দালিলিক প্রতারণা রোধে চাই সম্পত্তি সনদ by মোরশেদুর রহমান
মানুষের অর্জিত সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের অন্ত নেই। জায়গার মূল্যবৃদ্ধি, দুষ্প্রাপ্যতা এবং লোভের কারণে বিরোধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তরাধিকারমূলে এবং খরিদসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির মধ্যে দালিলিক ভুলভ্রান্তিসহ নানা রকম আইনগত সমস্যা থেকে যাচ্ছে।
আইনের মাধ্যমে এমন সহজ ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে একজন অন্যজনকে প্রতারিত ও বঞ্চিত করতে না পারে। প্রত্যেক জায়গার অনেক দালিলিক তথ্য রয়েছে। ওই তথ্যগুলো সরকারিভাবে বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করা হয়। একটি জায়গার সব তথ্য এক স্থানে সন্নিবেশিত না থাকায় তথ্যের চেইন মেলানো অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা একটি বিল্ডিংয়ের কথাই যদি ধরি, ওই বিল্ডিংয়ের ভূসম্পত্তির যত ধরনের খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, বায়া দলিলাদির নম্বর ইনডেক্স আকারে একটি সনদে লিপিবদ্ধ করে রাখার ব্যবস্থা করতে পারতাম, তাহলে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতি কমত বলে মনে হয়। জনগণের সাধারণ চাওয়া হচ্ছে, প্রতিটি খতিয়ান ও দলিল হবে শুদ্ধ এবং সম্পত্তিতে প্রত্যেকের অধিকার দালিলিক ও বাস্তবিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। বর্তমানে কোনো সম্পত্তি সনদে কোনো তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখার বাধ্যবাধকতা না থাকার কারণে একটি সম্পত্তির মালিক একজনকে আমমোক্তারনামা দিচ্ছে, পরক্ষণে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে আমমোক্তারনামা বাতিল করে আরেকজনকে বিক্রি করে দিচ্ছে। একই জায়গা কুউদ্দেশ্যে আবার হয়তো স্ত্রীকে দান করে দিচ্ছে নতুবা ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে ঋণ নিচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাবে সম্পত্তির মালিক বর্তমানে ইচ্ছা করলে প্রতারণার আশ্রয়ে একই জায়গা আমমোক্তারনামা, বিক্রয়, দান, বন্ধক ইত্যাদি দলিল গোপনে সৃজন করে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিতে পারছে। ফলে আদালতে দলিলের বিরুদ্ধে দলিল সংঘাত সৃষ্টি হয়ে মামলা হচ্ছে।
সম্পত্তি নিয়ে ওয়ারিশদের তার প্রাপ্য হিস্যাংশ না দেওয়ার ঘটনা অহরহই দেখা যায়। আইনত করণীয় কাজটি করি না এবং এজেন্ডাতেও রাখি না। ফলে বাংলাদেশের হাজার হাজার পরিবার এখনো নানা-নানি, দাদা-দাদি, পিতা-মাতার সম্পত্তির অংশনামা না করে ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে না কাউকে বঞ্চিত করে চলেছে। ফলে আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক এবং সামাজিক সম্পর্কও ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আপন ফুফু, চাচা ও বোনকে সম্পত্তি দিতে যেমন আমাদের কষ্ট হয়, তেমনি ভাইয়ের এতিম ছেলেমেয়েকেও সম্পত্তি দিতে আমাদের মন চায় না। মানুষ যখন দেওয়ানি অধিকারসমূহ যথাযথভাবে ভোগ করতে পারবে না, তখন ক্রিমিনাল অফেন্স সমাজে বেড়ে যাবে। দেওয়ানি অধিকার পাওয়ার জন্য ভাইয়ের বিপক্ষে ভাই, ভাইয়ের বিপক্ষে বোন, পিতার বিপক্ষে সন্তান, মামাদের বিপক্ষে ভাগনেরা মামলা করছে। এসব অধিকার ফিরে পাওয়ার মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের কারণে নানা ধরনের প্রতিহিংসামূলক ফৌজদারি মামলার সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশের ব্যক্তিমালিকানাধীন বড় বড় মার্কেটের ভাড়ার হিস্যাংশ সব ওয়ারিশের মধ্যে আইনানুগভাবে বণ্টন করা হচ্ছে কি না, তা জরিপ চালালে নানা রকম করুণ কাহিনি পাওয়া যাবে। অনেকের পক্ষেই যেহেতু সুষ্ঠু হিসাব সংরক্ষণ করা এবং তা সব ওয়ারিশের বরাবরে প্রদান করা সম্ভব নয়, সেজন্য প্রত্যেক পরিবারের সম্পত্তিই পিতার মৃত্যুর পরে অংশনামা হয়ে যাওয়া উচিত। তাহলেই সমাজে প্রতারণা এবং বঞ্চনার পরিমাণ কমে আসবে। সম্পত্তিকে ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে কেউ যাতে এককভাবে লাভবান হতে না পারে, তার জন্য রাষ্ট্র নিচের পদক্ষেপসমূহ নিতে পারে—
১. প্রত্যেক পরিবারের সম্পত্তির সনদ থাকবে। তাতে তাদের সব সম্পত্তির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, বায়া দলিল ও খরিদা দলিলাদির নম্বর লিপিবদ্ধ থাকবে।
২. প্রথমে আইন প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জনপ্রতিনিধি, বিচারিক কর্মকর্তা, আইনজীবী এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের পেশাজীবীর পরিবারে রেজিস্টার্ড বাধ্যতামূলক অংশনামা করার বিধান করা যেতে পারে।
অংশনামাবিহীন যৌথ পরিবারের সব সম্পত্তির আয়-ব্যয়ের হিসাব সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কিংবা কাউন্সিলরের বরাবরে প্রতিবছর দাখিলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
লেখক আইনজীবী, চট্টগ্রাম জেলা বার।
সম্পত্তি নিয়ে ওয়ারিশদের তার প্রাপ্য হিস্যাংশ না দেওয়ার ঘটনা অহরহই দেখা যায়। আইনত করণীয় কাজটি করি না এবং এজেন্ডাতেও রাখি না। ফলে বাংলাদেশের হাজার হাজার পরিবার এখনো নানা-নানি, দাদা-দাদি, পিতা-মাতার সম্পত্তির অংশনামা না করে ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে না কাউকে বঞ্চিত করে চলেছে। ফলে আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক এবং সামাজিক সম্পর্কও ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আপন ফুফু, চাচা ও বোনকে সম্পত্তি দিতে যেমন আমাদের কষ্ট হয়, তেমনি ভাইয়ের এতিম ছেলেমেয়েকেও সম্পত্তি দিতে আমাদের মন চায় না। মানুষ যখন দেওয়ানি অধিকারসমূহ যথাযথভাবে ভোগ করতে পারবে না, তখন ক্রিমিনাল অফেন্স সমাজে বেড়ে যাবে। দেওয়ানি অধিকার পাওয়ার জন্য ভাইয়ের বিপক্ষে ভাই, ভাইয়ের বিপক্ষে বোন, পিতার বিপক্ষে সন্তান, মামাদের বিপক্ষে ভাগনেরা মামলা করছে। এসব অধিকার ফিরে পাওয়ার মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের কারণে নানা ধরনের প্রতিহিংসামূলক ফৌজদারি মামলার সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশের ব্যক্তিমালিকানাধীন বড় বড় মার্কেটের ভাড়ার হিস্যাংশ সব ওয়ারিশের মধ্যে আইনানুগভাবে বণ্টন করা হচ্ছে কি না, তা জরিপ চালালে নানা রকম করুণ কাহিনি পাওয়া যাবে। অনেকের পক্ষেই যেহেতু সুষ্ঠু হিসাব সংরক্ষণ করা এবং তা সব ওয়ারিশের বরাবরে প্রদান করা সম্ভব নয়, সেজন্য প্রত্যেক পরিবারের সম্পত্তিই পিতার মৃত্যুর পরে অংশনামা হয়ে যাওয়া উচিত। তাহলেই সমাজে প্রতারণা এবং বঞ্চনার পরিমাণ কমে আসবে। সম্পত্তিকে ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে কেউ যাতে এককভাবে লাভবান হতে না পারে, তার জন্য রাষ্ট্র নিচের পদক্ষেপসমূহ নিতে পারে—
১. প্রত্যেক পরিবারের সম্পত্তির সনদ থাকবে। তাতে তাদের সব সম্পত্তির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, বায়া দলিল ও খরিদা দলিলাদির নম্বর লিপিবদ্ধ থাকবে।
২. প্রথমে আইন প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জনপ্রতিনিধি, বিচারিক কর্মকর্তা, আইনজীবী এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের পেশাজীবীর পরিবারে রেজিস্টার্ড বাধ্যতামূলক অংশনামা করার বিধান করা যেতে পারে।
অংশনামাবিহীন যৌথ পরিবারের সব সম্পত্তির আয়-ব্যয়ের হিসাব সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কিংবা কাউন্সিলরের বরাবরে প্রতিবছর দাখিলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
লেখক আইনজীবী, চট্টগ্রাম জেলা বার।
No comments