আম পাকানো নিয়ে দুর্বিপাক by ডা. এ আর এম সাইফুদ্দীন একরাম
সেকালে বারো মাস আম পাওয়া যেত না। শোনা যায় গৌড়ের এক সুলতান শীতকালে উজিরকে ডেকে বললেন, 'শুনেছি গৌড়ে আম নামে এক সুমিষ্ট ফল পাওয়া যায়। আমাকে অবিলম্বে এই ফল খাওয়াও।' শীতকালে আম খাওয়ানোর হুকুম শুনে উজিরের তো মাথায় হাত। মহাদুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি।
উজিরের অস্থিরতা দেখে তাঁর কন্যা দুশ্চিন্তার কারণ জানতে চাইলেন। সব শুনে কন্যা তাঁকে কিছু পরামর্শ দিলেন। পরদিন উজির হাসিমুখে দরবারে হাজির হওয়ামাত্র সুলতান বললেন, 'উজির তুমি কি আমার জন্য আম এনেছ?' উজির মাথা নিচু করে বললেন, 'সুলতান, বান্দার অপরাধ মাফ করবেন। এই অসময়ে আমি আপনার জন্য আম সংগ্রহ করতে পারিনি; কিন্তু আমের স্বাদ কেমন আপনাকে তা বোঝানোর একটি উপায় বের করেছি।' এরপর উজির তাঁর লম্বা দাড়িতে কিছু চিটাগুড় এবং তেঁতুলের রস মাখিয়ে সুলতানের সামনে এগিয়ে তা লেহন করার আহ্বান জানালেন। সুলতান পরম আগ্রহভরে তা করলেন। সভাসদরা সুলতানকে জিজ্ঞেস করলেন, 'আমের স্বাদ কেমন বুঝলেন হুজুর?' জবাবে সুলতান জানালেন, 'বুঝলাম আম সুমিষ্ট রসালো ফল। তবে ঈষৎ টক এবং আঁশযুক্ত।' সেই সুলতানও নেই, সেই গৌড়ও নেই; কিন্তু এখনো প্রচুর আম ফলে এবং তা দেশে-বিদেশে আমের ভক্তদের রসনা পরিতৃপ্ত করে।
এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। এখন গোল বেধেছে আম পাকানো নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে, এই আম পাকানোর জন্য বোমা বানানোর মসলা এবং ওয়েল্ডিং বা ঝালাইয়ের ক্যালসিয়াম কার্বাইড (সংক্ষেপে কার্বাইড) ব্যবহার করা হয়। এই দুষ্কর্মটি শুধু আমের বেলায় নয়, আরো অনেক ফল যেমন- কলা, নাশপাতি, জাম, আনারস ইত্যাদির ক্ষেত্রেও করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশেই ফল পাকানোর জন্য কার্বাইড এবং এ-জাতীয় অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে আলোচনার আগে ফল পাকা সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোচনা করা প্রয়োজন। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, কাঁচা একটি আম পাকলে যে আকর্ষণীয় হলুদ রসালো মিষ্টি খাদ্যবস্তুতে পরিণত হয়, তার রহস্যটি কী? অধিকাংশ ফল পাকার পর মিষ্টি হয়; সবুজ বর্ণ পরিবর্তিত হয়ে হলুদাভ রং ধারণ করে এবং নরম হয়। ফল পাকার এই পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে ইথিলিন নামের গ্যাসীয় উদ্ভিদ হরমোন। এই হরমোনটি ফল পাকার জন্য দায়ী কতগুলো এনজাইমের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণকারী জিনের প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করে। এসব এনজাইমের প্রভাবে, বিশেষ করে অ্যামাইলেজ নামের এনজাইমের প্রভাবে ফলের ত্বক নরম হয়। ফলের জটিল শর্করা বিশ্লিষ্ট হয়ে সরল চিনি তৈরি হয়। হাইড্রোলেজ এনজাইম ক্লোরোফিল ভেঙে অ্যানথোসায়ানিন তৈরি করে। অ্যানথোসায়ানিনের কারণে পাকা ফল হলুদ, কমলা কিংবা লালাভ হয়। পাকার সময় পেকটিনেজ এনজাইম সক্রিয় হওয়ার কারণে পেকটিনের পরিমাণ কমে যায় এবং সে কারণেও ফল নরম হয়। হাইড্রোলেজ এনজাইমের সাহায্যে ফলের বিভিন্ন জৈব উপাদান ও অ্যারোম্যাটিক যৌগ উৎপন্ন হওয়ার কারণে পাকা ফল থেকে বিশেষ সুগন্ধ ছড়ায়।
ফল পাকানোর হরমোন সম্পর্কে জানা না থাকলেও মানুষ কিন্তু হাজার বছর ধরে ফল পাকানোর নানা রকম কৌশল প্রয়োগ করে আসছে। যেমন, অতীতে মিসরের কৃষকরা ডুমুর ফলকে মাঝখানে ফেড়ে দিত। এর ফলে ডুমুর তাড়াতাড়ি পাকে। কাঁচা ফলকে আঘাত করলেও তা দ্রুত পাকে। চীনে প্রাচীনকালে কাঁচা নাশপাতি একটি বদ্ধ কক্ষে রেখে সুগন্ধিদ্রব্য পোড়ানো হতো। এর ফলে নাশপাতি সহজে পেকে যেত। জীবাণুযুক্ত কিংবা ছত্রাক সংক্রমিত ফল পাশের অক্ষত ফলগুলো পাকতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়।
অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি দেখা গেল, পথের ধারের কোনো গাছের কাণ্ড অস্বাভাবিকভাবে বেঁকে যায়। পরে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখা গেল পথের বাতির পাশের গাছগুলোর বেলায়ই এমন ঘটেছে। ১৯০১ সালে বিজ্ঞানী দিমিত্রি নেলজুবো আবিষ্কার করলেন, গাছের কাণ্ডের এমন অবাক কাণ্ডের কারণ আর কিছুই নয়- অতিপরিচিত রাসায়নিক পদার্থ ইথিলিন। ১৯১৩ সালে আবিষ্কৃত হয়, উদ্ভিদের ইথিলিন তৈরির নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। উচ্চ শ্রেণীর উদ্ভিদেরও কাণ্ড, মূল, পাতা, ফুল, ফলসহ সব অংশেরই ইথিলিন তৈরির ক্ষমতা রয়েছে। সাধারণত ফল পাকার মৌসুমে এবং পাতা ঝরে যাওয়ার সময়ে ইথিলিন তৈরির পরিমাণ বেড়ে যায়। এখন জানা গেছে, ফলের ইথিলিন তৈরির পরিমাণ কৃত্রিম উপায়ে বাড়ানো সম্ভব। যেমন ফলে আঘাত করলেও অতিরিক্ত ইথিলিন তৈরি হয়। এ ছাড়া অনেক রাসায়নিক উপাদানের সাহায্যেও ইথিলিন তৈরি বাড়ানো যায়। সুতরাং ইথিলিন তৈরি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ফলকে ইচ্ছামতো কাঁচা রাখা বা পাকানো যেতে পারে। ইথিলিন কৃত্রিম উপায়ে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়। পৃথিবীতে সর্বাধিক উৎপাদিত জৈব যৌগগুলোর মধ্যে ইথিলিন একটি। বিশ্বের ফল ব্যবসায়ীরা তাঁদের অভাবনীয় সাফল্যের জন্য ইথিলিনের ওপর নির্ভরশীল। কারণ পাকা ফল জাহাজে কিংবা বিমানে এক দেশ থেকে আরেক দেশে রপ্তানি করা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রে লাতিন আমেরিকা কিংবা আফ্রিকা থেকে আমদানি করা কলা পাকানোর পরে বাজারজাত করা হয়। অনেক সময় ইথিলিন গ্যাস উৎপন্ন করার সুবিধার্থে অনুঘটক উৎপাদক ব্যবহার করা হয়। এর ফলে ফল পাকানোর কক্ষে নির্দিষ্ট মাত্রার ইথিলিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। সাধারণত সঠিকভাবে ফল পাকানোর জন্য ৫০০ থেকে ২০০০ পিপিএম ইথিলিন ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা ব্যবহার করা হয়।
সাধারণত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে আম পাকানোর জন্য এর সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড (Ca C2) ধূসর কালো দানাদার রসুনের গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ। ইস্পাত কারখানায়, ধাতব বস্তু কাটাকাটি, ওয়েল্ডিংয়ে ব্যবহৃত অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরির জন্য এটা ব্যবহার করা হয়। যেসব রাসায়নিক উপাদান জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি বহন করে সে তালিকায় ক্যালসিয়াম কার্বাইড অন্তর্ভুক্ত। বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ক্যালসিয়াম কার্বাইড বিশুদ্ধ নয়। এর সঙ্গে আর্সেনিক ও ফসফরাস মিশ্রিত থাকায় মানব স্বাস্থ্যের জন্য এটা আরো ক্ষতিকর। এ জন্য ফল পাকানোর কাজে অধিকাংশ দেশে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ইদানীং জানা যাচ্ছে আম, কলা, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে এবং অন্য অনেক ফল পাকানোর কাজে কার্বাইড ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফল ও সবজিতে আরো নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান থাকার আশঙ্কা রয়েছে। বালাইনাশক ও কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ অনেক ফল ও সবজির মধ্যে রয়ে যায়। সার ও সেচকাজে ব্যবহৃত পানিতে ভারী ধাতু থাকার আশঙ্কাও কম নয়। এ ছাড়া শস্যের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেও নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ যেমন- আফলাটক্সিন, প্যাটুলিন, ওকরা টক্সিন ইত্যাদিও অনেক ফল ও সবজিতে থাকতে পারে। এসব বিষাক্ত দ্রব্য মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কোনো কোনো কীটনাশক যকৃৎ, কিডনি ও ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে, এমনকি এরা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্যও দায়ী হতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ও বিভাগীয় প্রধান,
মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী
armsekram@yahoo.com
এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। এখন গোল বেধেছে আম পাকানো নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে, এই আম পাকানোর জন্য বোমা বানানোর মসলা এবং ওয়েল্ডিং বা ঝালাইয়ের ক্যালসিয়াম কার্বাইড (সংক্ষেপে কার্বাইড) ব্যবহার করা হয়। এই দুষ্কর্মটি শুধু আমের বেলায় নয়, আরো অনেক ফল যেমন- কলা, নাশপাতি, জাম, আনারস ইত্যাদির ক্ষেত্রেও করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশেই ফল পাকানোর জন্য কার্বাইড এবং এ-জাতীয় অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে আলোচনার আগে ফল পাকা সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোচনা করা প্রয়োজন। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, কাঁচা একটি আম পাকলে যে আকর্ষণীয় হলুদ রসালো মিষ্টি খাদ্যবস্তুতে পরিণত হয়, তার রহস্যটি কী? অধিকাংশ ফল পাকার পর মিষ্টি হয়; সবুজ বর্ণ পরিবর্তিত হয়ে হলুদাভ রং ধারণ করে এবং নরম হয়। ফল পাকার এই পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে ইথিলিন নামের গ্যাসীয় উদ্ভিদ হরমোন। এই হরমোনটি ফল পাকার জন্য দায়ী কতগুলো এনজাইমের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণকারী জিনের প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করে। এসব এনজাইমের প্রভাবে, বিশেষ করে অ্যামাইলেজ নামের এনজাইমের প্রভাবে ফলের ত্বক নরম হয়। ফলের জটিল শর্করা বিশ্লিষ্ট হয়ে সরল চিনি তৈরি হয়। হাইড্রোলেজ এনজাইম ক্লোরোফিল ভেঙে অ্যানথোসায়ানিন তৈরি করে। অ্যানথোসায়ানিনের কারণে পাকা ফল হলুদ, কমলা কিংবা লালাভ হয়। পাকার সময় পেকটিনেজ এনজাইম সক্রিয় হওয়ার কারণে পেকটিনের পরিমাণ কমে যায় এবং সে কারণেও ফল নরম হয়। হাইড্রোলেজ এনজাইমের সাহায্যে ফলের বিভিন্ন জৈব উপাদান ও অ্যারোম্যাটিক যৌগ উৎপন্ন হওয়ার কারণে পাকা ফল থেকে বিশেষ সুগন্ধ ছড়ায়।
ফল পাকানোর হরমোন সম্পর্কে জানা না থাকলেও মানুষ কিন্তু হাজার বছর ধরে ফল পাকানোর নানা রকম কৌশল প্রয়োগ করে আসছে। যেমন, অতীতে মিসরের কৃষকরা ডুমুর ফলকে মাঝখানে ফেড়ে দিত। এর ফলে ডুমুর তাড়াতাড়ি পাকে। কাঁচা ফলকে আঘাত করলেও তা দ্রুত পাকে। চীনে প্রাচীনকালে কাঁচা নাশপাতি একটি বদ্ধ কক্ষে রেখে সুগন্ধিদ্রব্য পোড়ানো হতো। এর ফলে নাশপাতি সহজে পেকে যেত। জীবাণুযুক্ত কিংবা ছত্রাক সংক্রমিত ফল পাশের অক্ষত ফলগুলো পাকতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়।
অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি দেখা গেল, পথের ধারের কোনো গাছের কাণ্ড অস্বাভাবিকভাবে বেঁকে যায়। পরে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখা গেল পথের বাতির পাশের গাছগুলোর বেলায়ই এমন ঘটেছে। ১৯০১ সালে বিজ্ঞানী দিমিত্রি নেলজুবো আবিষ্কার করলেন, গাছের কাণ্ডের এমন অবাক কাণ্ডের কারণ আর কিছুই নয়- অতিপরিচিত রাসায়নিক পদার্থ ইথিলিন। ১৯১৩ সালে আবিষ্কৃত হয়, উদ্ভিদের ইথিলিন তৈরির নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। উচ্চ শ্রেণীর উদ্ভিদেরও কাণ্ড, মূল, পাতা, ফুল, ফলসহ সব অংশেরই ইথিলিন তৈরির ক্ষমতা রয়েছে। সাধারণত ফল পাকার মৌসুমে এবং পাতা ঝরে যাওয়ার সময়ে ইথিলিন তৈরির পরিমাণ বেড়ে যায়। এখন জানা গেছে, ফলের ইথিলিন তৈরির পরিমাণ কৃত্রিম উপায়ে বাড়ানো সম্ভব। যেমন ফলে আঘাত করলেও অতিরিক্ত ইথিলিন তৈরি হয়। এ ছাড়া অনেক রাসায়নিক উপাদানের সাহায্যেও ইথিলিন তৈরি বাড়ানো যায়। সুতরাং ইথিলিন তৈরি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ফলকে ইচ্ছামতো কাঁচা রাখা বা পাকানো যেতে পারে। ইথিলিন কৃত্রিম উপায়ে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়। পৃথিবীতে সর্বাধিক উৎপাদিত জৈব যৌগগুলোর মধ্যে ইথিলিন একটি। বিশ্বের ফল ব্যবসায়ীরা তাঁদের অভাবনীয় সাফল্যের জন্য ইথিলিনের ওপর নির্ভরশীল। কারণ পাকা ফল জাহাজে কিংবা বিমানে এক দেশ থেকে আরেক দেশে রপ্তানি করা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রে লাতিন আমেরিকা কিংবা আফ্রিকা থেকে আমদানি করা কলা পাকানোর পরে বাজারজাত করা হয়। অনেক সময় ইথিলিন গ্যাস উৎপন্ন করার সুবিধার্থে অনুঘটক উৎপাদক ব্যবহার করা হয়। এর ফলে ফল পাকানোর কক্ষে নির্দিষ্ট মাত্রার ইথিলিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। সাধারণত সঠিকভাবে ফল পাকানোর জন্য ৫০০ থেকে ২০০০ পিপিএম ইথিলিন ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা ব্যবহার করা হয়।
সাধারণত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে আম পাকানোর জন্য এর সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড (Ca C2) ধূসর কালো দানাদার রসুনের গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ। ইস্পাত কারখানায়, ধাতব বস্তু কাটাকাটি, ওয়েল্ডিংয়ে ব্যবহৃত অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরির জন্য এটা ব্যবহার করা হয়। যেসব রাসায়নিক উপাদান জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি বহন করে সে তালিকায় ক্যালসিয়াম কার্বাইড অন্তর্ভুক্ত। বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ক্যালসিয়াম কার্বাইড বিশুদ্ধ নয়। এর সঙ্গে আর্সেনিক ও ফসফরাস মিশ্রিত থাকায় মানব স্বাস্থ্যের জন্য এটা আরো ক্ষতিকর। এ জন্য ফল পাকানোর কাজে অধিকাংশ দেশে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ইদানীং জানা যাচ্ছে আম, কলা, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে এবং অন্য অনেক ফল পাকানোর কাজে কার্বাইড ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফল ও সবজিতে আরো নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান থাকার আশঙ্কা রয়েছে। বালাইনাশক ও কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ অনেক ফল ও সবজির মধ্যে রয়ে যায়। সার ও সেচকাজে ব্যবহৃত পানিতে ভারী ধাতু থাকার আশঙ্কাও কম নয়। এ ছাড়া শস্যের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেও নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ যেমন- আফলাটক্সিন, প্যাটুলিন, ওকরা টক্সিন ইত্যাদিও অনেক ফল ও সবজিতে থাকতে পারে। এসব বিষাক্ত দ্রব্য মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কোনো কোনো কীটনাশক যকৃৎ, কিডনি ও ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে, এমনকি এরা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্যও দায়ী হতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ও বিভাগীয় প্রধান,
মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী
armsekram@yahoo.com
No comments