টিপাইমুখ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে মিথ্যাচার করেছেন : ফখরুল

টিপাইমুখ বাঁধে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে_সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এ বক্তব্য মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কথা বলতে ভালোবাসেন; কিন্তু যখন বলেন তখন সত্য না মিথ্যা বলেন, তা নিজেই বোঝেন না। প্রধানমন্ত্রীকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'সেখানে দেখতে পাবেন, খালেদা জিয়া এই বাঁধ বন্ধের জন্য তিনবার চিঠি দিয়েছেন।


অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত তিন বছরেও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধে কোনো কথা বলেনি। তাই সরকারকে বলতে চাই, মিথ্যাচার করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। কারণ জনগণ জানে কারা দেশের স্বার্থের জন্য কাজ করে আর কারা বিকিয়ে দেয়।'
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। শহীদ ডা. মিলনের ২১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে 'অবরুদ্ধ গণতন্ত্র ও বাংলাদেশ' শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম, নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, অধ্যাপক ডা. আবদুল মান্নান, অধ্যাপক ডা. আবদুস সালাম, অধ্যাপক ডা. আখতার হোসেন খান প্রমুখ।
ডা. মিলন হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত ও বিচারের জন্য ড্যাবকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ডা. মিলন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। তিনি বলেন, ঢাকা সিটিকে দুই ভাগ করার যে বিল গতকাল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, যত দিন নির্বাচন না হবে তত দিন প্রশাসক থাকবে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আদালত রায়ে বলেছেন, এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ডই হচ্ছে আওয়ামী লীগের নীতি। অর্থাৎ আমার জন্য এক নীতি, অন্য সবার জন্য আরেক নীতি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সরকার আবার ফ্যাসিবাদী চেহারায় বাংলাদেশের জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। একে একে গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। শেয়ারবাজার থেকে দলীয় লোকেরা এক লাখ কোটি টাকা লুট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। ফলে নানাভাবে চেষ্টা করলেও মৃত প্রাণ আর জেগে উঠছে না। অর্থনীতি চরমভাবে রসাতলে যাচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে।
রেন্টাল পাওয়ারে বিশাল ভর্তুকি দেওয়ায় দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন ব্যাংকে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। রেন্টাল পাওয়ারের নামে দেশের আইন পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। বিনা টেন্ডারে নিজেদের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শত শত কোটি টাকার কাজ নিয়েছে। তারা জনগণের সমস্যা সমাধানের কোনো পথ জানে না। তারা জানে জনগণকে বিভ্রান্তি করতে। তিনি বলেন, 'সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আইনে সেনাবাহিনী দেওয়ার কথা থাকলেও কুমিল্লার নির্বাচনে তারা সেনাবাহিনী দেবে না। ইভিএমে কিভাবে কারচুপি করা যায় তা সংবাদ সম্মেলনে প্রজেক্টর দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি। এর পরও তারা ইভিএমে ভোট গ্রহণ করবে।' তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না_গতকাল সিইসি এ বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের কথা মেনে নিয়েছেন।
এরশাদকে স্বৈরাচার আখ্যায়িত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, যে মানুষটি ৯ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষকে স্বৈরাচারী শাসনে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন, সেই মানুষটিকে নিয়েই গণতন্ত্রের মানসকন্যা মহাজোট গঠন করেছেন। ছিয়ানব্বই সালেও এই এরশাদের সমর্থন নিয়ে তিনি সরকার গঠন করেছিলেন। এতেই প্রমাণ হচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুখে সামরিক শাসনের বিপক্ষে বললেও সব সময় সামরিক শাসনের পক্ষেই ছিলেন। তিনি বলেন, হিটলারও নির্বাচিত চ্যান্সেলর ছিলেন, এই হিটলার সারা বিশ্বে হত্যার রাজনীতি করেছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী, দেশে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান নেই, বেকারত্ব বাড়ছে। গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের সংকট চলছে। জ্বালানিসহ সব তেলের দাম বারবার বাড়ানো হচ্ছে। সরকার বুঝে গেছে, এ অবস্থায় সামনের নির্বাচনে তারা জয়ী হতে পারবে না; সে জন্য দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। এখন শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষ এই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচনে যতই ইভিএম ব্যবহার, যতই কলাকৌশল করুক না কেন, এই সরকারকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তিনি বিভিন্ন পেশাজীবীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ন্যাপের মানববন্ধন : বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বলেছেন, বাংলাদেশকে দেওয়া আগের প্রতিশ্রুতির প্রতি কোনো শ্রদ্ধা না দেখিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে বিতর্কিত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের চুক্তি চূড়ান্ত করেছে ভারত। এ ক্ষেত্রে ভারত আন্তর্জাতিক আইনের কোনো তোয়াক্কা করছে না। এ আচরণ কোনোভাবেই সৎ প্রতিবেশীসুলভ হতে পারে না। তিনি বলেন, ভারতের অব্যাহত আগ্রাসনের কারণে স্বাধীনতার ৪০ বছরেও বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। আর শাসকগোষ্ঠীর নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও ভারত তোষণনীতি সমভাবে দায়ী।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাপ কুষ্টিয়া জেলা আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ন্যাপ জেলা আহ্বায়ক শেখ মতিউর রহমান। বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার সাজেদুর রহমান বাবলু, এনপিপির যুগ্ম মহাসচিব শেখ ইকবাল হাসান স্বপন, এনপিপির জেলা সভাপতি আবু আহমেদ আল মামুন দীপু, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক নুরুল ইসলাম আসাদ, বাংলাদেশ ন্যাপের সহকারী মহাসচিব মীর হারুন-অর-রশিদ ইদ্রিস, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাফেজ শেখ নাসির, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক এম এন শাওন সাদেকী, পাবনা জেলার আহ্বায়ক রুস্তম আলী, কুষ্টিয়া জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল খালেক, মো. নাসিরুল ইসলাম, মফিজউদ্দিন মেম্বার, দৌলতপুর উপজেলার আহ্বায়ক হাফেজ মো. আলম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.