জলাবদ্ধতা
নগরের অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে বর্ষার সময় এক ঘণ্টা এমনকি এর চেয়ে কম সময়ের টানা বৃষ্টিতে নগরের নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এ কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় নগরবাসীর। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের আশ্বাস রাজনীতিকেরা বারবার দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।
এ জন্য জলাবদ্ধতা বাড়ছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা। এসব পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে তাঁদের ভাবনায়
বিধান বড়ুয়া
নগর পরিকল্পনাবিদ
মনে হয় আমরা এখনো আত্মবিনাশী
যেকোনো শহরে যখন জনসংখ্যার ঘনত্ব বাড়ে, তখন এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় ১৯৯৫-৯৬ সালে করা মহাপরিকল্পনাতেই বলা আছে। কিন্তু ওই মহাপরিকল্পনায় প্রস্তাবিত কাজের ১০ শতাংশও এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে মহাপরিকল্পনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে অনুমান করা হয়েছিল, সে তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে নগরের আবাসন ও যোগাযোগ অবকাঠামোসহ নানা স্থাপনা। তবে এর মধ্যে পরিকল্পনার কোনো ছাপ নেই।
জলাবদ্ধতা সমস্যা দৃশ্যমান বলে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, যানজট—এসব সমস্যাও প্রকট। অবস্থা দেখে মনে হয়, আমরা এখনো আত্মবিনাশী। এসব সমস্যা নিরসনের বিষয়ে যে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকেই জিজ্ঞেস করা হোক, তিনি বলবেন অর্থসংকটের কথা। এটা একটা সাধারণ উত্তর। তবে এর যৌক্তিকতাও আছে।
নাগরিক হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি সবারই কিছু মৌলিক দায়িত্ব থাকে। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনে অনেককে উদাসীন থাকতে দেখা যায়। আর এই উদাসীনতার অন্যতম কারণ হতে পারে দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। অথচ দায়িত্ব সচেতন হলেই সুনাগরিক হওয়া যায়। কিন্তু ১৯৭৫-৭৬ সালের পর বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় দায়িত্ব সচেতন নাগরিক গড়ে তোলার কোনো উপকরণ নেই। জলাবদ্ধতাসহ সব ধরনের সমস্যা নিরসনের উপায় দুটি। প্রথমত, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সচেতনতার জন্য মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
শাহ মুহাম্মদ আখতারউদ্দিন
প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদ সাবেক চেয়ারম্যান, সিডিএ
খাল খনন না করায় নিষ্কাশনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে
নগর মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী খালগুলো খনন না করার কারণে নগরে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নগরের ঘনবসতি এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া হিজড়া খাল, নাছির খাল ও মির্জাখালের মাটি সরিয়ে গভীরতা আরও বাড়ানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। পাশাপাশি বহদ্দারহাট থেকে খাজা রোড হয়ে কর্ণফুলী পর্যন্ত আরেকটি নতুন খাল খননের কথা ছিল। সাবেক মেয়ার এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী খাল খননের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা পরে আর বজায় রাখা হয়নি। এ কারণে বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়ছে।
আসলে অনেক দিন ধরে চাক্তাই খাল ও মহেষ খাল খনন করা হয়নি। এই দুটি খালের মুখে স্লুইস গেইট বসানোর পরিকল্পনা ছিল, যাতে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় জোয়ারের পানি ঠেকানো যায়। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই। এ কারণে বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে নগরের সমতল এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। একই সময় জোয়ারের কারণে সমতল এলাকার পানি নদী বা সাগরে গড়িয়ে যেতে পারছে না। বরং এই জোয়ারের কারণে সমতলে পানির উচ্চতা আরও বাড়ছে। এতে নগরে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে ১৯৯৯ সালের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগী হলে সরকারের কাছ থেকে অর্থ পাওয়া কোনো সমস্যা নয়।
চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর। আমাদের এখান থেকে রাজস্ব পাওয়া যায় বেশি। অথচ বৃষ্টিতে শত শত কোটি টাকার সম্পদ প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে। এর কিছু অংশ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ব্যয় হলে নগরবাসী উপকৃত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতিও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে চট্টগ্রাম।
দেলোয়ার হোসেন মজুমদার
সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট
নগর পরিকল্পনায় সচেতনতার অভাব রয়েছে
নগরে বর্ধিত জনসংখ্যার কারণে অপরিকল্পিতভাবে ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে খাল ও অন্যান্য জলাধার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে অবৈধ দখল। এসব কারণে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে রয়েছে নগর পরিকল্পনায় সচেতনতার অভাব। নগরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যাবে পানি, গ্যাসসহ বিভিন্ন সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হয়েছে পানি নিষ্কাশনের নালার ভেতর।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) জলাবদ্ধতা নিরসনে শুধু গতানুগতিক ‘রুটিন ওয়ার্ক’ করছে। চসিকের বাজেটে জলাবদ্ধতা নিরসনে যে বরাদ্দ, তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়।
অথচ এই জলাবদ্ধতাই এখন চট্টগ্রামের প্রধান নাগরিক সমস্যা। প্রতিবছর এই সমস্যার কারণে সম্পদের যে ক্ষতি হচ্ছে, টাকার অঙ্কে তা বিপুল। যৌক্তিক কারণেই এ খাতে আরও বেশি বরাদ্দ রাখা উচিত।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) যে মহাপরিকল্পনা (চিটাগাং মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান) প্রণয়ন করেছিল, সেখানে সাধারণ, জরুরি ও অতিজরুরিক—এই তিন ভাগে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ হয়নি। অথচ ২০১৫ সালে এই মহাপরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে বাস্তবতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে যেসব খাল আছে, সেগুলোকে পূর্ণ ক্ষমতায় আনতে হবে। পাশাপাশি বহদ্দারহাট-কর্ণফুলী সেতু, বিপ্লব উদ্যান-বহদ্দারহাট ও কুয়াইশ-চান্দগাঁও-কর্ণফুলী এই নতুন তিনটি খাল খনন করতে হবে।
শাহরিয়ার খালেদ
চাক্তাই খাল খনন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক
সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এই সমস্যা দিনে দিনে আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। এর কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ, সুষুম ড্রেনেজব্যবস্থা না থাকা এবং খাল ও নালার সংস্কার না হওয়া।
১৯৬১ সালের মহাপরিকল্পনায় নগরের পানি নিষ্কাশনের জন্য আলাদা পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের করা মহাপরিকল্পনায় আলাদাভাবে ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ওই মহাপরিকল্পনায় করণীয় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। কিছু করতে হলে এখনই কাজ শুরু করতে হবে।
আমার জানা মতে, চট্টগ্রাম নগরের ৬৪ শতাংশ কঠিন বর্জ্য খাল-নালায় নিক্ষেপিত হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) সামগ্রিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারেনি। এ ছাড়া বিভিন্ন খাল দখল হয়ে গেছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করায় পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।
চসিকের নিজস্ব কোনো পানি নিষ্কাকশন পরিকল্পনা নেই। নেই কোনো ড্রেনেজ বিশেষজ্ঞ। একটু খেয়াল করলেই পরিকল্পনার অভাব চোখে পড়বে। ১৯৮৮ সালে দুই কোটি টাকা খরচ করে কাপাসগোলা ও কাতালগঞ্জ সড়ক উঁচু করা হয়। এরপর ২০০৫ সালে একবার এবং ২০১১ সালে আরও একবার সড়ক উঁচু করা হয়। তিন দফায় সড়ক উঁচু হয়েছে ৯ থেকে ১১ ফুট। কিন্তু এর ফলে এই এলাকার খালের তলায় মাটি জমে ক্রমশ ভরাট হয়েছে। তাই পানি রাস্তা দিয়ে প্রবাহিত হয়। ইতিপূর্বে খালের তলা পাকাকরণের মতো কিছু ভুল সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
সংকট নিরসনে চসিকের উচিত ওয়াসাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও ফোরাম ফর প্ল্যানড চিটাগাংয়ের মতো সংগঠনের বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া ও সমন্বয় সাধন করা।
আলী আশরাফ
প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদ
মহাপরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন হলেও জলাবদ্ধতা হতো না
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পাঁচ ধাপে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল নগর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনায়। ১৯৯৫ সালে প্রণীত এই মহাপরিকল্পনা ১৯৯৯ সালে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম ধাপের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলেও আজ জলাবদ্ধতা হতো না।
মহাপরিকল্পনায় প্রথম ধাপে আমরা নগরের তিনটি নতুন খাল খননের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে কেউ উদ্যোগ নেয়নি। তবে ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে তিনটি খাল খননের জন্য টাকা চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। আর গত বছর একটি খালের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠায় সিটি করপোরেশন। টাকা আদায়ের জন্য কিছু পদ্ধতি আছে, সেটা কী আন্তরিকতার সঙ্গে করা হয়েছে?
জলাবদ্ধতা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মহাপরিকল্পনায় প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী নদী, বিপ্লব উদ্যান থেকে বহদ্দারহাট এবং শীতলঝরনা খালকে নোয়াখালের সংযোগ ঘটানো। এই তিনটি খাল খনন করা হলে নগরের বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, কালুরঘাট, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, ষোলশহর, চশমা হিল, পাঁচলাইশ, চকবাজার, শুলকবহর, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত রাখা যেত।
আসলে আমাদের জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিক হলে সরকারের কাছ থেকে খাল খননের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যেত। কিন্তু তাঁরা কতটুকু আন্তরিক ছিলেন তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আমরা বারবার পরিকল্পনা প্রণয়নের দিকে উদ্যোগী হই। কিন্তু আগের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখাই। কেন দেখাই সেটাও আমরা জানি। কারণ, একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কেউ না কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে আমরা অগ্রাধিকারভিত্তিক পরিকল্পনাগুলোও বাস্তবায়নে গড়িমসি করি। এদিকে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়িমসির কারণে ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি খাল খননের বিকল্প নেই। পরে ধাপে ধাপে অন্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে।
জেরিনা হোসেন
স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ
জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশদ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিশদ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এতে ধাপে ধাপে বিভিন্ন খালে স্লুইস গেট নির্মাণ, নতুন দুটি খাল খনন, নালা সংস্কার করাসহ অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের মধ্যে এসব বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু কিছুই করা হয়নি।
পাহাড় ও সমুদ্রে ঘেরা চট্টগ্রাম নগরের কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে পাহাড়ি ঢল নামে। বৃষ্টি বেশি হয়। জোয়ারের পানি ঢোকে। কিন্তু আমাদের পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা এত পানি ধারণ করতে পারে না। কারণ নালা অপর্যাপ্ত। এসব কারণে জলাবদ্ধতা হয়। পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বালু ও মাটি নেমে নালা ও খাল ভরাট হয়ে যায়। এগুলো নিয়মিত সংস্কার করা দরকার।
স্থায়ী সমাধানের জন্য ৯৫ সালে প্রণীত বিশদ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা জরুরি। ওই পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। জোয়ারের পানি থেকে শহর রক্ষার জন্য স্লুইস গেটের ডিজাইন করা ছিল। প্রস্তাব ছিল খাল খননের। এ ছাড়া হ্রদ নির্মাণ, নালা ও খাল বড় করার কথা বলা হয়েছিল। পাশাপাশি খাল অবৈধ দখলমুক্ত করার কথাও ছিল। এগুলো করা গেলে নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেত। তবে বিশদ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একা সিটি করপোরেশনের পক্ষেও সম্ভব নয়। এ জন্য অন্যান্য সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। করপোরেশনের এত টাকাও নেই। এ ছাড়া নাগরিক হিসেবেও আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমরা নালা-নর্দমায় পলিথিন, ময়লা-আবর্জনা ফেলি, গৃহস্থালির ময়লা ফেলি। এটাও জলাবদ্ধতার কারণ।
অনুলিখন: একরামুল হক, প্রণব বল ও মিঠুন চৌধুরী
ছবি: রাশেদ মাহমুদ
বিধান বড়ুয়া
নগর পরিকল্পনাবিদ
মনে হয় আমরা এখনো আত্মবিনাশী
যেকোনো শহরে যখন জনসংখ্যার ঘনত্ব বাড়ে, তখন এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় ১৯৯৫-৯৬ সালে করা মহাপরিকল্পনাতেই বলা আছে। কিন্তু ওই মহাপরিকল্পনায় প্রস্তাবিত কাজের ১০ শতাংশও এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে মহাপরিকল্পনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে অনুমান করা হয়েছিল, সে তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে নগরের আবাসন ও যোগাযোগ অবকাঠামোসহ নানা স্থাপনা। তবে এর মধ্যে পরিকল্পনার কোনো ছাপ নেই।
জলাবদ্ধতা সমস্যা দৃশ্যমান বলে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, যানজট—এসব সমস্যাও প্রকট। অবস্থা দেখে মনে হয়, আমরা এখনো আত্মবিনাশী। এসব সমস্যা নিরসনের বিষয়ে যে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকেই জিজ্ঞেস করা হোক, তিনি বলবেন অর্থসংকটের কথা। এটা একটা সাধারণ উত্তর। তবে এর যৌক্তিকতাও আছে।
নাগরিক হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি সবারই কিছু মৌলিক দায়িত্ব থাকে। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনে অনেককে উদাসীন থাকতে দেখা যায়। আর এই উদাসীনতার অন্যতম কারণ হতে পারে দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। অথচ দায়িত্ব সচেতন হলেই সুনাগরিক হওয়া যায়। কিন্তু ১৯৭৫-৭৬ সালের পর বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় দায়িত্ব সচেতন নাগরিক গড়ে তোলার কোনো উপকরণ নেই। জলাবদ্ধতাসহ সব ধরনের সমস্যা নিরসনের উপায় দুটি। প্রথমত, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সচেতনতার জন্য মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
শাহ মুহাম্মদ আখতারউদ্দিন
প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদ সাবেক চেয়ারম্যান, সিডিএ
খাল খনন না করায় নিষ্কাশনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে
নগর মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী খালগুলো খনন না করার কারণে নগরে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নগরের ঘনবসতি এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া হিজড়া খাল, নাছির খাল ও মির্জাখালের মাটি সরিয়ে গভীরতা আরও বাড়ানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। পাশাপাশি বহদ্দারহাট থেকে খাজা রোড হয়ে কর্ণফুলী পর্যন্ত আরেকটি নতুন খাল খননের কথা ছিল। সাবেক মেয়ার এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী খাল খননের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা পরে আর বজায় রাখা হয়নি। এ কারণে বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়ছে।
আসলে অনেক দিন ধরে চাক্তাই খাল ও মহেষ খাল খনন করা হয়নি। এই দুটি খালের মুখে স্লুইস গেইট বসানোর পরিকল্পনা ছিল, যাতে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় জোয়ারের পানি ঠেকানো যায়। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই। এ কারণে বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে নগরের সমতল এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। একই সময় জোয়ারের কারণে সমতল এলাকার পানি নদী বা সাগরে গড়িয়ে যেতে পারছে না। বরং এই জোয়ারের কারণে সমতলে পানির উচ্চতা আরও বাড়ছে। এতে নগরে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে ১৯৯৯ সালের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উদ্যোগী হলে সরকারের কাছ থেকে অর্থ পাওয়া কোনো সমস্যা নয়।
চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর। আমাদের এখান থেকে রাজস্ব পাওয়া যায় বেশি। অথচ বৃষ্টিতে শত শত কোটি টাকার সম্পদ প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে। এর কিছু অংশ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ব্যয় হলে নগরবাসী উপকৃত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতিও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে চট্টগ্রাম।
দেলোয়ার হোসেন মজুমদার
সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট
নগর পরিকল্পনায় সচেতনতার অভাব রয়েছে
নগরে বর্ধিত জনসংখ্যার কারণে অপরিকল্পিতভাবে ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে খাল ও অন্যান্য জলাধার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে অবৈধ দখল। এসব কারণে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে রয়েছে নগর পরিকল্পনায় সচেতনতার অভাব। নগরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যাবে পানি, গ্যাসসহ বিভিন্ন সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হয়েছে পানি নিষ্কাশনের নালার ভেতর।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) জলাবদ্ধতা নিরসনে শুধু গতানুগতিক ‘রুটিন ওয়ার্ক’ করছে। চসিকের বাজেটে জলাবদ্ধতা নিরসনে যে বরাদ্দ, তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়।
অথচ এই জলাবদ্ধতাই এখন চট্টগ্রামের প্রধান নাগরিক সমস্যা। প্রতিবছর এই সমস্যার কারণে সম্পদের যে ক্ষতি হচ্ছে, টাকার অঙ্কে তা বিপুল। যৌক্তিক কারণেই এ খাতে আরও বেশি বরাদ্দ রাখা উচিত।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) যে মহাপরিকল্পনা (চিটাগাং মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান) প্রণয়ন করেছিল, সেখানে সাধারণ, জরুরি ও অতিজরুরিক—এই তিন ভাগে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ হয়নি। অথচ ২০১৫ সালে এই মহাপরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে বাস্তবতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে যেসব খাল আছে, সেগুলোকে পূর্ণ ক্ষমতায় আনতে হবে। পাশাপাশি বহদ্দারহাট-কর্ণফুলী সেতু, বিপ্লব উদ্যান-বহদ্দারহাট ও কুয়াইশ-চান্দগাঁও-কর্ণফুলী এই নতুন তিনটি খাল খনন করতে হবে।
শাহরিয়ার খালেদ
চাক্তাই খাল খনন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক
সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এই সমস্যা দিনে দিনে আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। এর কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ, সুষুম ড্রেনেজব্যবস্থা না থাকা এবং খাল ও নালার সংস্কার না হওয়া।
১৯৬১ সালের মহাপরিকল্পনায় নগরের পানি নিষ্কাশনের জন্য আলাদা পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের করা মহাপরিকল্পনায় আলাদাভাবে ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ওই মহাপরিকল্পনায় করণীয় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। কিছু করতে হলে এখনই কাজ শুরু করতে হবে।
আমার জানা মতে, চট্টগ্রাম নগরের ৬৪ শতাংশ কঠিন বর্জ্য খাল-নালায় নিক্ষেপিত হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) সামগ্রিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারেনি। এ ছাড়া বিভিন্ন খাল দখল হয়ে গেছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করায় পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।
চসিকের নিজস্ব কোনো পানি নিষ্কাকশন পরিকল্পনা নেই। নেই কোনো ড্রেনেজ বিশেষজ্ঞ। একটু খেয়াল করলেই পরিকল্পনার অভাব চোখে পড়বে। ১৯৮৮ সালে দুই কোটি টাকা খরচ করে কাপাসগোলা ও কাতালগঞ্জ সড়ক উঁচু করা হয়। এরপর ২০০৫ সালে একবার এবং ২০১১ সালে আরও একবার সড়ক উঁচু করা হয়। তিন দফায় সড়ক উঁচু হয়েছে ৯ থেকে ১১ ফুট। কিন্তু এর ফলে এই এলাকার খালের তলায় মাটি জমে ক্রমশ ভরাট হয়েছে। তাই পানি রাস্তা দিয়ে প্রবাহিত হয়। ইতিপূর্বে খালের তলা পাকাকরণের মতো কিছু ভুল সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
সংকট নিরসনে চসিকের উচিত ওয়াসাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও ফোরাম ফর প্ল্যানড চিটাগাংয়ের মতো সংগঠনের বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া ও সমন্বয় সাধন করা।
আলী আশরাফ
প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদ
মহাপরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন হলেও জলাবদ্ধতা হতো না
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পাঁচ ধাপে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল নগর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনায়। ১৯৯৫ সালে প্রণীত এই মহাপরিকল্পনা ১৯৯৯ সালে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম ধাপের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলেও আজ জলাবদ্ধতা হতো না।
মহাপরিকল্পনায় প্রথম ধাপে আমরা নগরের তিনটি নতুন খাল খননের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে কেউ উদ্যোগ নেয়নি। তবে ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে তিনটি খাল খননের জন্য টাকা চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। আর গত বছর একটি খালের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠায় সিটি করপোরেশন। টাকা আদায়ের জন্য কিছু পদ্ধতি আছে, সেটা কী আন্তরিকতার সঙ্গে করা হয়েছে?
জলাবদ্ধতা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মহাপরিকল্পনায় প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী নদী, বিপ্লব উদ্যান থেকে বহদ্দারহাট এবং শীতলঝরনা খালকে নোয়াখালের সংযোগ ঘটানো। এই তিনটি খাল খনন করা হলে নগরের বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, কালুরঘাট, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, ষোলশহর, চশমা হিল, পাঁচলাইশ, চকবাজার, শুলকবহর, মুরাদপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত রাখা যেত।
আসলে আমাদের জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিক হলে সরকারের কাছ থেকে খাল খননের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যেত। কিন্তু তাঁরা কতটুকু আন্তরিক ছিলেন তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আমরা বারবার পরিকল্পনা প্রণয়নের দিকে উদ্যোগী হই। কিন্তু আগের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখাই। কেন দেখাই সেটাও আমরা জানি। কারণ, একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কেউ না কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে আমরা অগ্রাধিকারভিত্তিক পরিকল্পনাগুলোও বাস্তবায়নে গড়িমসি করি। এদিকে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়িমসির কারণে ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি খাল খননের বিকল্প নেই। পরে ধাপে ধাপে অন্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে।
জেরিনা হোসেন
স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ
জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশদ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিশদ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এতে ধাপে ধাপে বিভিন্ন খালে স্লুইস গেট নির্মাণ, নতুন দুটি খাল খনন, নালা সংস্কার করাসহ অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের মধ্যে এসব বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু কিছুই করা হয়নি।
পাহাড় ও সমুদ্রে ঘেরা চট্টগ্রাম নগরের কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে পাহাড়ি ঢল নামে। বৃষ্টি বেশি হয়। জোয়ারের পানি ঢোকে। কিন্তু আমাদের পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা এত পানি ধারণ করতে পারে না। কারণ নালা অপর্যাপ্ত। এসব কারণে জলাবদ্ধতা হয়। পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বালু ও মাটি নেমে নালা ও খাল ভরাট হয়ে যায়। এগুলো নিয়মিত সংস্কার করা দরকার।
স্থায়ী সমাধানের জন্য ৯৫ সালে প্রণীত বিশদ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা জরুরি। ওই পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। জোয়ারের পানি থেকে শহর রক্ষার জন্য স্লুইস গেটের ডিজাইন করা ছিল। প্রস্তাব ছিল খাল খননের। এ ছাড়া হ্রদ নির্মাণ, নালা ও খাল বড় করার কথা বলা হয়েছিল। পাশাপাশি খাল অবৈধ দখলমুক্ত করার কথাও ছিল। এগুলো করা গেলে নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেত। তবে বিশদ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একা সিটি করপোরেশনের পক্ষেও সম্ভব নয়। এ জন্য অন্যান্য সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। করপোরেশনের এত টাকাও নেই। এ ছাড়া নাগরিক হিসেবেও আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমরা নালা-নর্দমায় পলিথিন, ময়লা-আবর্জনা ফেলি, গৃহস্থালির ময়লা ফেলি। এটাও জলাবদ্ধতার কারণ।
অনুলিখন: একরামুল হক, প্রণব বল ও মিঠুন চৌধুরী
ছবি: রাশেদ মাহমুদ
No comments