সংবিধান সংশোধনের দাবি-নির্বাচনের আগে সংসদের বিলুপ্তি চান মেনন

নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি দাবি করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচনকালে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা কেমন হবে, তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন।


গতকাল শনিবার রাজধানীর তোপখানা রোডের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মেনন এই দাবি করেন।
ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক রাশেদ খান মেনন বলেন, সংসদ থাকা অবস্থায় নির্বাচন হলে বর্তমান সংসদ সদস্য ও এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ (সবার জন্য সুযোগ) থাকবে না। কারণ, নির্বাচন কমিশন সাংসদদের অধিকার বা সুবিধা (প্রিভিলেজ) খর্ব করতে পারবে না। সংসদ সদস্যরা স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ও প্রশাসনের কাছে অধিক গুরুত্ব পাবেন। নির্বাচনের সময় এই অসংগতি দূর করার জন্য সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সংশোধন করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার উদাহরণ তুলে ধরে মেনন বলেন, এসব দেশে সংসদের সময়সীমা পার হওয়ার পর অথবা ওই সময়সীমার আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে তারপর নির্বাচন হয়। তাই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সংবিধানের এ-সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, দেশের বর্তমান সংবিধানের ধারা ১২৩(৩) অনুসারে, সংসদের সময়সীমা শেষ হওয়ার তিন মাস আগে সংসদ নির্বাচনের বিধান রাখা হয়েছে। তবে ওই সময় সংসদের অধিবেশন বসবে না।
সাংসদদের অধিকার বা সুবিধা (প্রিভিলেজ) বিষয়ে কোনো আইন নেই। কেবল সংসদ অধিবেশনে সাংসদদের বক্তব্য নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলে সাংবিধানিক বিধিনিষেধ আছে। এ অবস্থায় সাংসদেরা অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন কীভাবে—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন বলেন, সাংসদদের অধিকার ও সুবিধা নিয়ে আইন না থাকলেও প্রথা আছে। এটাই অনেক কিছু। তা ছাড়া একজন সাংসদ হিসেবে উপলব্ধির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
সংবিধান সংশোধনকল্পে গঠিত বিশেষ কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) দেননি কেন—জানতে চাইলে মেনন বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্ট দিইনি বলে এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না, এ কথা কে বলেছে?’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কমিটিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দেওয়া না-দেওয়া নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সবাই ঐকমত্য ছিলাম—এমনটা নয়। সব কথা বলা যায় না। বলা ঠিকও না।’
মেনন বলেন, ‘আদালতের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখার কোনো অবকাশ ছিল না। সংগত কারণেই পঞ্চদশ সংশোধনীতে এ ব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাহাত্তরের সংবিধানের যে বিধানে আমরা ফিরে গেছি, তা নিরপেক্ষ নির্বাচনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’
অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ভারতে নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনই সুপ্রিম। অন্তর্বর্তী সরকার দলীয় না নির্দলীয়, তা অনর্থক বিতর্ক। বর্তমান সরকারের অধীনে সব নির্বাচনই ভালো হয়েছে। আবার নির্দলীয় ব্যবস্থায় ২০০১ সালের নির্বাচনও আমরা দেখেছি। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা ও কার্যধারা নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায়। দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যাবলি ছাড়া ওই সরকার নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়া বা কার্যকর করতে পারবে না। জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে চললে নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এ ছাড়া বিরোধী দলকেও অন্তর্বর্তী সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিমল বিশ্বাস, ফজলে হোসেন বাদশা, আনিসুর রহমান মল্লিক, কামরুল আহসান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.