শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ-বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ চাই
আদেশগুলোকে কোনো অর্থেই অন্যায্য বলা যাবে না। বরং শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল প্রার্থিতও বটে। বর্তমান মেয়াদে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সফলতার তালিকা দীর্ঘ। শিক্ষানীতির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুনভাবে বিন্যস্ত করার যে চেষ্টা চলছে, তা অনেকের প্রশংসা অর্জন করেছে।
সরকারি বই বিতরণসহ সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বহু ক্ষেত্রে নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্র যে এখনও সংস্কার দাবি করে_ তা বলাই বাহুল্য। শিক্ষা ব্যবস্থাকে সঠিক খাতে ফিরিয়ে এনে, শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে ছোট-বড় অনেক কাজ করতে হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাজগুলো কি সম্ভব হবে? সদিচ্ছা থাকলেও বাস্তবায়িত হবে অবশ্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তগুলো? প্রশ্নগুলো উঠছে। কেননা, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। যাদের প্রতি নির্দেশ, তারা সেগুলোকে উপেক্ষা করেছেন। আর উপেক্ষা করেও বহাল তবিয়তে থাকতে পারছেন। মন্ত্রণালয়ের তরফে নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা আসছে না। এমন নয় যে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে এড়িয়ে মন্ত্রণালয় একতরফা নির্দেশনা জারি করেছে। এমনকি এ নির্দেশনা পালন খুব কঠিনও নয়। শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এগুলো পালিত হওয়া উচিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ছাত্রছাত্রী ভর্তির সময় স্কুলগুলোর অতিরিক্ত ফি আদায়ের কথা। স্কুলগুলো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে যে হারে এবং যেভাবে বাড়তি টাকা আদায় করেছে, তা শুধু উদ্বেগজনক নয়; দুর্নীতি ও অন্যায়ও বটে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় নির্দেশ জারি করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, অতিরিক্ত টাকা যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয় অথবা বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। কার্যত নির্দেশ মানেনি স্কুলগুলো। অভিভাবকরাও অভিযোগ করেননি কোনো স্কুলের বিরুদ্ধে। সচেতনতার অভাব রয়েছে; আবার প্রতিবাদহীন থাকার রূঢ় বাস্তবতাও রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তরফে কর্তব্য হলো, সামনের বছরের ভর্তি পরীক্ষার সময় কঠোর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করা। অতিরিক্ত ফি আদায়কারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। অনুমতি ছাড়া স্কুল-কলেজের শাখার ক্ষেত্রেও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই খুঁটির জোর মন্ত্রণালয়কে উপেক্ষা করার সাহস জুগিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কি কখনও কঠোর মনোভাবাপন্ন হয়েছে? অনুমতিহীন শাখাগুলো বন্ধ বা স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে? শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন বন্ধে দায়ী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা দরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধের নির্দেশনা জারি হলেও বন্ধ হয়নি। আউটার ক্যাম্পাস শুধু নয়, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসেই পড়াশোনার বালাই নেই। ছোট ভবনে যেনতেনভাবে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। এসব ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপের বিকল্প কী? অশিক্ষা-কুশিক্ষা থেকে পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচানোর দায়িত্ব তো সরকারের। কোচিং বিষয়ে মন্ত্রণালয় যে নীতিমালা করেছে, শিক্ষকদের তরফে তাকে প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই। কেননা, এতে তাদের স্বার্থও যথেষ্ট সংরক্ষিত হয়েছে। পুরোপুরি বন্ধের সুপারিশ না করে বরং খানিকটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা তাতে প্রস্তাবিত হয়েছে। সার্বিক কল্যাণের স্বার্থ দেখলে কোচিং ধীরে ধীরে বন্ধ হওয়াই শ্রেয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পালনযোগ্য নির্দেশ শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মানছেন না_ তা দুঃখজনক। যে অতিরিক্ত ব্যয়গুলো শিক্ষাকে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে, তা কমাতেই হবে। আর এক্ষেত্রে শিক্ষকদের নিতে হবে একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা। সরকারের তরফে শিক্ষকদের স্বার্থ দেখে পর্যায়ক্রমে নীতিমালা বাস্তবায়ন করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। আমরা মনে করি, সুন্দর নীতিমালা, প্রয়োজনীয় আদেশ, জনস্বার্থে নির্দেশনা জারি করাটাই যথেষ্ট নয়। মন্ত্রণালয়ের তরফে সেগুলো বাস্তবায়নে তাগাদা দিতে হবে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে গেড়ে বসা অনিয়ম, দুর্নীতি রোধ করায় এটি জরুরিও।
No comments