সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে হতাশ জেলা প্রশাসকরা-০ পুলিশ কথা শোনে না -০ সরকারের কাছে বলেও প্রতিকার মিলছে না -০ এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের খবরদারিতে বেসামাল মাঠ প্রশাসন -০ স্ব স্ব দায়িত্ব স্পষ্ট করার দাবি by তপন বিশ্বাস

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলা প্রশাসকরা। একের পর এক ক্ষমতা খর্ব করে জেলা প্রশাসনকে ঢাল তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সরদার বানানো হয়েছে। পুলিশ কথা শোনে না। সরকারের কাছে বলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।


এছাড়া একদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান, অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের খবরদারিতে বেসামাল হয়ে পড়েছে মাঠ প্রশাসন। তার ওপর পুলিশের তেমন কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। বরং কোথাও কোথাও পুলিশের হাতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মাঠ প্রশাসনে ত্রিমুখী সমস্যা নিরসনে সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের অভিযোগ তুলে ধরা হলেও তেমন কোন নিদের্শনা না দিয়ে বরং এসপিদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার নির্দেশে তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চার জেলা প্রশাসক জনকণ্ঠের কাছে তাদের এই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আসন্ন রামজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম কাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলমান এই ডিসি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসকরা বিভিন্ন সমস্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁরা মাঠ প্রশাসনে কাজের প্রতিবন্ধতকা তুলে ধরেন। এমনকি সম্প্রতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাঠ পর্যায়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বেড়ে গেছে। সরকারী কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবিও জানান জেলা প্রশাসকরা। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় তাঁরা বলেছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব স্পষ্ট করে দিতে হবে। দায়িত্ব স্পষ্ট না থাকায় তাঁরা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন। এমপিদের নির্দেশনা উপজেলা চেয়ারম্যানরা মানতে চান না। আবার উপজেলা চেয়ারম্যানদের সিদ্ধান্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা মানতে চান না। এতে কাজের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয়। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকদের অধীনে বিশেষ পুলিশ নিয়োগেরও দাবি জানান। একই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংক্ষিপ্ত বিচারিক ক্ষমতা প্রদান এবং আদালত অবমাননা আইন দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান। এ ছাড়া তাঁরা ভাল কাজের স্বীকৃতি, কৃষকদের বিনা সুদে ঋণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদকে আইনী কাঠামোতে আনা এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সব সরকারী প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানান। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কোন সহযোগিতা না পেয়ে রীতিমতো হতাশা প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসকরা।
প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে গোপালগঞ্জের ডিসি শেখ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব স্পষ্ট করে দিতে হবে। তাঁদের দায়িত্ব স্পষ্ট না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব হচ্ছে। ঘটছে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। দায়িত্ব না বুঝে অনেক ক্ষেত্রেই জনপ্রতিনিধিরা সরকারী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। এগুলো পালন না করলেই আক্রোশের শিকার হতে হচ্ছে সরকারী কর্মকর্তাদের। মৌলভীবাজারের ডিসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসকরা সাহস নিয়ে কাজ করতে পারছেন না। কথায় কথায় আদালত অবমাননার মামলা হচ্ছে। মনে হয়, আমরা অপরাধী। মনে ভয় কাজ করে। আমরা আর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে চাই না। সরকারী কাজের জন্য মামলা হলেও এসব মামলার দায়ভার সরকার নিতে চায় না। জেলা প্রশাসকদের ব্যক্তিগতভাবে এসব মামলা পরিচালনা করতে হচ্ছে। ফলে বড় ধরনের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে থেকে জেলা প্রশাসকসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তিনি দ্রুত আদালত অবমাননা আইন কার্যকর করে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাহসের সঙ্গে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক নুর উর রহমান বলেন, পুলিশের সীমিত জনবল দিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ দুরূহ হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসকদের কাছে কোন অভিযোগ এলে তাদের নিজস্ব ফোর্স না থাকায় অভিযোগগুলো তদন্ত করা যাচ্ছে না। পুলিশ কর্মকর্তাদের বললে তাঁরা তা আমলে নেন না বলেও তিনি অভিযোগ করেন। ফলে ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসকদের কাছে এসে কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পুলিশ আইনের ১৭ (১) ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের অধীনে বিশেষ পুলিশ বাহিনী প্রদানের দাবি জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়া একাধিক জেলা প্রশাসক আরও বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকদের কথা শুনছেন না; আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হলেও অধিকাংশ সময়ে পুলিশ কর্মকর্তারা অনুপস্থিত থাকছেন। অনেক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে তাঁদের তদারকি করার কেউ না থাকায় তাঁরা চলছেন ইচ্ছেমতো। একই সঙ্গে তাঁরা মোবাইল কোর্ট কার্যকরভাবে পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোবাইল কোর্ট আইন সংশোধনের দাবি জানান।
জিএম কাদের ॥ রোজা সামনে রেখে অতিরিক্ত মুনাফা করার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হলে ‘কঠোর’ ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের। একইসঙ্গে রোজায় বাজার তদারকির চলমান প্রক্রিয়া আরও জোরদার করতেও বলেছেন তিনি।
চলমান ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সঙ্গে বাণিজ্য সচিব ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াও বৈঠকে অংশ নেন।
মন্ত্রিপরিষদের সভাকক্ষে এ বৈঠক শেষে জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, কোন ব্যবসায়ী যৌক্তিক মুনাফার বাইরে মুনাফা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এ আইনের বিষয়ে ডিসেদের বিস্তারিত জানানো হয়েছে এবং মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাঁরা জেলা পর্যায়ে কমিটি করে এ আইন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবেন। এজন্য সরকার তাঁদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) শক্তিশালী করা হবে কিনাÑ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘টিসিবি শক্তিশালীই আছে। যে উদ্দেশ্যে টিসিবি গঠন করা হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে। তবে এ সঙ্কট দূর করে তাদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। ঈদের আগে মাঠপর্যায়ে ডিসিদের তদারকি কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডিসিরা এ কাজে সবসময়ই রয়েছেন। তবে তাঁদের তদারকি কার্যক্রম আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে।
বাজার তদারকি কার্যক্রমে জনবল সঙ্কট কাটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, মন্ত্রণালয় ও সরকারের লোক দিয়ে দৈনিক কয়টি বাজার তদারক করা যায়, তা আপনারা জানেন। তবে সরকারের চেষ্টা আছে, এটা বাড়ানো হবে। যাঁরা সামাজিক নেতৃত্ব দেন এবং ব্যবসায়ী সমাজের সমন্বয়ে এজন্য কমিটি গঠন করা হবে।
নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতাকে দায়ী করে ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) চেয়ারম্যান ড. মোঃ মজিবুর রহমান মঙ্গলবার এক মতবিনিময় সভায় বলেন, বাজারে তেল আর চিনি বাদে অন্যান্য পণ্যে লাভের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশ। এটা কোন গ্রহণযোগ্য বাজার ব্যবস্থাপনা হতে পারে না।
১৩ থেকে ১৪ টাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ২৫/২৬ টাকা দরে বিক্রির বিষয়টি নিয়েও তিনি ব্যবসায়ী নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একইভাবে প্রতিকেজি খেজুর আমদানি মূল্যের থেকে ৪০ টাকা বেশি দরে বিক্রি প্রসঙ্গে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান খুচরা ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের উদ্দেশে বলেন, খেজুরের এ্যাভারেজ ল্যান্ডেড কস্ট ৬০ টাকার বেশি নয়। তাহলে কেন এটা ১০০ টাকা হবে? চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ার কোন ‘যৌক্তিকতা নেই’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক ॥ জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের স্নায়ুযুদ্ধের কথা স্বীকার করলেন স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বুধবার বিকেলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের মতবিনিময় শেষে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্নায়ুযুদ্ধ আছে, তবে মতপার্থক্য নেই। জেলা প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিরা একযোগে কাজ করছেন। জাতীয় স্বার্থে তারা রেষারেষির উর্ধে উঠে কাজ করছেন। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন মিলিয়ে ৫ হাজার ২৭২ টি নির্বাচন করেছি। কিন্তু জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের কোন ধরনের সমন্বয়হীনতা বা প্রতিহিংসা কাজ করেনি। প্রতিটি নির্বাচনই সুন্দর, সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। প্রত্যেকেই সমানভাবে অংশ নিয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন মডেল হয়ে থাকবে। এ সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী। জেলা ও গ্রামের রাস্থাঘাটের বেহাল দশা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যে সমস্যাগুলো আছে, আমরা সেগুলো শীঘ্রই ঠিক করে ফেলব। আমরা সম্মেলনে ডিসিদের গ্রামের রাস্তাঘাট-হাটবাজারের সমস্যাগুলো জরুরী ভিত্তিতে ঠিক করার নির্দেশ দিয়েছি।
কৃষকরা যেন উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান সে লক্ষ্যে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। গ্রামের কৃষকরা এখন উৎপাদিত পণ্য সরাসরি শহরে এনেই বিক্রি করতে পারেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের যে বিষয় ছিল তা অনেকাংশেই কমে গেছে। আগামীতে আরও কমে আসবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাফল্য তুলে নানক বলেন, সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রামের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে।
কম্পিউটারে ভূমি রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ ॥ জেলা প্রশাসককের দায়িত্বে থাকা (মাহফেজখানা দপ্তরে থাকা) ভূমি রেকর্ডপত্র চলতি মাস থেকেই কম্পিউটারাইজ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করবে সরকার। বুধবার সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক-ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কার্যঅধিবেশন শেষে ভূমি মন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা এবং ভূমি সচিব মোখলেছুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ভূমি সচিব মোখলেছুর রহমান বলেন, সব রেকর্ডপত্র কম্পিউটারাইজড করা হবে এ মাস থেকেই। সঙ্গে সঙ্গে যেন জনগণ তাদের কপি পায় সে ব্যবস্থাও করা হবে। ভূমি সংক্রান্ত্র সাধারণ জ্ঞান পাঠ্যবইতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভূমি মন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা বলেন, ‘জণগণের কল্যাণে যা করার তা আমরা করবো। ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা, রেজিস্ট্রেশন ও জরিপ কর্মক্রম আলাদা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বে থাকায় সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আনা যায় কীনা তার চেষ্টা করা হবে।
ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা দ্রুত সমাধানে জনবল কাঠামো বাড়ানো হবে উল্লেখ করে ভূমিমন্ত্রী বলেন, এসিল্যান্ড, কানুনগো নিয়োগ করা হবে।
এলাকাবাসীর কল্যাণে জেলা প্রশাসকরা কাজ করবেন সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক জেলা প্রশাসক বলেন, জেলার ভূমির রেকর্ডপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জরুরী উদ্যোগ নেয়া এবং দ্রুত ভূমি ডিজিটাইজেশন করার সুপারিশ তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, জরুরী ভিত্তিতে নতুন করে কাগজপত্র তৈরি এবং দ্রুততম সময়ে ডিজিটাইজেশন করা প্রয়োজন।
ঢাকার জেলা প্রশাসক মহিবুল হক ভূমি সংক্রান্ত্র সাধারণ জ্ঞান থাকা সবার প্রয়োজন উল্লেখ করে পাঠ্যবইতে এ সংক্রান্ত বিষয় রাখার সুপারিশ করেন। জেলা প্রশাসকদের পক্ষে বলা হয়, সিলেট এলাকায় এসএ রেকর্ডের পর আর কোন রেকর্ড হয়নি। সব শেষে কিছুদিন আগে যে জরিপ হয়েছে তাতে সমস্যা আরও বেড়েছে। দীর্ঘকাল জরিপ না হওয়ায় ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন হয়েছে। অনেকে অন্যের জমি দখল করেছে। সে কারণেই ভূমি আধুনিক জরিপের কাজ করে পুরো ব্যবস্থাপনায় আধুনিক করা প্রয়োজন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ॥ যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) এবং নিবন্ধন ছাড়া ভবিষ্যতে কাউকে বিদেশে চাকরি নিয়ে যেতে দেয়া হবে না। এজন্য জেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিবন্ধন কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও শ্রমমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্ধারিত কার্যঅধিবেশনে তিনি ডিসিদের এসব নির্দেশনা দেন।
খন্দকার মোশাররফ সাংবাদিকদের বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছে। এ বছর এ পর্যন্ত বিদেশে কর্মী পাঠানোর যে গতি রয়েছে, তাতে এর সংখ্যা সাত লাখ পেরিয়ে যাবে। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের গতিকে আরও গতিশীল করবে।
দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু অব্যবস্থাপনা রয়েছে। নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ নিয়ে বিদেশে লোক পাঠানো হচ্ছে। কোন কোন জেলা থেকে লাখ লাখ কর্মী বিদেশে যাচ্ছে। আবার কোথাও হাজারও পেরোতে পারছে না। যেসব জেলায় বেশি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে বেশি লোক যাচ্ছে। এসব অব্যবস্থাপনা দূর করতে জেলা পর্যায়ে ডিসি কার্যালয়ের নিবন্ধন কার্যক্রমকে আরও জোরদার করতে এবং সুচারুভাবে চালিয়ে যেতে ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিবন্ধন কার্যক্রম ঠিক থাকলে জনশক্তি পাঠানোর বৈষম্যও কমে আসবে। অব্যবস্থাপনা দূর করতে ভবিষ্যতে নিবন্ধন ও এমআরপি ছাড়া কাউকে বিদেশে যেতে দেয়া হবে না।
মহিলা কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহিলারা গৃহপরিচারিকার কাজ নিয়ে বিদেশে যেতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। ডিসিরা দায়িত্ব নিয়ে মহিলা কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে সরকার বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। শ্রম আইন বাস্তবায়নে ডিসিদের তাগিদ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বর্তমানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলাসহ কথায় কথায় ধর্মঘটের মতো ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে শ্রম আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়নে ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে জনগণের অধিকারও সুরক্ষা হবে।
মিজারুল কায়েস ॥ পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস বলেন, উভয় দেশের ৩৮টি সীমান্ত জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং জেল ম্যাজিস্ট্রেটদের (ডিএম) প্রত্যেক বছরে দুইবার করে বৈঠকের কথা রয়েছে। কিন্তু এটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। অভিবাসনসহ বিরাজমান সমস্যার সমাধানে এসব জেলার শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক আবারও চালু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে পাসপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করার নির্দেশ দেয়া হয় ডিসিদের। যাতে কোনভাবেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে যেতে না পারে, সেজন্য ডিসিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যসহ ২৬টি দেশে ৫৮টি কনস্যুলার এ্যাসিস্টেন্ট টু ইস্যু এমআরপি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ওইসব দেশের রাষ্ট্রদূতদের ওইপদে এক মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে বলা হয়েছে। যাতে ওইসব দেশের বাঙালীরা দ্রুত এমআরপি পায়। সীমান্তবর্তী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সমস্যাগুলোও কেন্দ্রকে জানাতে বলা হয় ডিসিদের।
মতিয়া চৌধূরী ॥ ভূমি ও পানির সহজপ্রাপ্যতার ভিত্তিতে কৃষি স্থানান্তরে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে তার জন্য নির্ধারিত কার্যঅধিবেশন শেষে কৃষিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলে অনেক উচু জমি। পানির সমস্যা থাকার পরও সেখানে সব মৌসুমে ধানের চাষ হচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলে পর্যাপ্ত পানি থাকার পরও সেখানে সবসময় ধানের চাষ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এ অবস্থায় সহজে পানি পাওয়া যায় এমন এলাকায় ধান চাষে উৎসাহ দেয়া এবং উত্তরাঞ্চলের জমিতে বর্ষার মৌসুমে ধান চাষ ও অন্য সময় অন্য ফসল চাষকে উৎসাহিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি, ডিসিদের সঙ্গে বৈঠকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তাদের এসব সমস্যা আমাদের আগে থেকেই জানা রয়েছে। তাই আমরা আমাদের পদক্ষেপের কথা তাদের জানিয়েছি। বৈঠকে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষি উপকরণ বিতরণের ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এবং কৃষি গবেষণা বিভাগের মিলে কাজ করতে ডিসিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কোন সমস্যা হলে তা দ্রুত কেন্দ্রকে জানাতেও ডিসিদের বলা হয়েছে।
আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ॥ডিসি সম্মেলনে এ কার্যঅধিবেশনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসও উপস্থিত ছিলেন। এতে বার্ড ফ্লু ও এ্যানথ্রাক্সের মতো রোগের বিস্তার রোধ এবং সীমান্ত দিয়ে রোগাক্রান্ত পশু দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করতে ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.