ভারতের শীর্ষ মাওবাদী নেতা কিষাণজি নিহত-তিন রাজ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা by সুব্রত আচার্য্য,

ভারতের শীর্ষ মাওবাদী নেতা কটেশ্ব রাও ওরফে কিষাণজি নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪টায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বুড়িশোল জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের গুলিবিনিময়ের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। গতকাল রাতে কিষাণজির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন ভারতের কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি শিশির অধিকারী।


গতকাল রাতেই দিলি্লতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংও কিষাণজির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, 'আমরা ৯৮ শতাংশ নিশ্চিত। বাকিটা সব দেখে বলা যাবে।'
গতকাল সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) প্রবীণ ত্রিপাঠি কিষাণজির দেহ শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, পুলিশের কাছে থাকা কিষাণজির ছবির সঙ্গে দেহটি মিলিয়ে দেখার পরই সরকারিভাবে ঘোষণা করা হবে। এ ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় ও উড়িষ্যায় সর্বোচ্চ সতর্কতা (রেড অ্যালার্ট) জারি করা হয়েছে।
জানা যায়, এ সময় শীর্ষ মাও নেতার দেহরক্ষী ও নারী মাও স্কোয়াড-প্রধান সুচিত্রা মাহাতো গুলিবিদ্ধ হন। তবে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। নিরাপত্তা বাহিনী মাওবাদীদের অস্থায়ী আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। কটেশ্বর রাও ওরফে কিষাণজির বিরুদ্ধে ভারতে অন্তত দেড় শ মামলা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লালগড় বেলপাহাড়িতে থানায় হামলা এবং শিলদার যৌথ বাহিনীর ক্যাম্পে হামলায় ২৫ জন সিআরপিএফকে খুনের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই মাও নেতা। একই সঙ্গে জ্ঞানেশ্বর এঙ্প্রেস দুর্ঘটনার পেছনে কিষাণজির হাত থাকার প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ওই ঘটনায় ১৮৪ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পারেন, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ ১১ জন শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী-আমলাকে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাওবাদী এই শীর্ষ নেতা উড়িষ্যা, ছত্তিশগড় হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বুড়িশোল জঙ্গলে অবস্থান করছেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর নিশ্চিত করেই মঙ্গলবার রাত থেকে সেখানে যৌথ বাহিনীর প্রায় ২০০ সদস্য জঙ্গলে অপারেশন শুরু করেন। গত দুই দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের গুলিবিনিময় চলছিল। সেখানে কিষাণজি লুকিয়ে ছিলেন_এ খবরের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করে মাওবাদী দমনে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী নিয়ে গড়া যৌথ বাহিনী। কলকাতার টিভি চ্যানেলগুলো দাবি করে, রাজ্যটির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিনপুর থানার লালবনিতে গতকাল বিকেলে গুলিবিনিময়ের সময় 'এনকাউন্টারে' কিষাণজির মৃত্যু হয়।
কিষাণজির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী বলেন, কয়েক মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ মাওবাদীমুক্ত রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। এ জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃঢ় ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম ভারতে মাওবাদীদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতেন দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা মাওবাদী নেতা কিষাণজি। তবে পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় অবস্থান করতেন শীর্ষ গেরিলা নেতা। সেখান থেকে গোটা অঞ্চলে গেরিলা কার্যক্রম পরিচালনা করতেন তিনি। তবে গত তিন-চার বছর পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের বড় ঘাঁটি গড়ে তুলে একটি সমান্তরাল শাসনব্যবস্থা চালানোর হুমকি দিয়ে আসছিল মাওবাদীরা। এটিও মূলত কিষাণজির নেতৃত্বেই পরিচালিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছিল।
রাজ্য সরকার সূত্র জানায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলে অতিরিক্ত সতকর্তা জারির নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মাওবাদীরা এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে রেলকে বেছে নিতে পারে বলেও রাতে জঙ্গলমহল দিয়ে রেল চলাচলে অতিরিক্ত সতকর্তা জারি করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় ও উড়িষ্যায়ও রেল অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.