শেয়ারবাজারে প্রণোদনা-কাটাতে হবে আস্থার সংকট

বশেষে এল বহুপ্রতীক্ষিত গুচ্ছ প্রণোদনা। শেয়ারবাজার রক্ষায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ২১ দফা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। প্রণোদনা প্যাকেজে বাজার বিশেষজ্ঞরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে শেয়ারবাজারকে আগের অবস্থানে নিয়ে আসতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই_এমন মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে


বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। শেয়ারবাজারকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়িত হলে শেয়ারবাজার আবার আগের মতো ঘুরে দাঁড়াবে_এমনটি ধারণা করা হচ্ছে।
গুচ্ছ প্রণোদনা ঘোষণার দিনের মতো সপ্তাহের শেষ দিন গতকালও সূচকের পতন দিয়ে শেয়ারবাজারের লেনদেন শুরু হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়। শেয়ারের লেনদেন বাড়ে। শেয়ারবাজার রক্ষায় যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় একটি বিশেষ কমিটি করার কথা বলা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ। ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের তারল্য বাড়ানোর পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও মার্চেন্ট ব্যাংকের বিনিয়োগ বৃদ্ধির যে সুযোগ প্রণোদনা প্যাকেজে রাখা হয়েছে, তার চারটি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করেছে। একক ঋণসীমা সমন্বয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে ২০১৩ সাল পর্যন্ত। স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে এখন থেকে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৫১ শতাংশ মূল কম্পানি থেকে এবং অবশিষ্ট অংশ অন্য যেকোনো তহবিল থেকে নিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারিগুলো পুঁজি সংগ্রহ
করতে পারবে।
তিন মাসের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপও ঘোষণা করেছে এসইসি। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ উপদেশ সেবা উন্মুক্ত করা। এতে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক নির্বিশেষে ব্রোকারেজ হাউসগুলো পেশাদার, দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক নিয়োগ দিতে বাধ্য হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারী, বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকদের জন্য তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে ইক্যুইটি রিসার্চ পাবলিকেশনস উন্মুক্ত করা হবে। তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করপোরেট গভর্ন্যান্স নীতিমালা তৈরি করা হবে। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারিগুলোর নিজস্ব মূলধন বাড়ানোর জন্য এসইসি দ্রুত উপায় উদ্ভাবনের পদক্ষেপ নেবে।
দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ছয়টি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে এসইসি। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ফিন্যানশিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট প্রণয়ন, ইনসাইডার ট্রেডিং আইন আরো গভীর ও কঠিন করা, স্মল ইনভেস্টর প্রোটেকশন অ্যাক্ট যুগোপযোগী করা, স্টক এঙ্চেঞ্জগুলোর করপোরেট গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করা এবং দ্রুত ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতকে আরো শক্তিশালী করা এবং এসইসির সার্ভেল্যান্স সিস্টেমের মাধ্যমে তদারকি কার্যক্রম জোরদার করা।
দেশের শেয়ারবাজার বিকশিত হওয়ার সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে আস্থার সংকট। আস্থার সংকটই শেষ পর্যন্ত শেয়ারবাজারকে পতনের মুখে ঠেলে দেয়। শেয়ারবাজারকে আবার আগের পর্যায়ে আনতে হলে সবার আগে কাটাতে হবে আস্থার সংকট। আস্থার সংকট দূর করতে হলে জবাবদিহি ও তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে হবে। অর্থের প্রবাহ না থাকলে বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে না। বাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীল করতে হবে। ঘোষিত প্রণোদনা সেই স্থিতিশীলতা কতটা নিশ্চিত করতে পারে, তা নির্ভর করছে বাস্তবায়নের ওপর।

No comments

Powered by Blogger.