স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন ॥ আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে আমরা কোন -অন্যায় করিনি-পদ্মা সেতু বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, কার খাতিরে তারা (বিশ্বব্যাংক) বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করল? যেখানে কোন অর্থই ছাড় দেয়া হয়নি, সেখানে দুর্নীতি হয় কীভাবে। যারা ভেবেছিল পদ্মা সেতুর দুর্নীতির কথা বলে সরকারের মুখে কালিমা লেপন করে জনবিচ্ছিন্ন করবে, তাদের ধারণা যে কত বড় ভুল ছিল তা প্রমাণিত হয়েছে।
অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে উল্টো দেশের মানুষ যেন সরকারের পক্ষে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতোই আবার জেগে উঠেছে। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে যে আমরা কোন অন্যায় করিনি। জনগণও এটা বুঝতে পেরেছে বলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ইনশাল্লাহ আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করবই।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে দশ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বাড়িয়েছে। সেখান থেকে এক বিলিয়ন ডলার খরচ করা কোন বিষয়ই নয়। এটিও একবারে নয়, বছরে বছরে খরচ করা হবে। কাজেই নিজেদের সম্পদেই আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব। যদি কোন দাতাগোষ্ঠী এখাতে ঋণ দিতে চায়, তখন আমরাই ঠিক করব ওই ঋণ নেব কী না। জানি তাদের (বিশ^ব্যাংক) অনেক শক্তি আছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তাই এ দেশের জনগণ অতীতেও কারও কাছে মাথানত করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ™ি^তীয় জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প™§া সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি আরও বলেন, যে অপরাধ বা অন্যায় আমরা করিনি, সে ব্যাপারে অপবাদ দেয়া হলে কোন অবস্থাতেই আমরা তা মেনে নেব না। প™§া সেতু নির্মাণ নিয়ে আমরা যে কোন অন্যায় করিনি সেটা দেশবাসী ভাল করেই জানে। কেননা অপরাধ করলে সেটা মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা যায় না। তাদের কাছে সব তথ্যই চলে যায়, কোন কিছুই গোপন থাকে না।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার দুই-তিন ঘণ্টা আগেই বিএনপি নেত্রী কালো কাঁচের গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে কেন গিয়েছিলেন? যিনি দুপুর ১২টার আগে ঘুম থেকে ওঠেন না, তিনি ওইদিন সকাল ৭টায় উঠে আত্মগোপনে গেলেন কেন? এরপর দেড় মাস কেন তিনি সেনানিবাসের বাসায় ফেরেননি? এর রহস্যও আস্তে আস্তে উদ্ঘাটিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ ও সেনা অফিসারদের হত্যার বিচার চলছে। এত নিয়মতান্ত্রিক বিচার এর আগে হয়নি। অথচ এ বিচার বন্ধের জন্য কারা সোচ্চার? কারা বিচার বন্ধ করতে আদালতে দরখাস্ত দিয়েছে? যে আইনজীবী এটা করেছে তার রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজলেই বেরিয়ে আসবে। আসলে খুনীদের বিচার নয়, খুনীদের মদদ দেয়াই হচ্ছে বিএনপির নীতি।
এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওছারের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথের পরিচালনায় সম্মেলনের উ™ে^াধনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ। শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন দফতর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ টুটুল।
‘উন্নয়ন ও অগ্রগতির রূপকার শেখ হাসিনার সরকার পুনর্বার দরকার’Ñ এ সেøাগান সামনে রেখে দীর্ঘ নয় বছর পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। দীর্ঘদিন পর এ সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশ থেকে আগত সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল অন্যরকম আমেজ। নেতাকর্মীদের পদচারণায় সম্মেলনস্থল ছিল মুখরিত। নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয় এই সম্মেলনকে ঘিরে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে নির্মাণ করা হয় সুদৃশ্য বিশাল মঞ্চ। সম্মেলন প্রাঙ্গণ ও আশপাশের সব সড়ককে ডিজিটাল ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি, রংবেরঙের বেলুন, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে অপরূপ সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। সকাল থেকে সারাদেশের হাজার হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করেন। অনেকেই ব্যান্ডের তালে তালে নেচেগেয়ে ও সেøাগানে সম্মেলন প্রাঙ্গণ মুখরিত করে রাখেন। একপর্যায়ে নেতাকর্মী, আমন্ত্রিত অতিথি ও মানুষের ভিড় সম্মেলনস্থল ছাপিয়ে সংলগ্ন সড়ক উপচে পড়ে।
জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের মূল পর্ব শুরু হয়। শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উ™ে^াধন করেন। এ সময় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওছার। ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি/ আহ্বায়করাও আলাদাভাবে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন।
সম্মেলনের শুরুতেই সংগঠনের সাংগঠনিক সঙ্গীত ছাড়াও দলীয় নৃত্যের তালে তালে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল ছিটিয়ে বরণ, সম্মেলনের থিম সং, দেশাত্মবোধক ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে রচিত গান পরিবেশন করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল, ক্রেস্ট, ব্যাজ ও উত্তরীয় উপহার দেয়া হয়। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি সংগঠনের ঢাকা জেলার নেতাদের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে সারাদেশের নেতাদের মধ্যে এ বই বিতরণের কর্মসূচীর সূচনা ঘটান প্রধানমন্ত্রী।
বিকেলে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক রিপোর্ট, কোষাধ্যক্ষের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন ও অনুমোদিত হয়। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছিল। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি ও জাতীয় পরিষদসহ সারাদেশের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা ও ৫৭৮টি সাংগঠনিক উপজেলা থেকে ২ হাজারেরও বেশি কাউন্সিলর-ডেলিগেটসসহ ৫ সহস্রাধিক নেতাকর্মী সম্মেলনে যোগ দেন।
১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠা ঘটানোর পর টানা ৯ বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে এটি পরিচালিত হয়েছে। ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই সংগঠনের প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও এবার প্রায় নয় বছর পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। আর এ কারণেই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল অন্যরকম আমেজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে আরও বলেন, সাহস করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। আমরা যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছি। আমরা গর্বিত জাতি। তাই আমরা কারও কাছে মাথানত করতে শিখিনি। আমরা নিজেদের টাকায়ই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারব। কেননা আমরা দুর্নীতি করতে ও অর্থসম্পদ বানাতে আসিনি। তবে কোন দাতা সংস্থা কিংবা দেশ ঋণ নিয়ে এগিয়ে এলে সেটাও যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। আমরা ঋণ নেব, সুদসহ ফেরতও দেব। কিন্তু কার কাছে ভিক্ষা করব না। আমরা কার কাছে হাত পাততেও চাই না।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আজ দুর্নীতির কথা বলছে। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত, দুর্নীতির দায়ে বিশ^ব্যাংকের ঋণ তাদের সময়ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুত ও যোগাযোগ খাতের ৭টি প্রকল্পের অর্থায়ন বিশ^ব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছিল। বিএনপি দুর্নীতি ছাড়া কিছু ভাবতেও পারে না। যারা চোর, তারা অন্যদেরও চোরা দৃষ্টিতে দেখে। কেননা তারা ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি-লুটপাট ছাড়া অন্য কিছু করেনি। চুরি-দুর্নীতি ছাড়াও যে কাজ করা যায়, এটা বিএনপির লোকরা ভাবতেই পারে না।
শেখ হাসিনা বলেন, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় পদ্মা সেতু নির্মাণের আমরা সিদ্ধান্ত নিই, অনেক কাজও করি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়। এবার ক্ষমতায় আসার পর আবারও আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিই। সরকার পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে চাইলে বিশ^ব্যাংক নিজে থেকেই অর্থায়নে এগিয়ে আসে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তিও হয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক ঋণের একটি টাকাও ছাড় দেয়নি। অথচ হঠাৎ কথাবার্তা নেই, দুর্নীতির সম্ভাবনার কথা বলে ঋণচুক্তি বাতিল করে দিল! পত্রপত্রিকায়ও খবর এসেছে, একটি কোম্পানিকে পরামর্শক নিয়োগে তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই এটা করেছে বিশ্বব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, আমরা পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করেছি, ভূমি অধিগ্রহণ করেছি। এ কাজে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বিশ^ব্যাংক বার বার খুঁজেও সেখানে কোন দুর্নীতি পায়নি। যেখানে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচে কোন দুর্নীতি হলো না, সেখানে একটি পয়সাও ছাড় না করেই কিভাবে দুর্নীতির সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে?
বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ বছরের দুর্নীতি-লুটপাট ও দুঃশাসনের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুন-হত্যা আর অপরাধীদের রক্ষা করাই বিএনপির চরিত্র। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে, বিদেশে পাচার করেছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দুই ছেলে এবং অর্থমন্ত্রী সবাই মিলে দুর্নীতি-লুটপাট করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে খালেদা জিয়া দুর্নীতির কালো টাকা জরিমানা দিয়ে সাদা করেছেন। দেড় শ’ স্যুটকেসে করে অর্থ-সম্পদ সৌদি আরবে পাচার করেছেন। তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে হীরা-জহরত, বিশাল সম্পদের চিত্র দেশবাসী দেখেছে। যেসব বিএনপি নেতা আজ বড় বড় কথা বলছেন, তাঁদের কাছে প্রশ্ন- ‘তবে কী তারা বলবে জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া ভাঙ্গা স্যুটকেস যাদুর বাক্স হয়ে গেছে?’
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরে হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, এমনকি আওয়ামী লীগ করার অপরাধে ছয় বছরের শিশুকেও গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, গত সরকারে এসেও আমরা কোন প্রতিশোধ নেইনি এবারও নেইনি। বরং আমরা সকল শক্তি ব্যয় করছি দেশ ও জাতির উন্নয়নে, কল্যাণে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক রাষ্ট্রপতির পরিবারই সরকার থেকে সহযোগিতা পায়। কিন্তু আমরা দু’বোন কোন কিছু নেইনি। গত সরকারের সময় শেখ রেহানার জন্য ধানম-ির একটি ছোট বাড়ি দেয়া হলেও খালেদা জিয়া এসে তা বাতিল করে সেখানে থানা করেছেন। আমরা পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া বাড়িটিও জনগণের জন্য দান করেছি। আর বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী ক্যান্টনমেন্টের বিশাল অট্টালিকা ছাড়াও গুলশানে ১০ বিঘার ওপর আরেকটি বিশাল বাড়ি নিয়েছেন। নিজে আদালতে গিয়ে হেরে গিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি ছাড়তে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। আর এই অবৈধ দখলকৃত বাড়ি হারানোর শোকে তাঁর ক্রন্দন দেশবাসী দেখেছে। এ রাগে তিনি হরতাল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের সাড়ে তিন বছরে প্রায় ৫ হাজার ২শ’টি বিভিন্ন নির্বাচন হয়েছে। একটি নির্বাচনেও কোন ধরনের গোলযোগ বা অভিযোগ ওঠেনি। দেশের জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে। আমরা জনগণের ভোটের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট প্রয়োগ করতে পারে, আমরা তা প্রমাণ করেছি। কারণ আমরা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী, জনগণের জন্যই আমাদের রাজনীতি।
দেশ-জনগণের কল্যাণে কাজ করতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শ নিয়ে জনগণের পাশে থাকতে হবে। স্বেচ্ছাসেবক মানে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা, সেটাও মনে রাখতে হবে। জনগণের জন্য সরকার যেসব কাজ করেছে- সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ও ভালবাসা ছাড়া বড় নেতা হওয়া যায় না। জনগণের এই আস্থা-বিশ্বাস ও ভালবাসা অর্জন করতে হবে। সম্মেলনে নিজেদেরই সংগঠনের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনের আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে দশ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বাড়িয়েছে। সেখান থেকে এক বিলিয়ন ডলার খরচ করা কোন বিষয়ই নয়। এটিও একবারে নয়, বছরে বছরে খরচ করা হবে। কাজেই নিজেদের সম্পদেই আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব। যদি কোন দাতাগোষ্ঠী এখাতে ঋণ দিতে চায়, তখন আমরাই ঠিক করব ওই ঋণ নেব কী না। জানি তাদের (বিশ^ব্যাংক) অনেক শক্তি আছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তাই এ দেশের জনগণ অতীতেও কারও কাছে মাথানত করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ™ি^তীয় জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প™§া সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি আরও বলেন, যে অপরাধ বা অন্যায় আমরা করিনি, সে ব্যাপারে অপবাদ দেয়া হলে কোন অবস্থাতেই আমরা তা মেনে নেব না। প™§া সেতু নির্মাণ নিয়ে আমরা যে কোন অন্যায় করিনি সেটা দেশবাসী ভাল করেই জানে। কেননা অপরাধ করলে সেটা মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা যায় না। তাদের কাছে সব তথ্যই চলে যায়, কোন কিছুই গোপন থাকে না।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার দুই-তিন ঘণ্টা আগেই বিএনপি নেত্রী কালো কাঁচের গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে কেন গিয়েছিলেন? যিনি দুপুর ১২টার আগে ঘুম থেকে ওঠেন না, তিনি ওইদিন সকাল ৭টায় উঠে আত্মগোপনে গেলেন কেন? এরপর দেড় মাস কেন তিনি সেনানিবাসের বাসায় ফেরেননি? এর রহস্যও আস্তে আস্তে উদ্ঘাটিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ ও সেনা অফিসারদের হত্যার বিচার চলছে। এত নিয়মতান্ত্রিক বিচার এর আগে হয়নি। অথচ এ বিচার বন্ধের জন্য কারা সোচ্চার? কারা বিচার বন্ধ করতে আদালতে দরখাস্ত দিয়েছে? যে আইনজীবী এটা করেছে তার রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজলেই বেরিয়ে আসবে। আসলে খুনীদের বিচার নয়, খুনীদের মদদ দেয়াই হচ্ছে বিএনপির নীতি।
এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওছারের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথের পরিচালনায় সম্মেলনের উ™ে^াধনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ। শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন দফতর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ টুটুল।
‘উন্নয়ন ও অগ্রগতির রূপকার শেখ হাসিনার সরকার পুনর্বার দরকার’Ñ এ সেøাগান সামনে রেখে দীর্ঘ নয় বছর পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। দীর্ঘদিন পর এ সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশ থেকে আগত সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল অন্যরকম আমেজ। নেতাকর্মীদের পদচারণায় সম্মেলনস্থল ছিল মুখরিত। নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয় এই সম্মেলনকে ঘিরে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে নির্মাণ করা হয় সুদৃশ্য বিশাল মঞ্চ। সম্মেলন প্রাঙ্গণ ও আশপাশের সব সড়ককে ডিজিটাল ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি, রংবেরঙের বেলুন, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে অপরূপ সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। সকাল থেকে সারাদেশের হাজার হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করেন। অনেকেই ব্যান্ডের তালে তালে নেচেগেয়ে ও সেøাগানে সম্মেলন প্রাঙ্গণ মুখরিত করে রাখেন। একপর্যায়ে নেতাকর্মী, আমন্ত্রিত অতিথি ও মানুষের ভিড় সম্মেলনস্থল ছাপিয়ে সংলগ্ন সড়ক উপচে পড়ে।
জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের মূল পর্ব শুরু হয়। শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উ™ে^াধন করেন। এ সময় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওছার। ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি/ আহ্বায়করাও আলাদাভাবে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন।
সম্মেলনের শুরুতেই সংগঠনের সাংগঠনিক সঙ্গীত ছাড়াও দলীয় নৃত্যের তালে তালে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল ছিটিয়ে বরণ, সম্মেলনের থিম সং, দেশাত্মবোধক ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে রচিত গান পরিবেশন করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল, ক্রেস্ট, ব্যাজ ও উত্তরীয় উপহার দেয়া হয়। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি সংগঠনের ঢাকা জেলার নেতাদের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে সারাদেশের নেতাদের মধ্যে এ বই বিতরণের কর্মসূচীর সূচনা ঘটান প্রধানমন্ত্রী।
বিকেলে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক রিপোর্ট, কোষাধ্যক্ষের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন ও অনুমোদিত হয়। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছিল। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি ও জাতীয় পরিষদসহ সারাদেশের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা ও ৫৭৮টি সাংগঠনিক উপজেলা থেকে ২ হাজারেরও বেশি কাউন্সিলর-ডেলিগেটসসহ ৫ সহস্রাধিক নেতাকর্মী সম্মেলনে যোগ দেন।
১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠা ঘটানোর পর টানা ৯ বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে এটি পরিচালিত হয়েছে। ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই সংগঠনের প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও এবার প্রায় নয় বছর পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। আর এ কারণেই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল অন্যরকম আমেজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে আরও বলেন, সাহস করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। আমরা যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছি। আমরা গর্বিত জাতি। তাই আমরা কারও কাছে মাথানত করতে শিখিনি। আমরা নিজেদের টাকায়ই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারব। কেননা আমরা দুর্নীতি করতে ও অর্থসম্পদ বানাতে আসিনি। তবে কোন দাতা সংস্থা কিংবা দেশ ঋণ নিয়ে এগিয়ে এলে সেটাও যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। আমরা ঋণ নেব, সুদসহ ফেরতও দেব। কিন্তু কার কাছে ভিক্ষা করব না। আমরা কার কাছে হাত পাততেও চাই না।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আজ দুর্নীতির কথা বলছে। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত, দুর্নীতির দায়ে বিশ^ব্যাংকের ঋণ তাদের সময়ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুত ও যোগাযোগ খাতের ৭টি প্রকল্পের অর্থায়ন বিশ^ব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছিল। বিএনপি দুর্নীতি ছাড়া কিছু ভাবতেও পারে না। যারা চোর, তারা অন্যদেরও চোরা দৃষ্টিতে দেখে। কেননা তারা ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি-লুটপাট ছাড়া অন্য কিছু করেনি। চুরি-দুর্নীতি ছাড়াও যে কাজ করা যায়, এটা বিএনপির লোকরা ভাবতেই পারে না।
শেখ হাসিনা বলেন, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় পদ্মা সেতু নির্মাণের আমরা সিদ্ধান্ত নিই, অনেক কাজও করি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়। এবার ক্ষমতায় আসার পর আবারও আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিই। সরকার পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে চাইলে বিশ^ব্যাংক নিজে থেকেই অর্থায়নে এগিয়ে আসে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তিও হয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক ঋণের একটি টাকাও ছাড় দেয়নি। অথচ হঠাৎ কথাবার্তা নেই, দুর্নীতির সম্ভাবনার কথা বলে ঋণচুক্তি বাতিল করে দিল! পত্রপত্রিকায়ও খবর এসেছে, একটি কোম্পানিকে পরামর্শক নিয়োগে তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই এটা করেছে বিশ্বব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, আমরা পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করেছি, ভূমি অধিগ্রহণ করেছি। এ কাজে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বিশ^ব্যাংক বার বার খুঁজেও সেখানে কোন দুর্নীতি পায়নি। যেখানে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচে কোন দুর্নীতি হলো না, সেখানে একটি পয়সাও ছাড় না করেই কিভাবে দুর্নীতির সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে?
বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ বছরের দুর্নীতি-লুটপাট ও দুঃশাসনের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুন-হত্যা আর অপরাধীদের রক্ষা করাই বিএনপির চরিত্র। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে, বিদেশে পাচার করেছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দুই ছেলে এবং অর্থমন্ত্রী সবাই মিলে দুর্নীতি-লুটপাট করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে খালেদা জিয়া দুর্নীতির কালো টাকা জরিমানা দিয়ে সাদা করেছেন। দেড় শ’ স্যুটকেসে করে অর্থ-সম্পদ সৌদি আরবে পাচার করেছেন। তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে হীরা-জহরত, বিশাল সম্পদের চিত্র দেশবাসী দেখেছে। যেসব বিএনপি নেতা আজ বড় বড় কথা বলছেন, তাঁদের কাছে প্রশ্ন- ‘তবে কী তারা বলবে জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া ভাঙ্গা স্যুটকেস যাদুর বাক্স হয়ে গেছে?’
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরে হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, এমনকি আওয়ামী লীগ করার অপরাধে ছয় বছরের শিশুকেও গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, গত সরকারে এসেও আমরা কোন প্রতিশোধ নেইনি এবারও নেইনি। বরং আমরা সকল শক্তি ব্যয় করছি দেশ ও জাতির উন্নয়নে, কল্যাণে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক রাষ্ট্রপতির পরিবারই সরকার থেকে সহযোগিতা পায়। কিন্তু আমরা দু’বোন কোন কিছু নেইনি। গত সরকারের সময় শেখ রেহানার জন্য ধানম-ির একটি ছোট বাড়ি দেয়া হলেও খালেদা জিয়া এসে তা বাতিল করে সেখানে থানা করেছেন। আমরা পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া বাড়িটিও জনগণের জন্য দান করেছি। আর বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী ক্যান্টনমেন্টের বিশাল অট্টালিকা ছাড়াও গুলশানে ১০ বিঘার ওপর আরেকটি বিশাল বাড়ি নিয়েছেন। নিজে আদালতে গিয়ে হেরে গিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি ছাড়তে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। আর এই অবৈধ দখলকৃত বাড়ি হারানোর শোকে তাঁর ক্রন্দন দেশবাসী দেখেছে। এ রাগে তিনি হরতাল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের সাড়ে তিন বছরে প্রায় ৫ হাজার ২শ’টি বিভিন্ন নির্বাচন হয়েছে। একটি নির্বাচনেও কোন ধরনের গোলযোগ বা অভিযোগ ওঠেনি। দেশের জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে। আমরা জনগণের ভোটের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট প্রয়োগ করতে পারে, আমরা তা প্রমাণ করেছি। কারণ আমরা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী, জনগণের জন্যই আমাদের রাজনীতি।
দেশ-জনগণের কল্যাণে কাজ করতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শ নিয়ে জনগণের পাশে থাকতে হবে। স্বেচ্ছাসেবক মানে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা, সেটাও মনে রাখতে হবে। জনগণের জন্য সরকার যেসব কাজ করেছে- সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ও ভালবাসা ছাড়া বড় নেতা হওয়া যায় না। জনগণের এই আস্থা-বিশ্বাস ও ভালবাসা অর্জন করতে হবে। সম্মেলনে নিজেদেরই সংগঠনের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনের আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
No comments