দিশারিদের রক্ষার কি কেউ নেই?-আরিফাদের সংগ্রাম

আরিফা নিজ গ্রাম ও পরিবার থেকে নির্বাসিত। এইটুকু একটি মেয়ে যত বড় কাজ করেছে, তার জন্য ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ ধাওয়া করছে তাকে। নিজ গ্রামকে মাদকমুক্ত করার জন্য সংগঠন করেছে সে, জনপ্রতিনিধিদের বাধ্য করেছে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে।


যে কাজ সমাজের অভিভাবক ও প্রশাসনের করার কথা, তাদের গাফিলতিতে আরিফা নিজে সেই দায়িত্ব নিয়েছে। এখন প্রাণের ভয়ে যখন সে সরকারি সেফ হোমে কার্যত অন্তরীণ, তখনো কি তার জীবনের নিরাপত্তা দিতে তারা এগিয়ে আসবে না?
রাজশাহীর তানোর উপজেলার নোনাপুকুর গ্রামের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী আরিফা বছর খানেক আগে গড়ে তুলেছিল ‘নোনাপুকুর মাদকবিরোধী গণগবেষণা দল’। এই স্বেচ্ছাসেবী দলের সদস্যরা সবাই কিশোর-কিশোরী। গ্রামকে মাদকমুক্ত করার শপথ তাদের। তাদের গ্রামে ৭০টি পরিবারের ২২টি চোলাই মদ তৈরি এবং আরও ২৮টি পরিবার মাদক সেবন, বিপণন এবং গাঁজা ও হেরোইন বিক্রির সঙ্গে জড়িত। যে গ্রামের বেশির ভাগ পরিবারই অভাবের তাড়নায় মাদক ব্যবসায় জড়িত, সেই গ্রামের আশা থাকার কথা নয়। এ রকম অবস্থায় গ্রামের কিশোর-কিশোরীদের নেতা আরিফাই উঠে দাঁড়াল, রুখে দাঁড়াল। কঠিন হয়ে গেল মাদক ব্যবসা। আরিফাকে শাস্তি দিতে তখন হাজির হলো মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী আমিনুল। আরিফাকে পালাতে হলো, আশ্রয় নিতে হলো রাজশাহীর মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিরাপদ নিবাসে (সেফ হোম)। আরিফা যখন নির্বাসিত, তখন সন্ত্রাসী আমিনুল কিন্তু মুক্ত ও উদ্ধত। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে না।
আরিফার ঘটনায় মনে পড়ে, চট্টগ্রাম শহরের তরুণ সংগ্রামী হিমাদ্রীর করুণ পরিণতির কথা। মাদকবিরোধী আন্দোলন করার অপরাধে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ধনবান পরিবারের সন্তান হওয়ায় পালিয়ে বাঁচে হিমাদ্রীর হত্যাকারীরা। পুলিশের গাফিলতিতে আরিফারও তেমন পরিণতির আশঙ্কা অমূলক নয়।
যেখানে পুলিশ ব্যর্থ, সমাজপতি ও প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা ব্যর্থ; সেখানে আরিফা এক উজ্জ্বল সাফল্যের নাম। আরিফা পথপ্রদর্শক। পথপ্রদর্শকদের রক্ষা করুন, নিরাপত্তা দিন, মাদকের হোতা আমিনুলকে গ্রেপ্তার করুন। পুলিশ-প্রশাসন ক্ষমতার মাদকে আচ্ছন্ন হয়ে কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে আরিফার যেকোনো ক্ষতির দায় তাদেরই নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.