সাদাকালো-নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন জনতার রায় এবং পূর্বাপর কিছু ঘটনা by আহমদ রফিক

নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আমার আগ্রহের মূল কারণ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে জ্বলে ওঠা সংগ্রামী প্রকাশের জন্য। শিক্ষিকা মমতাজ বেগম, রাজনীতিক শামসুজ্জোহা ও শফি হোসেনের মতো কয়েকজনের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে (১৯৫২) অসামান্য ভূমিকা রেখেছিল নারায়ণগঞ্জ। আর সেই সূত্রে নুরুল আমিনের অপরিণামদর্শী ষড়যন্ত্রের শিকার বীর নারায়ণগঞ্জ। তবুও নারায়ণগঞ্জবাসী পিছু হটেনি টানা কারফিউতে। 'বোস কেবিনে' আসা স্বাধীনতা সংগ্রামী 'বসু'র


বলিষ্ঠতার অমর্যাদা করেনি নারায়ণগঞ্জ।সেই কবে ১৯২৬ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ছাত্রদের প্রবল অনুরোধে স্থানীয় স্কুলে এসে বক্তৃতা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ছাত্রদের অভিনন্দনপত্রের জবাবে অনেক কথার পর পূর্ববঙ্গীয় তরুণ, যুবকর্মীদের সারল্য ও কর্মতৎপরতার প্রশংসায় সোচ্চার হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দেশটিতে ছাত্র-যুবাদের তৎপর হতে আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ রাজনীতির প্রসঙ্গ এলেই পঞ্চাশের দশকের শামসুজ্জোহা-শফি হোসেনদের কথা মনে পড়ে। প্রথমজনের সঙ্গে শেষবার দেখা ১৯৮৬ সালে আমাদের একুশে চেতনা পরিষদের উদ্যোগে সাভার গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত একুশেবিষয়ক মহাসম্মেলনে। কথাবার্তায় বিনয়ী সজ্জন এ মানুষটির ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণায় ছিল গভীর আবেগ ও সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের পক্ষে ছিল বলিষ্ঠ উচ্চারণ। সুস্থ রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী ওই পরিবারের রাজনীতি একালে ভিন্ন মোড় নিয়েছে, কাগজে এসব তথ্য পড়ে মন খারাপ হয়ে যায়।
এমন যে রাজনীতিসচেতন নারায়ণগঞ্জ, সেখানকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উত্তেজনা ছড়ানোই স্বাভাবিক। তদুপরি ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রার্থী পূর্বোক্ত রাজনৈতিক পরিবারের শামীম ওসমান, সাবেক পুরপ্রধান ডা. সেলিনা হায়াত আইভী এবং বিএনপির তৈমূর আলম খন্দকার। তাঁরাই প্রধান প্রতিযোগী। প্রথম দুজন আওয়ামী লীগ ঘরানার, তবু দুজনই নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনড় ছিলেন এবং তাঁদের নিয়ে আওয়ামী লীগ মহাসমস্যায় পড়েছিল।
শুরুতে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড চুপচাপ ছিল। তবু কিছু সমঝোতা প্রস্তাব দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল। এরই মধ্যে এ নিয়ে প্রচারমাধ্যমে এত শোরগোল, এত উত্তেজনা যে মনে হচ্ছিল ঢাকায় মেয়র নির্বাচনেও এমনটা দেখা যায়নি। তা ছাড়া অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। প্রতিদিন নতুন নতুন ঘটনা। অবস্থাদৃষ্টে সিইসি পর্যন্ত অকুস্থলে এসে প্রার্থীদের সতর্ক করে দিলেন, যাতে নির্বাচনবিধি না ভাঙা হয়।
নারায়ণগঞ্জে শামীম পরিবারের যথেষ্ট প্রভাব। অভিযোগ ছিল, প্রশাসন তাদের পক্ষে। এমনকি থানাও। প্রথমে নিরপেক্ষ মনোভাব দেখালেও এবং দুই প্রার্থীকে ডেকে কথা বলে বশে আনতে না পেরে কিছুদিন চুপচাপ থেকে শেষ পর্যন্ত পারিবারিক প্রভাব, ব্যক্তিগত ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করেই বোধ হয় আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড শামীম ওসমানের পক্ষে তাদের সমর্থন প্রকাশ করে। এতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সুধী সমাজের একাংশ বিস্মিত হয়।
এর কারণ আইভীর জনপ্রিয়তা। তাঁর দুবারের মেয়াদে কোনো অভিযোগ বা কালো কালির ছাপ নেই। কর্মক্ষমতাও ভালো। তাঁর জনসমর্থনও অকৃত্রিম। তাই অনেকেরই ধারণা ছিল, ডা. আইভী আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবেন। কিন্তু তা হয়নি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এসে শামীম ওসমানের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন। স্বভাবতই এর প্রভাব জনমতের ওপর কিছুটা হলেও পড়ার কথা এবং এখন বলা যায়, পড়েওছিল।
ঢাকার প্রধান কয়েকটি কাগজে প্রতিদিন ছিল নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের খবর। কখনো ডা. আইভীর পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে (এ বিষয়ে স্বনামখ্যাত এক আইনজীবী উপসম্পাদকীয় লিখেছেন), কখনো শামীম ওসমানের অবৈধ ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে। খন্দকার তৈমূর যেন পেছনে ছায়া। তবু কে বলতে পারে যে এক ঘরানায় দুই পীরের কারণে ভোটের বিভাজন তৈমূরকে জিতিয়ে দেবে না। ছায়া কায়া হয়ে উঠবে না; কিন্তু সেদিকে কারো নজর নেই। যেমন নারায়ণগঞ্জবাসী, তেমনি ঢাকাই সুধীজনের। তেমনি বিএনপির। আসলে তৈমূরের প্রভাব ততটা বোঝা যায়নি।
তারা ব্যস্ত, তারা মুখর ছিলেন এক ঘরানার দুই প্রার্থী নিয়ে। চট্টগ্রামের উদাহরণও বিচার-বিশ্লেষণে উঠে আসছিল। ইতিমধ্যে কাগজে মোটা শিরোনাম হলো : 'নারায়ণগঞ্জে কালো টাকা উড়ছে'। এসব লেখাজোখার আগেই অবস্থাদৃষ্টে নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজ এবং ডা. আইভী ও তৈমূরের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে তথ্য-উপাত্তসহ জোর আবেদন সুষ্ঠু ও সঠিক নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনী মোতায়েনের। তাঁদের নিজস্ব জরিপ শেষে ইসির সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনী মোতায়েনের। ভোটারদের মনে স্বস্তি। কারণ কেউ চায় না নারায়ণগঞ্জ আরেক মাগুরা হোক।
একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী লিখেছেন : 'আমার দৃঢ়বিশ্বাস, নারায়ণগঞ্জবাসী সন্ত্রাসী রাজনীতির পক্ষে ভোট দেবে না। দিতে পারে না।' (২৭ অক্টোবর)। এ পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক ছিল। যেমন সদর ও বন্দর থানার দুই ওসি বদলি, শামীম ওসমানের দুই অবৈধ ক্যাম্প উচ্ছেদ ইত্যাদি ঘটনা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষেই ছিল। অনেকের বিশ্বাস, নির্বাচন আইভীর পক্ষে। এমনকি নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য অভিনেত্রী কবরীও পথে নামলেন আইভীর পক্ষে_ঘরে ঘরে জনসংযোগ। এক ভোটার বললেন, 'পোস্টার ছিঁড়লে কী হবে, বুকের ভেতর পোস্টার আছে।' প্রমাদ গোনেন শামীম ওসমান।
নির্বাচনী হাওয়া বলে একটা কথা আছে না? সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের আসা-যাওয়ায় প্রচারমাধ্যমের একটা জরিপ। তাতে একটা বিষয় প্রায় সুস্পষ্ট যে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ফল ডা. আইভীর পক্ষে যাওয়ার কথা। কিন্তু পেশিশক্তি বলেও একটা কথা আছে! টাকা আর কারচুপি। এগুলোর যেকোনো একটা শক্তি নির্বাচনের স্বাভাবিক ফল পাল্টে দিতে পারে। যতই পত্রপত্রিকায় লেখা হোক_'নারায়ণগঞ্জ তুমি কার? সন্ত্রাসের না শান্তির?' তবু প্রশ্ন থাকে, কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবও কম নয়। তা ছাড়া এসব লেখা কতজন ভোটার পড়েন? যদিও আগের তুলনায় এখনকার ভোটার অনেক বেশি সচেতন। এরও প্রমাণ মিলেছে ইতিমধ্যে।
শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। নির্বাচন কমিশনও মোটামুটি নিশ্চিত যে সেনাতত্ত্বাবধানে একটা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটাই তাদের তত্ত্বাবধানে শেষ নির্বাচন। শেষ ভালো হলেই সব ভালো। এর মধ্যেই অঘটন, বলা যায় অশনিসংকেত। কোথাকার কলকাঠি কোথায় নড়ল কে জানে। সেনাবাহিনী মোতায়েন বন্ধ হয়ে গেল। শুক্রবার (২৮.১০.২০১১) সকাল থেকে সেনা মোতায়েনের কথা ছিল।
পত্রিকাগুলোতে ২৯ অক্টোবর, ২০১১ শনিবার লাল হেডলাইন : 'নারায়ণগঞ্জে সেনা দেয়নি সরকার'; সিইসি বললেন : 'গোলযোগ হলে দায় নেবে না ইসি'। অন্যত্র 'সেনা মোতায়েন না হওয়ায় উত্তপ্ত নারায়ণগঞ্জ', 'এটা আইনের লঙ্ঘন'_বললেন সিইসি। আরেকটি কাগজে 'সেনা ছাড়াই নির্বাচন', দিনভর নাটক : 'শহরজুড়ে বিক্ষোভ।' 'সরকার কমিশনকে অসহযোগিতা করেছে'_মন্তব্য সিইসির। তিন প্রার্থীর প্রতিক্রিয়া যথাক্রমে_'ইসি পক্ষপাতিত্ব করছে' (শামীম), 'সেনাবাহিনী ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না' (তৈমূর), 'জনতাই আমার সেনাবাহিনী' (আইভী)।
মনে হয় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন শামীম ওসমান। খন্দকার তৈমূর প্রচণ্ডরকম হতাশ। ডা. আইভী যদিও জনতার শক্তির কথা বলছিলেন, তবু একেবারে হতাশামুক্ত ছিলেন না তিনি। এর অর্থ_পরিস্থিতি বিচারে স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন ছিল এবং আছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মন্তব্যেও তা বুঝতে পারা যায়। তাহলে সরকার কেন নির্বাচন কমিশনের চাহিদা নস্যাৎ করে দিল। বিএনপির তো বরাবর অভিযোগ ছিল_এ কমিশন বিশেষ করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আওয়ামী লীগ ঘেঁষা। আর এখন আওয়ামী লীগের পাল্টা অভিযোগ : 'ইসি বিএনপির প্রিয় হতে চাইছে।'
ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতামত যেমনই হোক না কেন, সিইসি ও তাঁর কমিশন ইতিপূর্বে যে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে পেরেছে, তা নিয়ে দেশে-বিদেশে নিরপেক্ষ ব্যক্তি বা সংস্থা কারো কোনো সংশয় ছিল না। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সিইসির মতামত অযৌক্তিকভাবে অগ্রাহ্য করতে গেল কেন? কমিশনের ওপর আস্থার অভাব? নাকি তারা নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন চায়নি? বরং যেকোনো মূল্যে তাদের প্রার্থী জিতুক_এটাই ছিল চাওয়? কিন্তু ডা. আইভীও তো আওয়ামী লীগের প্রার্থী, পরীক্ষিত আওয়ামী ঘরানার মানুষ। তাঁর আওয়ামী আনুগত্যে কোনো ফাঁকি নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনে জিতে এলে ঘরের আইভী ঘরেই থাকবেন।
তাঁর একাধিক বক্তব্যে ও প্রতিক্রিয়ায় তেমনটাই দেখা গেছে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের হার হতো না। তাহলে তারা এমন পথ বেছে নিল কেন, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিতে পারে_এমনকি তাদের নিজস্ব দলেও। দিনকয়েক আগে আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার একটা লেখা পড়ে মনে হয়েছিল, আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নীতি অনেক ক্ষেত্রে তাঁর এবং দলের আরো অনেকের পছন্দসই নয়। কিন্তু দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের ভয়ে তাঁরা মুখ খুলতে নারাজ। এ অবস্থা তো একটি গণতান্ত্রিক দলের কাম্য হতে পারে না।
সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তে সাড়া না দিয়ে আওয়ামী লীগ ক. নিজের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, খ. নির্বাচন কমিশনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে, ঘ. তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা সম্বন্ধে অনাস্থার সুযোগ করে দিয়েছে। এতগুলো নেতিবাচক দিক আওয়ামী লীগের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় আসেনি কেন, তা সত্যি বিস্ময়কর।
উলি্লখিত সাদামাটা সম্ভাবনাগুলো আওয়ামী লীগের না বোঝার কথা নয়। আসলে তাদের নিজস্ব কিছু হিসাব আছে। তারা এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারহীন নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ের প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী। দুই বছর পর নির্বাচনে তাদের চাই শামীম ওসমানের মতো দক্ষ সংগঠক (তাঁর বিস্তর অভিযোগ থাকলেও)। সে ক্ষেত্রে আইভীকে দিয়ে তাদের প্রয়োজন পুরোপুরি সিদ্ধ হবে না। ইসি এ ক্ষেত্রে দৃঢ়তা দেখাতে পারত। কারো কারো মতে, সেনা মোতায়েন না করে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। সংবিধান লঙ্ঘন হোক বা না হোক, এ ক্ষেত্রে সরকারের ন্যায়নীতি ও নৈতিকতা ক্ষুণ্ন হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই।
লেখাটা এখানে শেষ হওয়ার কথা জয়-পরাজয়ের প্রেক্ষাপট রচনায়। কিন্তু ভোটের দিনে এক 'বম্বশেল'_গত মধ্যরাতে 'তৈমূরের নির্বাচন বর্জন ঘোষণা'। কারণ সেনা মোতায়েন না করা। এবার কী করবেন বিএনপি সমর্থক ভোটাররা? ঘরে বসে থাকবেন না শামীমবিরোধীকে ভোট দেবেন? এ প্রশ্নের জবাবের ওপর অনেকটা নির্ভর করছিল নির্বাচনের ফলাফল। তবে সেনা মোতায়েন না হওয়ায় শামীম ওসমান যে নিশ্চিত হয়েছেন তা বোঝা যায় তাঁর কথায়_'আল্লাহ আমাকে দিয়ে উন্নয়ন করাতে চান।' অর্থাৎ 'বিজয় নিশ্চিত'। ডা. আইভী মনে হয় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। এমন প্রশ্ন উঠেছিল, দেখা যাক নির্বাচন স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত হয় কি না এবং এতে কে জেতে? যেই জিতুক, আওয়ামী লীগের বর্তমান একাধিক আচরণ আগামী জাতীয় নির্বাচনে যে তাদের জন্য কিছুটা হলেও নেতিবাচক ছায়া ফেলবে, তাতে সন্দেহ নেই। এটা বিএনপি-জামায়াত, বিরোধীদলীয় বা নির্দলীয়_সবার জন্য দুঃসংবাদ। সবশেষে একটি কথা বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমের তথ্যাদি মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ করলে মনে হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিশেষত নারী সদস্য ডা. আইভীর পক্ষে। তবে এটা পরিস্থিতি বিচারে কাজে আসবে কি না সেটাও ছিল দেখার বিষয়।
শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী ছাড়াই র‌্যাব-পুলিশের সহায়তায় নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে শেষ হলো। এতে ডা. আইভীর ধস নামা বিজয় এবং শামীম ওসমান প্রথমে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ তুললেও নির্বাচনের পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে আগের সব অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। উপস্থিত সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক_সবারই এককথা : নির্বাচনে কারচুপি হয়নি। জনরায় বাধাবিপত্তি ছাড়াই এসেছে। এখন নির্বাচন-পরবর্তী সময় যাতে শান্তিপূর্ণভাবে কাটে_এটাই সবার প্রত্যাশা। প্রশাসন যেন কথাটা মাথায় রাখে।
আর একটা কথা সবশেষে_আওয়ামী লীগ যেন মনে না করে যে নারায়ণগঞ্জের ধারায় ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাচনও সেনা মোতায়েন ছাড়া সুষ্ঠুভাবে সমাপন সম্ভব। কারণ একটি কেন্দ্রে যা সম্ভব, ৩০০টি আসনে একযোগে নির্বাচনে তা এত সহজ নয়। আওয়ামী লীগের হিতৈষী হিসেবেই বলছি, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে ভুল, জাতীয় নির্বাচনে যেন তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচন, যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা_এ দুটো দিকেই যেন খেয়াল রাখা হয়। এটাই জনসাধারণের কাম্য। সব সময়ই একটা কথা মনে রাখা দরকার, সুষ্ঠু পরিবেশের নির্বাচনে সঠিক জনরায় পেতে দরকার পড়ে জনস্বার্থে কর্মতৎপরতা।
লেখক : ভাষাসংগ্রামী, প্রাবন্ধিক, কবি, রবীন্দ্র গবেষক

No comments

Powered by Blogger.