মিসরে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুতে সামরিক পরিষদের ক্ষমা প্রার্থনা

মিসরে সেনা শাসন অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ-সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ সামরিক পরিষদ (এসসিএএফ)। পরিষদের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, 'যারা নিহত হয়েছে তারা সবাই দেশপ্রেমিক ও মিসরের অনুগত সন্তান।'কায়রোসহ অন্যান্য শহরে গত শনিবার থেকে শুরু বিক্ষোভ-সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৩৫ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং তিন সহস্রাধিক লোক আহত হয়েছে। বিক্ষোভ-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক
শাসকরা দ্রুত বেসামরিক নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিলেও আন্দোলনকারীরা সামরিক শাসন অবসানের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।এসসিএএফ গতকাল ফেসবুকে তাদের পেইজে এক বিবৃতিতে বলে, 'তাহরির স্কয়ারে সাম্প্রতিক ঘটনায় পরিষদ গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে এবং ক্ষমা চাইছে।' নিহতদের শহীদ বলে উল্লেখ করে বলা হয়, মিসরজুড়ে শহীদদের পরিবারের প্রতি পরিষদ সমবেদনা জানাচ্ছে। পরিষদের প্রধান ফিল্ড মার্শাল হুসেইন তানতাউয়ি গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সময় এগিয়ে এনে নতুন তারিখ ঘোষণা দেওয়ার পর ক্ষমা চাইল পরিষদ। বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে ওই ভাষণ দেওয়া হলেও সেখানে পুলিশের হাতে নিহতদের প্রসঙ্গে তিনি কিছু বলেননি। বিষয়টি তীব্রভাবে সমালোচিত হয়। গতকালকের বিবৃতিতে এসসিএএফ বিক্ষোভে নিহতদের ব্যাপারে তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এ ছাড়া হতাহতদের পরিবারকে সহায়তার কথাও জানায় তারা।
তবে বিক্ষোভকারীরা সামরিক পরিষদের দ্রুত পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। এ বিক্ষোভ ইতিমধ্যে ছয় দিনে গড়িয়েছে। অথচ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ১৮ দিনের আন্দোলনে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক। গত বুধবার বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু তাহরির স্কয়ার ছাড়াও মোহাম্মদ মাহমুদ স্ট্রিটে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সড়কেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তর অবস্থিত। গত বুধবার রাতভর থেমে থেমে সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরে নিরাপত্তা বাহিনী সড়কটিতে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়।
এদিকে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ায় মিসরীয়-আমেরিকান কলামিস্ট মোনা আল-তাহাউয়িকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার কারণে মিসরে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন মার্কিন শিক্ষার্থীকেও সোমবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের আটক হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে কায়রোর মার্কিন দূতাবাস।
এ অবস্থায় আর মাত্র তিন দিন পর ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আন্দোলনকারীরা মনে করে, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখতে চাচ্ছে। তাই তারা নির্বাচনের আগেই বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানায়। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, আল-জাজিরা।

No comments

Powered by Blogger.