে তারা এই প্রকল্পের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া জাপান সরকারের কাছে দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু, দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু নির্মাণ এবং বিদ্যমান কাঁচপুর সেতু ও মেঘনা-গোমতী সেতু সংস্কারের জন্য আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছিল সরকার। গত ৮ সেপ্টেম্বর সড়ক বিভাগে এক সভায় এসব প্রকল্প নিয়ে আলোচনায় জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) পক্ষ থেকে আগ্রহের বিষয়টি জানা যায়। তবে মেঘনা সেতু সংস্কারে চীনের আগ্রহের কারণে এসব প্রকল্পের ব্যাপারে জাইকার আগ্রহ কমে গেছে বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, এক হাজার ২৯৪ মিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর নির্মাণকাজ ২০১৫ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার মধ্যে নির্মাণ করা হবে। এটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ২৭ কোটি টাকা।
এ ছাড়া আড়িয়ালখাঁ নদের ওপর কাজীর টেক সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে চীন সরকারের পক্ষ থেকে আগ্রহের বিষয়টি বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে মেঘনা সেতু সংস্কার : ১৯৯১ সালে জাপান সরকারের অর্থায়নে নির্মিত মেঘনা সেতু আট বছর ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির আয়ু ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। কিন্তু ১৪ বছর না যেতেই ২০০৪ সাল থেকে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে থাকে। এ অবস্থায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয় দ্রুত সংস্কারের জন্য ১৫০ কোটি টাকা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে। অনুমোদনও মিলেছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কুদ্দুস বলেন, দরপত্র চূড়ান্ত করে আগামী ডিসেম্বরেই মেঘনা সেতুর সংস্কারকাজ শুরু হবে। কাজ শেষ করতে কমপক্ষে ৯ মাস সময় লাগবে।

No comments

Powered by Blogger.