লিবিয়ায় গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ

লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যু-পরবর্তী লিবিয়ায় নতুন নেতা নির্বাচন, ঐকমত্যের সরকার গঠন, সংবিধান প্রণয়ন এবং সর্বোপরি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা অন্তর্বর্তী কাউন্সিলের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ৪২ বছরের স্বৈরশাসনের অবসানের পর দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার শঙ্কা দানা বাঁধতে শুরু করেছে বর্তমান নেতৃবৃন্দের মনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বনি ওয়ালিদ এবং সিরতের যুদ্ধ প্রমাণ করে, লিবিয়ায় উপজাতীয় এবং আঞ্চলিক বিভেদ রয়েছে। এনটিসির মধ্যেও এ নিয়ে মতাদর্শগত পার্থক্য বহুবার সামনে এসেছে।


এনটিসির সেনাপ্রধান জেনারেল ইউনুসের রহস্যজনক নিহত হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
গাদ্দাফি নিহত হওয়ার পর লিবিয়ার জাতীয় অন্তর্বর্তী কাউন্সিল (এনটিসি) আজ শনিবার সরকারিভাবে লিবীয় বিপ্লবের সমাপ্তি ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৪২ বছর লিবিয়ার শাসন ক্ষমতায় ছিলেন স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি। তার নিহতের খবর প্রচারিত হওয়ার পর থেকে লিবিয়াজুড়ে চলছে উল্লাস। আকাশে গুলি ছুড়ে, গাড়ির হর্ন বা ড্রাম বাজিয়ে চলছে বিজয় ও আনন্দ উল্লাস।
লিবিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল বলেন, লিবীয়দের সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন এবং দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, 'একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ গঠনের লক্ষ্যে আমাদের এক নতুন লিবিয়া গঠনের জন্য কাজ করতে হবে। সবকিছুই নতুন করে গড়তে হবে। নতুন অর্থনীতি, নতুন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যনীতি পুনর্গঠন করতে হবে। আমরা লিবীয়রা জানি, আমাদের সামনে এখন অনেক বাধা, যা আমাদের অতিক্রম করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে খাদ্য ও জননিরাপত্তা।'
আন্তর্জাতিক এবং লিবিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বিদ্রোহী নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা, নিচু স্তরের দুষ্কৃতকারী এবং অপরাধী দলগুলোকে নিরস্ত্র করা না গেলে বিশৃঙ্খলা চলতে থাকবে। কেননা লিবিয়ায় সর্বত্র এখন অস্ত্রের ছড়াছড়ি। সবার কাছে অস্ত্র এখন সহজলভ্য বস্তু। তাই এনটিসির সামনে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়বে। গাদ্দাফি নিহত হওয়ার পর জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, লিবিয়া ও তার জনগণের সামনে আগামীতে চলার পথ হবে কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং।
এনটিসির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সিরতের পতনের পর তারা নতুন নির্বাচন এবং সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন। ব্রিটেন ও ফ্রান্স গতকাল বলেছে, গাদ্দাফির মৃত্যুর পর লিবীয়দের সামনে এক বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি জাতীয় অন্তর্বর্তী কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দের প্রতি দ্বিধা না করে দ্রুত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। সারকোজি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য নেতৃবৃন্দ লিবীয়দের 'ঐক্য' এবং 'সংহতি'র পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করতে বলেছেন। এনটিসি নেতৃবৃন্দ ত্রিপোলিতে বলেছেন, বিজয়ের আনন্দ উল্লাস থেকে সশস্ত্র যোদ্ধা ও সাধারণ লিবীয়দের গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। এএফপি ও সিএনএন।

No comments

Powered by Blogger.