আষাঢ় শেষ হচ্ছে অথচ বৃষ্টি নেই by নিখিল মানখিন
বিদায়ের পথে আষাঢ়। দেশে নেই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত। দুর্বল হয়ে পড়েছে মৌসুমী বায়ু। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তাঁরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ুর দুর্বল অবস্থানের কারণেই এমনটি হচ্ছে। পাশাপাশি সারাদেশের ওপরও মৌসুমী বায়ু খুব সক্রিয় হতে পারছে না।
বঙ্গোপসাগর থেকে প্রযোজনীয় জলীয়বাষ্প সরবরাহ হচ্ছে না। আকাশে মেঘের খুব বেশি আনাগোনাও নেই। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় না থাকায় জোয়ার ভাটার সময়ও পর্যাপ্ত পানির খেলা দেখা যাচ্ছে না। দেশে প্রবেশ করার কয়েকদিন প্রবল থাকার পরই মৌসুমী বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমী লঘুচাপটি পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমূদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে।
জুনের প্রথম দিকে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ফলে গত জুনে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ৩.৪ ভাগ বেশি বৃষ্টি হয়। আষাঢ় মাসের আগমনেও সক্রিয় হয়ে ওঠে মৌসুমী বায়ু। বেশ কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতও হয়। ওই সময় বৃষ্টির পানি ও উজানের পানির কারণে দেশে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন দেশের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কিন্তু তা দিয়ে আষাঢ়ের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠছে না। প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাতের তুলনায় তা অনেক কম। গত দশ বছরে সারাদেশের জুলাই মাসের মোট বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেও এ বছর জুলাইয়ে এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হয়নি তা ধরা পড়ে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০১ সালে ১৪ হাজার ৫০৯ মিলিমিটার, ২০০২ সালে ২১ হাজার ৩০২ মিমি, ২০০৩ সালে ১১ হাজার ৩৪৬ মিমি, ২০০৪ সালে ১৯ হাজার ১৬৬ মিমি, ২০০৫ সালে ১৭ হাজার ৮৩২ মিমি, ২০০৬ সালে ১৪ হাজার ৭৫৪ মিমি, ২০০৭ সালে ২৩ হাজার ৪১৫ মিমি, ২০০৮ সালে ২১ হাজার ৮৯৩ মিমি, ২০০৯ সালে ১৯ হাজার ৭৭৯ মিমি ও ২০১০ সালে ১১ হাজার ৪৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর ২০১২ সালের জুলাই মাসেও প্রায় ১৩ হাজার মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা রয়েছে। জুলাইয়ের তিন ভাগের একভাগের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ২শ’ থেকে ৩শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর এই পরিমাণ বৃষ্টিপাত দিয়ে প্রত্যাশিত ১৩ হাজার বৃষ্টিপাত পূরণ করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন আবহাওয়াবিদরা। অথচ চলতি মাসের (জুলাই) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তর, উত্তর-মধ্য এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে এক থেকে দু’টি মৌসুমী নিম্নচাপ। চলতি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকা বিভাগে ৩৭৯ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৭২০ মিমি, সিলেটে ৫৭৯ মিমি, রাজশাহীতে ৩৫৪ মিমি, রংপুরে ৪১৬ মিমি, খুলনায় ৩৪১ মিমি ও বরিশালে ৫১৭ মিলিমিটার থাকতে পারে। আর বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক দিন হিসাব করলেও কম বৃষ্টিপাত হওয়ার চিত্র ধরা পড়ে। চলতি মাসে ঢাকা বিভাগে ১৭ দিন, চট্টগ্রামে ২০ দিন, সিলেটে ২১ দিন, রাজশাহীতে ১৬ দিন, রংপুরে ১৭ দিন, খুলনায় ১৮ দিন ও বরিশালে ২১ দিন স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। অথচ প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। এভাবে বুধবারও দেখা মেলেনি পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের। এ দিন ময়মনসিংহে ২ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৫ মিমি, কুমিল্লায় ২৪ মিমি, মাইজদীকোর্টে ১৪ মিমি, ফেনীতে ৫ মিমি, হাতিয়ায় ৪ মিমি, কক্সবাজার ৪৩ মিমি, কুতুবদিয়ায় ১৫ মিমি, সিলেটে ৭ মিমি, শ্রীমঙ্গলে ২ মিমি, রাজশাহীতে ১ মিমি, ঈশ্বরদীতে ২ মিমি, রংপুরে ১৯ মিমি, দিনাজপুরে ১৪ মিমি, সৈয়দপুরে ২১ মিমি, খুলনায় ১ মিমি, সাতক্ষীরায় ৯ মিমি, চুয়াডাঙ্গায় ১ মিমি, পটুয়াখালীতে ২০ মিমি ও খেপুপাড়ায় ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
No comments