বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া-প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত
১৪ মাস ধরে ঋণের মুলো ঝুলিয়ে রাখার পর আচমকা চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক পুরো দেশকে দণ্ডিত করল বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। অনেকে অবশ্য বিশ্বব্যাংককে সন্তুষ্ট করতে না পারার জন্য দায়ী করেছেন সরকারকে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে রবার্ট বি জোয়েলিক তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করলেন গতকাল শনিবার। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, পদ্মা সেতু নিয়ে তাদের তোলা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত আশাব্যঞ্জক নয়। তাই বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলারের ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করার ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য তাদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। গতকাল বাংলানিউজকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'অর্থায়ন বন্ধ করে সরকার এবং দেশের মানুষকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার তাদের নেই। দুর্নীতি হয়ে থাকলে সেখানে তাদেরও দায়িত্ব আছে। অর্থায়ন বন্ধ না করে দুর্নীতির তদন্ত এবং নির্মাণের কাজ একই সঙ্গে চলতে পারত।' তিনি আরো বলেন, একই সঙ্গে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা সরকারের জন্য অগ্নি পরীক্ষা।
বিশ্বব্যাংক এভাবে পিছটান দেবে- বাংলাদেশ সরকারও আশা করেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু রবার্ট জোয়েলিক এমন সিদ্ধান্ত নেবেন, তা ছিল রীতিমতো ভাবনারও বাইরে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিকের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হয়েছে। ১ জুলাই থেকে দায়িত্ব নিচ্ছেন ড. জিম ইয়ং কিম। সম্ভবত কিম একটি চলমান সমস্যার মুখোমুখি হতে চাননি। তাই বিদ্যমান সমস্যা রবার্ট জোয়েলিককেই সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি। সে পরিপ্রেক্ষিতেই জোয়েলিক পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করেন এইচ মনসুর।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, 'একজন ব্যক্তির কথিত অপরাধের জন্য গোটা জাতিকে দণ্ডিত করা যায় না। অপরাধের অভিযোগ যদি সত্যি বলে প্রমাণিতও হয়, তাহলেও এ রকম আচরণ করা বিশ্বব্যাংকের উচিত হয়নি। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের কাছে নীতি-নৈতিকতার আশাও করা যায় না।'
দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তেমন স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। গতকালের আগ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকও তাদের অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। আচমকা গত ২৯ জুন, শুক্রবার ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিমূলক ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তারা ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে দুটি তদন্তের তথ্য-প্রমাণ প্রদান করেছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আকাশ বলেন, 'তাদের কাছে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে তারা তা প্রকাশ করুক। তাদের দুর্নীতির অভিযোগ তো সরকার আমলে নিয়ে কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে। তদন্ত চলছে। প্রকল্পের কাজও তো চলতে পারত। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের জন্য পুরো জাতিকে শাস্তি দেওয়া যায় না।'
কানাডায় এসএনসি লাভালিনের দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেখানকার কর্তৃপক্ষের তদন্তের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বিবৃতিতে বলেছে, তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল। সেগুলো হলো- সরকারের মধ্যে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তদন্তকাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত ছুটি প্রদান, দুদকের অধীনে একটি বিশেষ তদন্তদল নিয়োগ এবং বিশ্বব্যাংেকের নিয়োগ করা একটি প্যানেলের কাছে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সব তথ্যের পূর্ণ ও পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া। এসব শর্তের ব্যাপারে সরকারের সাড়া বিশ্বব্যাংকের কাছে সন্তোষজনক মনে না হওয়ায় তারা ঋণচুক্তি বাতিল করেছে বলে জানায়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তাদের শর্ত আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কারণ জবাবদিহি করতে হয় বড় বড় শেয়ারহোল্ডারের কাছে। সরকার এখন বিকল্প খুঁজতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে ঋণের খরচের দিকটাও দেখতে হবে।'
ড. আহসান এইচ মনসুরও মনে করেন, শর্তগুলো খারাপ ছিল না। সরকার বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর স্বার্থ ত্যাগ করতে পারত। শর্তগুলো মেনে নেওয়া সরকারের উচিত ছিল। কিন্তু সরকার তা করেনি। এতে সরকারই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পদ্মা সেতুতে অর্থ পেতে নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করার পরামর্শ দেন তিনি। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিল করায় সরকার এক বছর পিছিয়ে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বিশ্বব্যাংক কেন গত এক বছর বাংলাদেশের সময় নষ্ট করেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে একটি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা উচিত ছিল। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যেই মতপার্থক্য তৈরি হয়।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাংক একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করতে পারে কি না জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেন, বিশ্বব্যাংক যদি মনে করে অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য, তাহলে তারা চুক্তি বাতিল করতেই পারে। চুক্তি বাতিল ও দেরির কারণে খরচ বাড়লে এর দায়ও সরকারের বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, সরকার রবার্ট জোয়েলিকের মেয়াদ শেষের অপেক্ষা করেছিল। এরপর নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু রবার্ট জোয়েলিক এমন সিদ্ধান্ত নেবেন, তা কেউ ভাবতে পারেনি। কারণ পাঁচটি শর্তের মধ্যে তিনটি বাংলাদেশ মেনে নিয়েছে- এমন একটি চিঠি গত মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকে পাঠিয়েছিল সরকার। মাত্র চার দিনের মধ্যেই বিশ্বব্যাংক এমন একটি সিদ্ধান্ত নেবে, তা সরকার আশা করেনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতুতে সমন্বয়কারীর ভূমিকায় ছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে দেওয়ায় বাকি তিনটি সংস্থাও নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে এ তিন সংস্থার কোনো একটি সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী হয়, তাহলে নতুন করে ঋণচুক্তি করতে হবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করার ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য তাদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। গতকাল বাংলানিউজকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'অর্থায়ন বন্ধ করে সরকার এবং দেশের মানুষকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার তাদের নেই। দুর্নীতি হয়ে থাকলে সেখানে তাদেরও দায়িত্ব আছে। অর্থায়ন বন্ধ না করে দুর্নীতির তদন্ত এবং নির্মাণের কাজ একই সঙ্গে চলতে পারত।' তিনি আরো বলেন, একই সঙ্গে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা সরকারের জন্য অগ্নি পরীক্ষা।
বিশ্বব্যাংক এভাবে পিছটান দেবে- বাংলাদেশ সরকারও আশা করেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু রবার্ট জোয়েলিক এমন সিদ্ধান্ত নেবেন, তা ছিল রীতিমতো ভাবনারও বাইরে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিকের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হয়েছে। ১ জুলাই থেকে দায়িত্ব নিচ্ছেন ড. জিম ইয়ং কিম। সম্ভবত কিম একটি চলমান সমস্যার মুখোমুখি হতে চাননি। তাই বিদ্যমান সমস্যা রবার্ট জোয়েলিককেই সমাধানের পরামর্শ দেন তিনি। সে পরিপ্রেক্ষিতেই জোয়েলিক পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করেন এইচ মনসুর।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, 'একজন ব্যক্তির কথিত অপরাধের জন্য গোটা জাতিকে দণ্ডিত করা যায় না। অপরাধের অভিযোগ যদি সত্যি বলে প্রমাণিতও হয়, তাহলেও এ রকম আচরণ করা বিশ্বব্যাংকের উচিত হয়নি। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের কাছে নীতি-নৈতিকতার আশাও করা যায় না।'
দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তেমন স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। গতকালের আগ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকও তাদের অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। আচমকা গত ২৯ জুন, শুক্রবার ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিমূলক ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তারা ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে দুটি তদন্তের তথ্য-প্রমাণ প্রদান করেছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আকাশ বলেন, 'তাদের কাছে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে তারা তা প্রকাশ করুক। তাদের দুর্নীতির অভিযোগ তো সরকার আমলে নিয়ে কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে। তদন্ত চলছে। প্রকল্পের কাজও তো চলতে পারত। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের জন্য পুরো জাতিকে শাস্তি দেওয়া যায় না।'
কানাডায় এসএনসি লাভালিনের দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেখানকার কর্তৃপক্ষের তদন্তের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বিবৃতিতে বলেছে, তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল। সেগুলো হলো- সরকারের মধ্যে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তদন্তকাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত ছুটি প্রদান, দুদকের অধীনে একটি বিশেষ তদন্তদল নিয়োগ এবং বিশ্বব্যাংেকের নিয়োগ করা একটি প্যানেলের কাছে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সব তথ্যের পূর্ণ ও পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া। এসব শর্তের ব্যাপারে সরকারের সাড়া বিশ্বব্যাংকের কাছে সন্তোষজনক মনে না হওয়ায় তারা ঋণচুক্তি বাতিল করেছে বলে জানায়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তাদের শর্ত আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কারণ জবাবদিহি করতে হয় বড় বড় শেয়ারহোল্ডারের কাছে। সরকার এখন বিকল্প খুঁজতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে ঋণের খরচের দিকটাও দেখতে হবে।'
ড. আহসান এইচ মনসুরও মনে করেন, শর্তগুলো খারাপ ছিল না। সরকার বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর স্বার্থ ত্যাগ করতে পারত। শর্তগুলো মেনে নেওয়া সরকারের উচিত ছিল। কিন্তু সরকার তা করেনি। এতে সরকারই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পদ্মা সেতুতে অর্থ পেতে নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করার পরামর্শ দেন তিনি। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিল করায় সরকার এক বছর পিছিয়ে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বিশ্বব্যাংক কেন গত এক বছর বাংলাদেশের সময় নষ্ট করেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে একটি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা উচিত ছিল। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যেই মতপার্থক্য তৈরি হয়।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই বিশ্বব্যাংক একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করতে পারে কি না জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেন, বিশ্বব্যাংক যদি মনে করে অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য, তাহলে তারা চুক্তি বাতিল করতেই পারে। চুক্তি বাতিল ও দেরির কারণে খরচ বাড়লে এর দায়ও সরকারের বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, সরকার রবার্ট জোয়েলিকের মেয়াদ শেষের অপেক্ষা করেছিল। এরপর নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু রবার্ট জোয়েলিক এমন সিদ্ধান্ত নেবেন, তা কেউ ভাবতে পারেনি। কারণ পাঁচটি শর্তের মধ্যে তিনটি বাংলাদেশ মেনে নিয়েছে- এমন একটি চিঠি গত মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকে পাঠিয়েছিল সরকার। মাত্র চার দিনের মধ্যেই বিশ্বব্যাংক এমন একটি সিদ্ধান্ত নেবে, তা সরকার আশা করেনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতুতে সমন্বয়কারীর ভূমিকায় ছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে দেওয়ায় বাকি তিনটি সংস্থাও নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে এ তিন সংস্থার কোনো একটি সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী হয়, তাহলে নতুন করে ঋণচুক্তি করতে হবে।
No comments