ম্যাচের গুরুত্ব যেন ৩৩ রানেই

ক্রিকেট-বিধাতা বুঝি এমনটাই লিখে রেখেছিলেন! ঘরের মাঠ মুম্বাইতে অধরা বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে উঠবে শচীন টেন্ডুলকারের। উঠেছে। এবার সেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামেই মহানায়কের শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি হবে। হবে কি?
ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ চলমান টেস্টের গতিপ্রকৃতি ছাপিয়ে এটিই এখন সবচেয়ে আলোচ্য বিষয়। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নাগপুরে করেছিলেন তিনি ৯৯তম শতরান।


এরপর থেকে নার্ভাস নাইনটি নাইনে আটকে আছেন টেন্ডুলকার। ইনিংসের পর ইনিংস খেলছেন, সেঞ্চুরির গেরো আর খুলছে না। সেটি হয়তো আশৈশবের মাঠে মাহেন্দ্রক্ষণ উপহার দেওয়ায় ক্রিকেট-বিধাতার আগাম চিত্রনাট্যের কারণে। কাল তৃতীয় দিন টেন্ডুলকার শেষ করেছেন ৬৭ রানে অপরাজিত থেকে। আজ আর ৩৩টি রান করতে পারলেই...
পারলে এই টেস্টের আলাদা এক মাহাত্ম্য থাকে। নইলে কিন্তু এখন পর্যন্ত মুম্বাই ম্যাচে রোমাঞ্চের ছিটেফোঁটা নেই। ড্যারেন ব্রাভোর দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সঙ্গে টপ ও মিডল অর্ডারের অবদানে ৫৯০ রানের পাহাড় গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাব দিতে গিয়ে পিছিয়ে নেই ভারতও। এরই মধ্যে ২৮১ রান তুলে ফেলেছে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে। হাতে যেহেতু মাত্র দুই দিন, তাই অবিশ্বাস্য কিছু না হলে এই টেস্টের সম্ভাব্য ফল ড্রই।
দ্বিতীয় দিন শেষে ক্যারিবীয়দের রান ছিল ৯ উইকেটে ৫৭৫। সেখানে ডিক্লেয়ার না করে কাল সকালেও ব্যাটিংটা চালিয়ে যায় তারা। অল আউট হওয়ার আগে যোগ করে আরো ১৫ রান। রবিচরণ অশ্বিন দেবেন্দ্র বিশুকে বোল্ড করে তুলে নেন ইনিংসে তাঁর পঞ্চম উইকেট। অভিষেক টেস্ট সিরিজে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন এ অফস্পিনার।
বিশাল রান-পাহাড়ের চাপে না ভারত পিষ্ট হয়ে যায়_এমন একটা শঙ্কা ছিল স্বাগতিকদের। কিন্তু ওয়াংখেড়ের ব্যাটিং স্বর্গে সেটি হয়নি। বীরেন্দর শেবাগ ও গৌতম গম্ভীরের শুরুটা ছিল প্রত্যাশিত ঝড়োগতির। মাত্র ১৪.৩ ওভারে ৬৭ রান তোলার পর ওপেনিং জুটি ভাঙে শেবাগ (৫০ বলে ৩৭) ড্যারেন সামির বলে বোল্ড হলে। গম্ভীর (৫৫) টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুললেও ইনিংস টেনে নিতে পারেননি। রাহুল দ্রাবিড় তা করছিলেন সহজাত ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে। সতীর্থ টেন্ডুলকারের পর ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ১৩ হাজার রানও পূর্ণ করে ফেলেন। ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ক্যালেন্ডার-বর্ষে পেরিয়ে যান হাজার টেস্ট রান। কিন্তু ৩৭তম টেস্ট সেঞ্চুরিটি পেলেন না। ১৪৯ বলে ৮২ রান তোলার পর মারলন স্যামুয়েলসের অফস্পিনে কাট করতে গিয়ে হয়ে যান বোল্ড।
টেন্ডুলকার নেমেছিলেন দ্বিতীয় উইকেট পতনের পরই। দ্রাবিড়ের আউটের সময় ৪২ রানে অপরাজিত তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই টেস্ট হাফ সেঞ্চুরির তালিকার শীর্ষে থাকা অ্যালান বোর্ডারের (৬৩টি) পাশে বসে যান। কিন্তু এর খানিক পর বেঁচে যান সৌভাগ্যবশত। ৫৮ রানের সময় দেবেন্দ্র বিশুর বলে ব্যাট ছুঁয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু উইকেটরক্ষক কার্লটন বাফ সেটি গ্লাভসবন্দি করার চেষ্টাই করতে পারেননি!
পারবেন কিভাবে! ক্রিকেট-দেবতা যে চিত্রনাট্য লিখে রাখেন, সেটি বদলানোর সাধ্য কি আর বিশু-বাফদের থাকে! ক্রিকইনফো

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৮৪.১ ওভারে ৫৯০ (ব্রাভো ১৬৬, এডওয়ার্ডস ৮৬, পাওয়েল ৮১; অশ্বিন ৫/১৫৬, অ্যারন ৩/১০৬)।
ভারত : ৮০ ওভারে ২৮১/৩ (গম্ভীর ৫৫, শেবাগ ৩৭, দ্রাবিড় ৮২, টেন্ডুলকার ৬৭*, লক্ষ্মণ ৩২*; রামপল ১/৪২, স্যামুয়েলস ১/৪৮)

No comments

Powered by Blogger.