বাঞ্ছারামপুরে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় দরিদ্র ও অতিদরিদ্র ৫৪১টি পরিবারকে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করেছে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গারামপুর গ্রামে ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কার্যালয়ে সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত এই ঋণ বিতরণ করা হয়।বসুন্ধরা গ্রুপের বিভাগীয় প্রধান (অর্থ ও হিসাব) ময়নাল হোসেন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দরিদ্রদের মাঝে ঋণ বিতরণ করেন।


এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক মাইমুন কবির, নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একান্ত সচিব মো. শাহজালাল, বাঞ্ছারামপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হজরত আলী, পাহাড়িয়াকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গণি তালুকদার, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন, জুনিয়র অফিসার আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সুদমুক্ত ঋণে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ৫৩টি গ্রামের নারীরা এখন স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। ইতিমধ্যে প্রায় চার হাজার নারীর মুখে হাসি ফুটিয়েছে বসুন্ধরার এই সুদমুক্ত ঋণ। অভাব-অনটনের ঘরে এসেছে সচ্ছলতা। সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিত ও দুস্থ অসহায় নারীদের ২০০৫ সাল থেকে 'পল্লী ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের' আওতায় ঋণ সহায়তা দিয়ে আসছে দেশের বৃহত্তম শিল্প উদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল দুর্গারামপুর ইউনিয়নের নতুন ২৯৫ ও পুরনো ২৪৬ জন সদস্যের মাঝে সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। মোট ৫৪১ জনের মধ্যে পুরনো ২৪৬ জনকে সাত হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ১৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং নতুন ২৯৫ জনকে পাঁচ হাজার টাকা করে ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়।
ঋণ বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ময়নাল হোসেন চৌধুুরী বলেন, 'অনুৎপাদনশীল ও সমাজবিরোধী কাজে ব্যবহারের জন্য এই ঋণ নয়। এটি দেওয়া হয়েছে অতিদরিদ্র মানুষ যাতে করে আর্থিকভাবে সচ্ছল ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে।' তিনি ঋণগ্রহণকারী মায়েদের তাঁদের সন্তানদের মাদক থেকে দূরে রাখার আহ্বান জানান। তিনি এলাকার প্রতিবন্ধীদের মাঝে আগামীতে ঋণ বিতরণের আশ্বাসও দেন।
ঋণ পেয়ে দরি ভেলানগরের রহিমা বেগম তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'এখান থেকে টাকা নিয়ে একটি মুদি দোকান দিব। ব্যবসা করেই টাকা পরিশোধ করব এবং স্বাবলম্বী হব।' একই গ্রামের আলেয়া বেগম বলেন, 'ঋণ নিয়ে ফসলি জমি চাষাবাদ করব। ফসল উৎপাদন করে সংসার চালাব। এইভাবে অভাব-অনটন দূর হয়ে সংসারে সচ্ছলতা আসবে।' জানা গেছে, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের বিতরণ করা ঋণ আদায়ের হার শতভাগ। বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রকৃত মূলধন ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। চক্রাকারে ২০১১-এর ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিন হাজার ৩৬৭ জন দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে ৩৩ ধরনের স্কিমের আওতায় দুই কোটি ৪১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের এই ঋণ বিতরণ কর্মসূচি দেশের দরিদ্রদের মাঝে প্রথম সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ কার্যক্রম। ঋণ নেওয়ার প্রথম তিন মাসে কোনো কিস্তি আদায় হয় না। চতুর্থ মাস থেকে আদায় হওয়া কিস্তির অর্থই আবার ঋণ আকারে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন তা গ্রহণ করে না। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কি না, তা পর্যবেক্ষণে একটি দল গোপনে কাজ করে যাচ্ছে। বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক চান মিয়া বলেন, ঋণগ্রহীতারা এত দুস্থ যে ফেরত পাবে না মনে করে কোনো এনজিও তাঁদের ঋণ দিতে সাহস পায় না। এ ক্ষেত্রে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ ব্যতিক্রম। এর ফলে এলাকায় হাজার হাজার পরিবার সচ্ছল হয়ে উঠছে। এদিকে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল বাঞ্ছারামপুর ইসলামিয়া সুবানিয়া সিনিয়র আলিয়া মাদ্রাসায় ৩৮টি বৈদ্যুতিক পাখা বিতরণ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.