বেহাল সড়ক-পথে পথে মৃত্যুফাঁদ

দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো বেহাল। কয়েক মাস আগে বেহাল সড়কগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত ঈদুল ফিতরের আগে বেহাল সড়কগুলোর কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশের যোগাযোগব্যবস্থা। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় দেশের ১৮ জেলায়। ওই সময় বেহাল সড়ক মেরামতের জন্য দেশের কর্তাব্যক্তিদের দৌড়ঝাঁপ ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু তাঁদের সে দৌড়ঝাঁপের ফলটা কী দাঁড়াল? দেখা যাচ্ছে, বিপুল ব্যয়ের পরও দেশের সড়কপথের করুণ দশা কাটেনি।


কোনো কোনো সড়ক মেরামতের পর ফিরে গেছে আগের অবস্থায়। বেহাল সড়ক-মহাসড়কগুলো এখনো জনভোগান্তির অন্যতম কারণ। দেখা যাচ্ছে, দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এখনো পড়ে আছে আগের অবস্থায়ই। আসন্ন ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষকে যে এই বেহাল সড়কের কারণে আবারও বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই।
দেশের সড়কপথের ২১ হাজার কিলোমিটার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে। বাকি সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ বিভাগ গত ঈদের আগে ও পরে চার হাজার ৯৬০ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করেছে। গত তিন মাসে সড়ক মেরামত বাবদ খরচ হয়েছে ২৩৩ কোটি টাকা। তার পরও দেশের সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী হয়েছে, তা বলা যাবে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক মেরামতে গত এক বছরে ৫০ কোটি টাকা খরচ করার পরও সড়কটির ৭২ কিলোমিটার এখনো ভাঙাচোরা অবস্থায় আছে। বেহাল সড়কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে করুণ অবস্থায় ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ৩৫ কোটি টাকা খরচ করে এই মহাসড়কের গাজীপুর অংশ মেরামতের পরও অনেক জায়গা এখনো খানাখন্দে ভরা। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যশোর থেকে অভয়নগর পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগ জায়গা খানাখন্দে পূর্ণ। হাটিকুমরুল-বনপাড়া সড়কের কিছু অংশ দেবে গেছে। কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের বিভিন্ন জায়গা জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হলেও সে রাস্তা যে চলাচলের উপযোগী, এমন কথা বলা যাবে না। মেরামতের পরও আগের অবস্থায় ফিরে গেছে বরিশাল-ভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। চলাচলের অনুপযোগী ফতুল্লা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক। দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় যাওয়ার রাস্তাটিও বেহাল।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, দেশের সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ একেবারে কম নয়। এই বরাদ্দের বাইরেও ১৫২টি প্রকল্প আছে। এসব প্রকল্পের জন্য অর্থও ছাড় করা হয়েছে। কিন্তু সড়কের দুর্দশা ঘুচছে না। মেরামতের পর আবার আগের জায়গায় ফিরে যাচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ দিতে গিয়ে নিয়মনীতি মানা হয়নি। টেন্ডার আহ্বান না করেই পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ঠিকাদাররা নিজেদের মতো করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে নিয়েছেন। ফলে টাকা খরচ হলেও সড়ক-মহাসড়কের করুণ দশা কাটেনি। পথে পথে এখনো পাতা রয়েছে মৃত্যুফাঁদ। নামে মেরামত হলেও এদিকে কি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আছে?

No comments

Powered by Blogger.