পুঁজিবাজার-আস্থা ফেরাতে ইতিবাচক উদ্যোগ

পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়ানো, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাসহ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একগুচ্ছ প্রণোদনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই এসব পদক্ষেপ প্রত্যাশিত ছিল। বিশেষভাবে বিবেচনায় ছিল চলতি বছরের গোড়ার দিকে পুঁজি বাজারে উত্থান-পতনে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি। শেয়ারবাজারে অব্যাহত অস্থিরতা ও দরপতনের মুখে ১৬ নভেম্বর


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে যেসব নির্দেশনা প্রদান করেন, গুচ্ছ প্রণোদনায় তার প্রতিফলন রয়েছে বলেই সংশ্লিষ্ট সব মহলের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনেও তা প্রতিফলন পড়ছে বলে প্রতীয়মান হয়। তবে রাতারাতি বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করবে এবং 'মহাউত্থানপর্বে' ফিরে যাবে, এমন প্রত্যাশা করা ভুল হবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষিত হিসাবের গুণগত মান উন্নয়ন, ইনসাইডার ট্রেডিং আইন শক্তিশালী করা, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার আইন যুগোপযোগী করা _ এ ধরনের পদক্ষেপ সুনির্দিষ্ট করে বাস্তবায়নে সময় প্রয়োজন পড়বে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা, ব্যবস্থাপনা ও লেনদেন ব্যবস্থা পৃথক করার কাজও এক বিজ্ঞপ্তিতে করা সম্ভব নয়। বিনিয়োগ উপদেশ সেবা চালু, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করায় প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নির্দেশনা তৈরি, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর মূলধন বৃদ্ধি এবং তাদের পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা প্রভৃতি পদক্ষেপ বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য অপরিহার্য বিবেচিত হচ্ছে। সর্বোপরি রয়েছে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখনও স্বাভাবিক চরিত্র নিয়ে দাঁড়াতে পারছে বলে অভিমত রয়েছে এবং তা অমূলক বলা যাবে না। এ বাজারে ঝুঁকি রয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নগদ পুঁজির মতোই বিবেচিত হয়। যে কোনো ব্যবসায়েই লাভ-লোকসান রয়েছে। কিন্তু বারবার দেখা যাচ্ছে, বাজার একটু চাঙ্গা হতে থাকলেই বিপুলসংখ্যক লোক এমনকি ধারদেনা করেও সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন শুরু করে। তারা গুজবে কান দেয়, প্রতিদিন লাভের প্রত্যাশা করে এবং বাজারে দরপতনের ঘটনায় চরম অস্থিরতা প্রকাশ করে। এটা ঠিক যে, সংঘবদ্ধ একটি মহল বিভিন্ন সময়ে বিপুলসংখ্যক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে অতিমাত্রায় লাভের প্রত্যাশা দেখিয়ে বাজারে টেনে এনেছে এবং তাদের একটি বড় অংশ দ্রুতই মূলধন হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি এবং বাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মহল তাদের দায় এড়াতে পারে না। সরকারের ব্যর্থতাও বহুল আলোচিত। ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে বিপর্যয়ের সময়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। সরকারের গঠিত একটি তদন্ত কমিটি বিপর্যয়ের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, প্রায় দেড় দশক অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত কারও শাস্তি হয়নি। সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটিও চলতি বছরের বিপর্যয়ের জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো পদক্ষেপ সরকারের তরফে নেওয়া হয়নি, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ফের বাজারে ফিরে আসতে ভরসা পায়। তারা এটাই দেখতে চায় যে, বাজারে কারসাজি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর মনোভাব নিয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি সরকারের তরফ থেকে এ ধরনের ইতিবাচক সংকেতও প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.