মিরসরাই ট্র্যাজেডি-মাকে একা ফেলে চলে গেল নয়ন by মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন,

মিরসরাই ট্র্যাজেডির কাছে পরাস্ত একজন নীলিমা রানী শীল। তাঁকে দেখার আর কেউ রইল না। স্বামীহারা নীলিমার একমাত্র ছেলে নয়ন শীল তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নয়ন রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে পরলোকগমন করে। সেই সঙ্গে নিভে গেল নীলিমার ঘরের আলো।অনেক দিন ধরে কোনো আওয়াজ নেই। থেমে গেছে কান্নাও। বিশেষ কোনো উপলক্ষ না এলে এখন যেন কারোরই স্মরণে আসে না


আবুতোরাবের কথা। ঘটনার প্রায় সাড়ে চার মাস পর এসে অনেক কিছুই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে চোখের জলে ভাসছে নয়ন শীলের পরিবার।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে গতকাল রাতে মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, 'নয়নকে বাঁচানো গেল না।' তিনি জানান, মাথা ও বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হওয়ায় এর আগে এ্যাপোলো হাসপাতালে তিনবার নয়নের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না।
গত ১১ জুলাই মিরসরাই ট্র্যাজেডির ঘটনার কয়েক মাস আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান নয়নের বাবা। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসারের হাল ধরেন উপজেলার ১৩ নম্বর মায়ানী ইউনিয়নের মধ্যম মায়ানী গ্রামের বাসিন্দা নীলিমা রানী শীল। বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর দুজনকে নিয়ে কোনোমতে চলছিল তাঁর পরিবার। গত ২১ নভেম্বর বিয়ে হয়েছে তাঁর অন্য মেয়েরও। যে সন্তানের ওপর ভর করে তিনি স্বপ্ন দেখতেন ভবিষ্যতের দিনগুলো কাটিয়ে দেওয়ার, সেই নয়ন চলে যাওয়ায় নীলিমা এখন যেন শোক সাগরে ভাসছেন।
ছেলেকে হারানোর কথা আগেই যেন বুঝতে পেরেছিলেন নীলিমা। গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, 'আমার ঘরে প্রদীপ জ্বালানোরও কি কেউ থাকবে না। ঈশ্বর কেন আমাকে একা করে দিতে চাইছে। আমার নয়নের কিছু হলে আমি কাকে নিয়ে থাকব। আমার পুরো ঘরের আলো নিভে গেলে আমি বাঁচব কী করে।'
মিরসরাইয়ের আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল নয়ন শীল। বিদ্যালয়টির ২৯ জন শিক্ষার্থী মারা গেছে ওই দুর্ঘটনায়।

No comments

Powered by Blogger.