উদীচী সম্মেলন-'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র না'

বহমান বাংলার বৈচিত্র্যময় সুর-সংগীত আর নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন নিয়ে শুরু হলো উদীচীর দ্বিবার্ষিক সাংস্কৃতিক আয়োজন জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মিলন। উদীচীর চতুর্থবারের আয়োজন এবার ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে রাজবাড়ীর পাংশায় সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী অপশক্তির হাতে লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত বাউলদের উপস্থিতিতে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ বাউলরাই বেলুন উড়িয়ে, ঢাক-ঢোল বাজিয়ে উদ্বোধন করলেন তিন দিনের সাংস্কৃতিক সম্মেলন।বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল আলম জানিয়েছেন, সম্মেলনে সারা দেশের উদীচীর ৫৭টি শাখা সংগঠন তাদের পরিবেশনা উপস্থাপন করবে। সম্মেলনের এবারের স্লোগান 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র না'।


গতকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদীচীর পক্ষ থেকে বাউলদের ফুল ও ক্রেস্ট উপহার দিয়ে সম্মানিত করা হয়। উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু। বক্তব্য দেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, লোকশিল্পী
সাইদুর রহমান বয়াতি, সহসাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার ও বাউল সংগঠক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। স্বাগত বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক জামসেদ আনোয়ার তপন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অমিত রঞ্জন দে।
পাংশার বাউলদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ আলী ফকির, মিনু ফকির, মালেকা ফকির, লাল চাঁদ ফকির, হিচাই ফকির ও আকবর ফকির।
উদ্বোধনী দিনে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শুরু হয় উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের গীতিনাট্য 'সবার উপরে মানুষ সত্য' দিয়ে। এ ছাড়া ছিল ময়মনসিংহ, খুলনা, টাঙ্গাইল, পিরোজপুর, বরগুনা, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, সিলেট, রাজবাড়ী, ঠাকুরগাঁও প্রভৃতি জেলা শাখার শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে 'আমাদের সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন : বর্তমান অবস্থা' শীর্ষক সেমিনার। আগামীকাল শেষ দিনে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বিপুল ভট্টাচার্যকে 'উদীচী পদক' দেওয়া হবে। প্রথমবারের মতো এবার এ পদক যুক্ত হচ্ছে। এবারের সম্মেলন সদ্য প্রয়াত শিল্পী অজিত রায় ও মৃদুলকান্তি চক্রবর্তীর নামে উৎসর্গ করা হয়েছে।
প্রতিদিনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্যে থাকছে যাত্রাপালা, পথনাটক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক গীতি-আলেখ্য, গণসংগীত, লোকনৃত্য, গম্ভীরা, বাউল, জারি-সারি-ভাটিয়ালি-ভাওয়াইয়া, মুর্শিদী, মারফতি, ঘেটুগান, অষ্টক গান, বিয়ের গান, নৌকাবাইচের গান, যন্ত্রসংগীত পরিবেশনাসহ বাঙালি সংস্কৃতির পরিচয়বাহী পল্লী ও লোকগীতি প্রভৃতি। বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় পরিবেশনা।

No comments

Powered by Blogger.