গ্যালাক্সির সদরে-অন্দরে!

ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি আসলে কী? এদের গঠন আর বৈশিষ্ট্যই বা কেমন? কীভাবে পৃথিবীতে থেকেই বিজ্ঞানীরা দূর-দূরান্তের গ্যালাক্সি নিয়ে গবেষণা করেন, এমন অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ৯ জুন, শনিবার ঢাকার পলাশী মোড়ের ফ্রেপড অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি আর অনুসন্ধিৎসু চক্রের আয়োজিত সেমিনারে আলোচনা


করেন সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন শুভ। প্রথমেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে সেমিনারের বিষয়বস্তু ও বক্তার সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেন। সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে অবস্থিত সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স অ্যান্ড সুপার কম্পিউটিংয়ে পিএইচডি গবেষক হিসেবে আছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যন্ত্রকৌশলে বিএসসি ডিগ্রি লাভের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এবং সুইডেনের চালমার্স ইউনিভার্সিটি থেকে বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের প্রাচীনতম শাখাগুলোর একটি। সে হিসেবে মহাবিশ্বের গঠনের প্রাথমিক কাঠামো গ্যালাক্সির ধারণা বেশ আধুনিক বলা যায়। তাই সেমিনারের শুরুতেই তিনি মহাবিশ্ব ও এর গঠনের ব্যাপারে মানুষের ধারণাগুলো কীভাবে গড়ে উঠেছে আর বিবর্তিত হয়েছে তা নিয়ে বলেন। গ্যালাক্সি বলতে মূলত অসংখ্য তারা, তারাস্তবক, আন্তনাক্ষত্রিক মেঘ ও ধূলিকণার মহাকর্ষীয় ব্যবস্থাকে বোঝায়। অতীতে দ্বীপবিশ্ব বলে ভ্রম হলেও গ্যালাক্সিসমূহের স্বরূপ এখন অনেকাংশেই উন্মোচিত হয়েছে। মহাবিশ্বে নানা ধরনের গ্যালাক্সি দেখা যায়। আকৃতিগতভাবে যেমন এরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত, তেমনি এদের আচরণগত বৈশিষ্ট্যও বৈচিত্র্যময়। আমরা যে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে আছি, এটি একটি কুণ্ডলাকার গ্যালাক্সি, যার কেন্দ্র থেকে বেশ দূরে আমাদের সৌরজগতের অবস্থান। গ্যালাক্সির উপাদান বিশ্লেষণ করে এর বয়স সম্পর্কে ধারণা করেন এ নিয়ে কর্মরত গবেষকেরা। তা থেকে দেখা যায় যে কিছু গ্যালাক্সি সৃষ্টি হয়েছে মহাবিশ্বের জন্মের কাছাকাছি সময়ে। আবার কিছু গ্যালাক্সি একেবারেই নতুন।
বিশ্বজগতে প্রায় ১০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে, যার অধিকাংশই স্তবকাকারে থাকে। এভাবে স্থানীয় স্তবক থেকে মহাস্তবক ও মহাজাগতিক কাঠামো তৈরি হয়। বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে দৃশ্য-উপযোগী দুরবিনের ব্যবহার করা হলেও গ্যালাক্সিসমূহের অধিকাংশই অদৃশ্যমান। এসব অদৃশ্য বা কৃষ্ণবস্তু গ্যালাক্সিসমূহের বিভিন্ন অংশের ঘূর্ণন বেগের পার্থক্য থেকে শনাক্ত করা হয়েছে। আবার গ্যালাক্সির কেন্দ্রের আশপাশের তারাগুলোর গতিবিধি থেকে শনাক্ত করা হয় যেসব গ্যালাক্সির কেন্দ্রেই একটি অতিভারী কৃষ্ণবিবর রয়েছে। গ্যালাক্সিসংক্রান্ত এসব মৌলিক ধারণা থেকে শুরু করে একেবারে সামপ্রতিক গবেষণার বিষয়বস্তু পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই আলোচনা করা হয়। পুরো আলোচনায় নানা রকম বিষয়োপযোগী গ্রাফ, ছবি, অ্যানিমেশন ও ভিডিও ব্যবহারের জন্য বিকেল পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী এই সেমিনারে উপস্থিত বিভিন্ন শিক্ষাস্তরের স্রোতারা সবাই গ্যালাক্সির দুর্বোধ্য বিষয়গুলো সহজেই বুঝতে পারে। সবশেষে আলোচনার বিষয়ের ওপর প্রশ্নোত্তর পর্ব ও শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে সেমিনার শেষ হয়।
সৈয়দা লামমীম আহাদ

No comments

Powered by Blogger.