পুরান ঢাকার ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ হয় যেভাবে-গডফাদার মিন্টুর তথ্য by সাহাদাত হোসেন পরশ

রাজধানীর পুরান ঢাকায় ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত অন্তত ২৫টি গ্রুপ সক্রিয়। প্রতিটি গ্রুপের টার্গেট মাসে অন্তত দেড় কোটি টাকা। যে কোনো মূল্যে দেড় কোটি টাকা বা একই মূল্যমানের স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই-ডাকাতি করাই তাদের টার্গেট। পূর্বপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক, বীমা ও করপোরেট অফিসের সামনে ছিনতাইকারী চক্রের সোর্সরা অবস্থান নেয়। মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেল অথবা মাইক্রোবাসে অপারেশনে চলে আসে


ছিনতাই চক্রের অগ্রবর্তী টিম। এর পর অপর একটি টিম টাকা নিরাপদে পেঁৗছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে। ছিনতাই করা টাকার
একটি ভাগ চলে যায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পকেটেও। অনেক ক্ষেত্রে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা পরিচয় গোপন করে সিএনজি ফিলিং স্টেশন, গার্মেন্ট ও ব্যাংক-বীমায় চাকরি নেয়। এরপর সেখান থেকে টাকা লেনদেনের তথ্য পাচারের মাধ্যমে ছিনতাই কাজে সহযোগিতা করে।
গত শুক্রবার রাতে আতাউর রহমান মিন্টু নামে পুরান ঢাকার ছিনতাইকারী চক্রের এক গডফাদারকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন কদমতলীর দনিয়া থেকে মুরাদ নামে তার আরও এক সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পুরান ঢাকার ছিনতাই চক্রের অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর এ চক্রের সদস্যরা শ্যামপুরের দোলাইরপাড়ে দিনদুপুরে বাংলালিংকের দুই কর্মচারীকে গুলি করে ও কুপিয়ে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ওই চক্রে আরও চার সদস্য ছিল। তাদের গ্রেফতারে পুলিশ ইতিমধ্যে একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়েছে।
শ্যামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মিয়া কুতুবুর রহমান রহমান সমকালকে জানান, মিন্টু অনেক বড় মাপের সন্ত্রাসী। পুরান ঢাকায় তার নেতৃত্বে একাধিক ছিনতাইকারী গ্রুপ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ অন্তত ৬টি মামলা রয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে মিন্টু।
জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দনিয়া এলাকার একটি বাসা থেকে ছিনতাইকারী
মুরাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৪৬৯, দনিয়ার একটি গ্যারেজের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় একটি রাইফেল। গ্রেফতারকৃত মুরাদ বাংলালিংকের দুই কর্মচারীকে কুপিয়ে ও গুলি করে ২৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। উদ্ধার করা রাইফেলটি ছিনতাইয়ের সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। একই ঘটনায় জড়িত মিন্টুকে গ্রেফতার করে ডিবি। তার কাছে ছিনতাই হওয়া সাড়ে তিন লাখ টাকা ও একটি রিভলভার পাওয়া গেছে। মিন্টু কেবল ছিনতাই নয়, ডাকাতির সঙ্গেও জড়িত। চুক্তিতে কিলিং মিশনে অংশ নিয়ে থাকে মিন্টু। বাংলালিংকের টাকা ছিনতাই করে তারা ৬টি সমান ভাগে বণ্টন করে।
সূত্র জানায়, আতাউর রহমান মিন্টু বেশ কয়েক শীর্ষ সন্ত্রাসীর অস্ত্রভাণ্ডার দেখভাল করছে। সম্প্রতি পুরান ঢাকা থেকে চাচা রহমান নামে এক সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই অস্ত্র ছিল মিন্টুর। শীর্ষ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ আলীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সে। গত ঈদে মোহাম্মদ আলী রাজধানী ঘুরে গেছেন। ওই সময় মিন্টুর সঙ্গে তার দেখা হয়।
রাজধানীর পুরান ঢাকায় তার নেতৃত্বে আরও কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয়। উজ্জ্বল, মুরাদ, পাভেল, সেন্টু, মোনা ও সেবকসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপের গডফাদার মিন্টু। রাজধানীর পুরান ঢাকায় একের পর ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। গত ২৬ সেপ্টম্বর পুরান ঢাকার বাবুবাজারে ছিনতাই করার সময় রাজা মিয়া (২১) নামে এক যুবক গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। র‌্যাব সদস্যরা অস্ত্রসহ তাকে আটক করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। গত বছরের ১১ নভেম্বর আবদুর রশীদ নবাবপুর রোডের নবাব ইউসুফ মার্কেটের ইউসুফ স্টিল বন্ধ করে রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু শফিকুর রহমান। কিছুদূর যাওয়ার পর ৩-৪ ছিনতাইকারী গতিরোধ করে রশীদের কাছ থেকে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিতে গেলে ছিনতাইকারীরা তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।
গত ১৬ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে শ্যামপুরের দোলাইরপাড় এলাকায় বাংলালিংকের পরিবেশক প্রতিষ্ঠান এনটিসি ডিস্ট্রিবিউশনের দুই কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ছিনতাই করেছে অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীরা। এ সময় দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে ওই কোম্পানির হিসাবরক্ষক দিদারুল আলম (২৬) ও গুলিতে গাড়িচালক ওয়াহিদুর রহমান ওহিদ (৩৮) গুরুতর আহত হন।

No comments

Powered by Blogger.