ঈশ্বরদীতে বিএনপির সংঘর্ষ দুলু-পটলসহ আহত ৬০

শ্বরদীতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের রোডমার্চের প্রথম পথসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বিএনপির বিবদমান দুই গ্রুপে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ অন্তত ৬০ জন। এ সময় বিএনপির দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে ইট-পাটকেল


নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা ৩-৪শ' চেয়ার, বাস, ট্রাক, মঞ্চ, মাইক ও ১০টি দোকান ভাংচুর করে। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে ঈশ্বরদীর সঙ্গে ঢাকা, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজশাহীসহ কয়েকটি রুটের সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পাবনা থেকে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বিকেলে দাশুড়িয়ায় পথসভার মঞ্চে বিএনপির প্রস্তুতিসভার শুরুতেই কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব ওই সভার সভাপতি হিসেবে পাবনা জেলা বিএনপির সভাপতি মেজর (অব.) কেএস মাহমুদের নাম মাইকে ঘোষণা দেন। এরপরই তার নাম প্রত্যাহার করার দাবি জানান পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাবনা পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু। মিন্টুর ওই প্রতিবাদে পাবনা জেলা ও ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপি নেতারা মঞ্চেই ছিলেন। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা নিয়ে দুই গ্রুপের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মারামারি শুরু করলে মঞ্চে থাকা কেন্দ্রীয় বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর পায়ে চোট লাগে। তাকে স্থানীয় একটি পেট্রোল পাম্পে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, পাবনা জেলা বিএনপির সভাপতি মেজর (অব.) কেএস মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান তোতা, পাবনার মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু, আনিসুর রহমান বাবু, সামসুদ্দিন আহমেদ মালিথাসহ কমপক্ষে ৬০ জন নেতাকর্মী আহত হন।
সন্ধ্যায় পথসভার মঞ্চে আহত নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেন, খালেদা জিয়ার গণজোয়ারে ভয় পেয়ে সরকারদলীয় বাহিনী এ পথসভা বানচালের চেষ্টা করছে। এ সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা ফজলুর রহমান পটল বিএনপির মধ্যে কোনো বিভেদ নেই দাবি করে বলেন, আমাদের দলের মধ্যে কিছু নেতা ব্যক্তিগত স্বার্থে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আগামী ২৬ নভেম্বরের পথসভা সফল করা হবে। কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কামরুল হাসান মিন্টুর নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার পথসভার প্রস্তুতিসভায় হামলা চালানো হয়েছে। পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু বলেন, কেএস মাহমুদ বিএনপির সভাপতি নন, কারণ পাবনা জেলা বিএনপির কমিটি এখনও অনুমোদনই হয়নি। তাই তাকে খালেদা জিয়ার প্রস্তুতিসভার সভাপতি হিসেবে দলের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারেননি বলেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঈশ্বরদী থানার ওসি কাজী হানিফুল ইসলাম জানান, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ঈশ্বরদী ও দাশুড়িয়ায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

No comments

Powered by Blogger.