অলির ওপর যুবলীগের হামলা সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি তিন মামলা-মানহানি মামলায় জামিন

ট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গণে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ওপর হামলা চালিয়েছেন যুবলীগ নেতা-কর্মীরা। মানহানি মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে জামিন নিতে এলে তাঁর ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকালে বেশ কিছু গাড়িও ভাঙচুর করেছেন হামলাকারীরা। এ সময় এলডিপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন।


অলি আহমদের ওপর হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় পাল্টাপাল্টি তিনটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এ মামলাগুলো হয়। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ রাত সাড়ে ১১টায় বলেন, তিনটি মামলার মধ্যে দুটি আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পক্ষ থেকে এবং একটি এলডিপির পক্ষ থেকে করা হয়েছে। তিনি জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আফতাব আহমদ শিমুল বাদী হয়ে কর্নেল অলিসহ ১৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামান বাদী হয়ে দলের পক্ষ থেকে অন্য মামলাটি করেন। এ মামলায় আসামিদের অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে এলডিপি নেতা দোস্ত মোহাম্মদ বাদী হয়ে এলডিপির পক্ষে অজ্ঞাতপরিচয় ২০ জনকে আসামি করে
একটি মামলা করেন। মামলাগুলো রাত সোয়া ১১টায় নথিভুক্ত করা হয় বলেও জানান ওসি আবুল কালাম আজাদ।
অলি আহমদ গতকাল সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে আদালতে পেঁৗছার আগেই সেখানে তাঁকে প্রতিহত করতে জড়ো হন যুবলীগ নেতা-কর্মীরা। আর অলির সমর্থনে উপস্থিত হন এলডিপি নেতা-কর্মীরা। দুই পক্ষে একদফা হাতাহাতির পর অলি আহমদ আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হলে যুবলীগ নেতা-কর্মীরা তাঁকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল, আবর্জনা ও জুতা নিক্ষেপ করেন। তিনি জামিন নিয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পর আবারও তাঁকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ ঘটনায় আইনজীবী, আদালতের কর্মচারী ও সংবাদকর্মীসহ দুই পক্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। ঘটনার পর উভয় পক্ষ পরস্পরকে অভিযুক্ত করে কোতোয়ালি থানায় চারটি অভিযোগ করেছে।
হামলার ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেন কর্নেল অলি আহমদ। হামলার পর পুলিশ পাহারায় লালদীঘি পারে নিজ বাসভবনে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'জোটগত রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পরই সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এতে দেশের গণতন্ত্র বিঘি্নত হবে।' এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল কালাম আজাদের ইন্ধন রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, 'বুধবার রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কোতোয়ালি থানায় বসে হামলার পরিকল্পনা হয়েছে। এ কারণে আমি নিরাপত্তা চেয়ে সিএমপি কমিশনারের কাছে চিঠি দেওয়ার পরও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি।' তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ওনার অভিযোগ সত্য নয়। বুধবার রাতে যুবলীগের কয়েকজন নেতা এসে জানান যে কর্নেল অলি শোডাউন করবেন। এই নেতাদের আমি জানিয়েছি, সবকিছু আইনগতভাবেই চলবে।'
পুলিশ ও আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সকাল ১১টায় অলি আহমদ এলডিপি নেতা-কর্মী এবং বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতাসহ আদালতে পেঁৗছার আগেই সেখানে যুবলীগ ও এলডিপি কর্মীদের মধ্যে এক দফা সংঘর্ষ হয়। কর্নেল অলিকে বহনকারী গাড়ি সেখানে গেলে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ইট-পাটকেল ও জুতা নিক্ষেপ করেন। এতে তাঁর গাড়ির পেছনের কাচ ভেঙে যায়। এরপর নতুন আদালত ভবনের নিচতলা ও দোতলায় অলির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন সরকারদলীয় কয়েক শ নেতা-কর্মী। এ সময় যুবলীগের মহিলা কর্মীরাও জুতা নিয়ে মিছিলে অংশ নেন।
সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে পুলিশ ও এলডিপি-বিএনপির নেতা-কর্মী বেষ্টিত হয়ে অলি আহমদ চট্টগ্রাম মহানগর মুখ্য হাকিম মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদালতে প্রবেশ করেন। আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগ থেকেই এজলাস কক্ষের দুটি দরজার একটির সামনে জুতা হাতে স্লোগান দিতে থাকেন সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা। অন্য দরজার সামনে অলির পক্ষে স্লোগান দেন এলডিপি সমর্থকরা। সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে মামলার বাদী আফতাব আহমেদ শিমুল সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ান। পরক্ষণে মামলার কার্যক্রম শুরু হলে উভয় পক্ষের অর্ধ শতাধিক আইনজীবী জামিনের পক্ষে-বিপক্ষে হট্টগোল শুরু করেন। মাত্র চার মিনিটের মধ্যেই আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে জামিন মঞ্জুর করে পরবর্তী শুনানির তারিখ ২৭ নভেম্বর নির্ধারণ করেন।
জামিন শেষে নিচতলায় নেমে কর্নেল অলি বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করলে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা টাইলস ভেঙে তাঁর দিকে বৃষ্টির মতো নিক্ষেপ করতে থাকেন। সংবাদকর্মী ও উপস্থিত এলডিপি-বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছোটাছুটি শুরু করেন। এ সময় দুই পক্ষে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষ বাধে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলা-সংঘর্ষকালে এটিএন টিভির ক্যামেরাম্যান মোহাম্মদ ফরিদ, সময় টিভির বিপ্লব মজুমদার, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট কফিল, অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ, সাতকানিয়া উপজেলা এলডিপির সভাপতি এ জি এম শাহজাহান, আবদুর রহিম, সাবেক মহিলা মেম্বার বুলু আক্তারসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন।

আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এ হামলা
চালিয়েছে : খালেদা জিয়া
অলি আহমদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অলি আহমদের ওপর তিন দফা হামলা চালিয়েছে।
গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে অলির ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, মিথ্যাবাদী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার মুখে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের বুলি আওড়ালেও তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত ও অপমান করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্ত্তমূলক শান্তির দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, 'আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বর্তমান সরকার ও সরকারি দলকে বলে দিতে চাই, আপনারা আপনাদের সন্ত্রাসী গুণ্ডাপাণ্ডাদের সামলান। অন্যথায় এর চরম দায় আপনাদের বহন করতে হবে।' তিনি অলিসহ আহত অন্যদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।
অন্য এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পরিকল্পিতভাবে জীবননাশের উদ্দেশ্যেই অলি আহমদের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে। তিনি এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।

হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা : বিএনপি
অলি আহমদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। গতকাল দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আমরা মনে করি, অলিকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে পুলিশের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।' তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে কর্নেল অলি একাত্মতা ঘোষণা করেছেন বলেই তাঁর ওপর এ হামলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিএনপি নেতাদের নিন্দা
অলি আহমেদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে যৌথভাবে বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সহসভাপতি সামসুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, আদালত চত্বরে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা অগণতান্ত্রিক এবং ফ্যাসিস্ট রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। তাঁরা অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরী পৃথক বিবৃতিতে এ হামলার নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

জোটের সংসদ সদস্যদের নিন্দা
অলি আহমদ এমপির বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সদস্যদের অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের এমপিরা। একই সঙ্গে অলি আহমদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তাঁরা।
বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য জেড আই এম মোস্তফা আলী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। এতে ২৭ জন এমপির স্বাক্ষর রয়েছে। বিবৃতিতে বিরোধীদলীয় সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যদের হস্তক্ষেপ বন্ধেরও দাবি জানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.