এই দিনে-কেটে গেল ছাপ্পান্নটি বছর by মৃদুলা ভট্টাচার্য
সমাজের নিম্নবিত্ত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মহান আদর্শ নিয়ে ১৯৫৬ সালের ১ জুলাই বাংলাবাজার গার্লস স্কুলে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ কলেজটির ৫৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। পাঁচ-ছয়জন তরুণ নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষাবিদের উদ্যোগ ও আগ্রহে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল
হকের সক্রিয় সাহায্য ও সহযোগিতায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জন্ম হয়। ইংরেজি সাহিত্যের প্রথিতযশা অধ্যাপক আবদুল মতিন ও তাঁর সুযোগ্য পত্নী বেগজাদী মাহমুদা নাসিরের সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ আজিজুল হক, বেগম আফিফা হক, তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী এম এন হুদা, বেগম কুলসুম হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ফাতেমা সাদেক ও কলেজের উপাধ্যক্ষ রোকেয়া খাতুন। তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টায় যাত্রা শুরু করে নবীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
বেগজাদী মাহমুদা নাসির অধ্যক্ষের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন। উল্লেখ্য, শেরেবাংলা ফজলুল হক এই কলেজের প্রথম অর্গানাইজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ আড়াই বছর সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য একনিষ্ঠচিত্তে পালন করেন। অর্গানাইজিং কমিটির প্রথম দিকের বেশ কিছু সভা বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের তহবিলে প্রথমে ১৬ হাজার টাকা দান করেন শেরেবাংলা এবং ১০ হাজার টাকা দান করেন পাকিস্তানের বিখ্যাত ব্যবসায়ী আদমজী। বাংলাবাজার স্কুল থেকে শক্তি ঔষধালয় ভবন, ওয়াইজঘাটের রায় বাহাদুর পঙ্কজ ঘোষের বাড়ি থেকে ১৯৬০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ফরাশগঞ্জের লালকুঠি পরিভ্রমণ করে কলেজটি ১৯৬৬ সালে নিজস্ব একটি জায়গা ক্রয় করতে সমর্থ হয়। জায়গাটি হলো অভয় দাস লেনে। জায়গার পরিমাণ ৩ দশমিক ২৫ একর। ১৯৬৬ সালের ১ নভেম্বর এই জায়গায় স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ। আগেই বলেছি, বেগজাদী মাহমুদা নাসির হলেন কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ। ১৯৫৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত একটানা ৩৬ বছর কঠোর আদর্শ ও নীতি অবলম্বন করে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আবদুল মতিন ছিলেন জগন্নাথ কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক। অনন্যসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তাঁর পাঠদান-পদ্ধতি, পাঠ্যসূচিবহির্ভূত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা এতই আকর্ষণীয় ছিল যে, যাঁরা তাঁর সান্নিধ্যে একবার এসেছেন, তাঁরাই শ্রদ্ধায় অবনত হয়েছেন। এ ছাড়া এই কলেজে অধ্যক্ষ বেগজাদী মাহমুদা নাসির প্রচলন করেন গাইডেন্স কাউন্সেলিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ছাত্রীদের কয়েকটি শাখায় ভাগ করে নিয়ে একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয়। তিনি কখনো ব্যক্তিগতভাবে, কখনো সম্মিলিতভাবে ছাত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর ফলে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান সহজতর হয়। এ ছাড়া পাঠ্যসূচিবহির্ভূত শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়। আগামী দিনের কবি-সাহিত্যিক সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলা বিভাগের সহায়তায় কলেজের ‘সাহিত্যচক্রে’র জন্ম। কলেজ ম্যাগাজিন কাকলী ত্রৈমাসিকভাবে দেয়ালপত্রিকায় এবং পাক্ষিক ও বার্ষিক সংখ্যায় আত্মপ্রকাশ করে। বিজ্ঞান ক্লাবের নাম হচ্ছে এন ড্রোমিডা।
এই কলেজের রয়েছে একটি চমৎকার কলেজ-সংগীত। এই সংগীতটি রচনা ও সুরারোপ করেছেন প্রয়াত অধ্যাপক আবদুল মতিন। এসেম্বলিতে এটি গাওয়া হয়; প্রতিটি অনুষ্ঠান শেষ হয় এই গানটি দিয়ে। অধ্যক্ষ বেগজাদী মাহমুদা নাসির কলেজে মাদারস ডে বা মা দিবসেরও সূত্রপাত করেছিলেন।
বেগজাদী আপা কলেজের ২৫ বছর পূর্তিতে একটি লেখা লিখেছিলেন। তারই কিছু অংশ এখানে তুলে ধরছি: ‘প্রতিষ্ঠালগ্নে যাঁরা এর পেছনে সক্রিয় ছিলেন, এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা আমাদের মধ্যে এখানে আছেন, তাঁদের সামনে আজকের এই কলেজ, এই প্রতিষ্ঠান জীবনের তৃপ্তি ও স্বীকৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের জীবনে এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। তাই এই একটুখানি আয়োজন ছাত্রীদের, যাঁরা কেউ কেউ আমাদের সহকর্মী, কেউ আজ সংসারের গৃহিণী, কেউ বা ব্যবসা পরিচালনায় নিয়োজিত—এমনই নানা দিকে সফলতার সঙ্গে ছড়িয়ে আছেন। পেছন থেকে তাঁদের এসব আয়োজনে সাহায্য রয়েছে তাঁদের শিক্ষক ও আরও শিক্ষাব্রতী—যাঁরা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক হয়ে আছেন। আমাদের শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে যাঁরা আজ আমাদের মধ্যে জীবিত নেই, শ্রদ্ধাভরে তাঁদের স্মরণ করছি। যাঁরা আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন, আমাদের সঙ্গে, তাঁদের আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম।’
ব্যতিক্রমী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ৩০ জুন অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল স্মৃতিচারণা। এদিন বেগজাদী মাহমুদা নাসিরকে সম্মাননা দেওয়া হয়। আজও রয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। জয়তু সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ।
মৃদুলা ভট্টাচার্য
বাংলা বিভাগ, সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ।
বেগজাদী মাহমুদা নাসির অধ্যক্ষের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন। উল্লেখ্য, শেরেবাংলা ফজলুল হক এই কলেজের প্রথম অর্গানাইজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ আড়াই বছর সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য একনিষ্ঠচিত্তে পালন করেন। অর্গানাইজিং কমিটির প্রথম দিকের বেশ কিছু সভা বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের তহবিলে প্রথমে ১৬ হাজার টাকা দান করেন শেরেবাংলা এবং ১০ হাজার টাকা দান করেন পাকিস্তানের বিখ্যাত ব্যবসায়ী আদমজী। বাংলাবাজার স্কুল থেকে শক্তি ঔষধালয় ভবন, ওয়াইজঘাটের রায় বাহাদুর পঙ্কজ ঘোষের বাড়ি থেকে ১৯৬০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ফরাশগঞ্জের লালকুঠি পরিভ্রমণ করে কলেজটি ১৯৬৬ সালে নিজস্ব একটি জায়গা ক্রয় করতে সমর্থ হয়। জায়গাটি হলো অভয় দাস লেনে। জায়গার পরিমাণ ৩ দশমিক ২৫ একর। ১৯৬৬ সালের ১ নভেম্বর এই জায়গায় স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ। আগেই বলেছি, বেগজাদী মাহমুদা নাসির হলেন কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ। ১৯৫৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত একটানা ৩৬ বছর কঠোর আদর্শ ও নীতি অবলম্বন করে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আবদুল মতিন ছিলেন জগন্নাথ কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক। অনন্যসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তাঁর পাঠদান-পদ্ধতি, পাঠ্যসূচিবহির্ভূত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা এতই আকর্ষণীয় ছিল যে, যাঁরা তাঁর সান্নিধ্যে একবার এসেছেন, তাঁরাই শ্রদ্ধায় অবনত হয়েছেন। এ ছাড়া এই কলেজে অধ্যক্ষ বেগজাদী মাহমুদা নাসির প্রচলন করেন গাইডেন্স কাউন্সেলিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ছাত্রীদের কয়েকটি শাখায় ভাগ করে নিয়ে একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয়। তিনি কখনো ব্যক্তিগতভাবে, কখনো সম্মিলিতভাবে ছাত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর ফলে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান সহজতর হয়। এ ছাড়া পাঠ্যসূচিবহির্ভূত শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়। আগামী দিনের কবি-সাহিত্যিক সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলা বিভাগের সহায়তায় কলেজের ‘সাহিত্যচক্রে’র জন্ম। কলেজ ম্যাগাজিন কাকলী ত্রৈমাসিকভাবে দেয়ালপত্রিকায় এবং পাক্ষিক ও বার্ষিক সংখ্যায় আত্মপ্রকাশ করে। বিজ্ঞান ক্লাবের নাম হচ্ছে এন ড্রোমিডা।
এই কলেজের রয়েছে একটি চমৎকার কলেজ-সংগীত। এই সংগীতটি রচনা ও সুরারোপ করেছেন প্রয়াত অধ্যাপক আবদুল মতিন। এসেম্বলিতে এটি গাওয়া হয়; প্রতিটি অনুষ্ঠান শেষ হয় এই গানটি দিয়ে। অধ্যক্ষ বেগজাদী মাহমুদা নাসির কলেজে মাদারস ডে বা মা দিবসেরও সূত্রপাত করেছিলেন।
বেগজাদী আপা কলেজের ২৫ বছর পূর্তিতে একটি লেখা লিখেছিলেন। তারই কিছু অংশ এখানে তুলে ধরছি: ‘প্রতিষ্ঠালগ্নে যাঁরা এর পেছনে সক্রিয় ছিলেন, এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা আমাদের মধ্যে এখানে আছেন, তাঁদের সামনে আজকের এই কলেজ, এই প্রতিষ্ঠান জীবনের তৃপ্তি ও স্বীকৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের জীবনে এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। তাই এই একটুখানি আয়োজন ছাত্রীদের, যাঁরা কেউ কেউ আমাদের সহকর্মী, কেউ আজ সংসারের গৃহিণী, কেউ বা ব্যবসা পরিচালনায় নিয়োজিত—এমনই নানা দিকে সফলতার সঙ্গে ছড়িয়ে আছেন। পেছন থেকে তাঁদের এসব আয়োজনে সাহায্য রয়েছে তাঁদের শিক্ষক ও আরও শিক্ষাব্রতী—যাঁরা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক হয়ে আছেন। আমাদের শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে যাঁরা আজ আমাদের মধ্যে জীবিত নেই, শ্রদ্ধাভরে তাঁদের স্মরণ করছি। যাঁরা আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন, আমাদের সঙ্গে, তাঁদের আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম।’
ব্যতিক্রমী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ৩০ জুন অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল স্মৃতিচারণা। এদিন বেগজাদী মাহমুদা নাসিরকে সম্মাননা দেওয়া হয়। আজও রয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। জয়তু সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ।
মৃদুলা ভট্টাচার্য
বাংলা বিভাগ, সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ।
No comments