ভর্তির নামে চলছে গলাকাটা-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হোক

টাকার অভাবে মেয়েকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করাতে পারেননি রংপুরের অলোকনাথ। বাবা হয়ে তিনি এই ব্যর্থতার গ্লানি সহ্য করতে পারছিলেন না, তাই আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা তখন মেয়েকে ভর্তির আশ্বাস দিয়ে তাঁকে শরবত পান করিয়েছিলেন। এর পরও স্থানীয় প্রাইম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর মেয়েকে ভর্তি করেনি, বরং এককালীন ১১ লাখ এবং মাসিক বেতন ১২ হাজার টাকা নিয়মিত


পরিশোধের প্রতিশ্রুতি চেয়েছে। তিনি তাদের দাবি পূরণে ব্যর্থ হন। তাই আবারও তিনি অনশনে মৃত্যুর পথই বেছে নেন। ৩০ অক্টোবরের কালের কণ্ঠে এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
শিক্ষা, বিশেষ করে মেডিক্যাল শিক্ষা, এখন দেশের একটি প্রধানতম পণ্য। আর সন্তানের জন্য এই পণ্যটি কিনতে ব্যর্থ হয়ে দেশের অগণিত বাবা প্রতিদিন অলোকনাথের মতো আত্মগ্লানি অনুভব করছেন। নিজের অক্ষমতার জন্য কেবলই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছেন। অলোকনাথ সমাজকে জানিয়ে দিচ্ছেন, একজন বাবার অক্ষমতার গ্লানি কতটা কষ্টকর। সম্ভবত এ দেশের ৯৫ শতাংশ বাবার অবস্থাই অলোকনাথের মতো কিংবা এর চেয়েও খারাপ। একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এ বছর ঢাকার কোনো কোনো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হচ্ছে। এর পরও থাকে ভ্যাট, হোস্টেল খরচ, অত্যধিক মাসিক বেতন, সেশন ফি_এমনি আরো অনেক কিছু। প্রতিবছরই এই অঙ্ক বেড়ে চলেছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। 'বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা, ২০১১' প্রণয়ন করা হলেও তাতে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। নীতিমালায় ভর্তি ফি নির্ধারণসংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। তা ছাড়া এ বছর সরকারি মেডিক্যাল কলেজে আবেদনের সময় শেষ হওয়ার আগেই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে আবেদনের শেষ তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ভর্তিচ্ছুরা পড়েছে নতুন বিপদে।
৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি। কেন? শিক্ষাকে কেবলই পণ্য করার জন্য? কিংবা ৯৫ শতাংশ মানুষ উচ্চশিক্ষা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে সে জন্য? শুধু শিক্ষা নয়, ক্রমে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকারও হারাচ্ছে দেশের অধিকাংশ মানুষ। ১৯৭২ সালে এ দেশে এইচএসসি পাস করা কত শতাংশ ছাত্রের জন্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছিল, আর এখন কত শতাংশের জন্য সে সুযোগটি রয়েছে? কেন তা সমানুপাতিক হয়নি? কেন রাষ্ট্রীয়ভাবে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ দিন দিনই নিম্নগামী হচ্ছে? রাষ্ট্রক্ষমতায় যাঁরা আছেন, আর যাঁরা ছিলেন_এই প্রশ্নগুলোর উত্তর একদিন তাঁদের দিতেই হবে। কারণ ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। আমাদের রংপুর অফিস জানিয়েছে, সর্বশেষ জেলা প্রশাসক বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের অনুরোধে অলোকনাথ আবারও অনশন ভেঙেছেন। কিন্তু সরকারের নীতিমালায়ই যেখানে গলদ রয়েছে, সেখানে জেলা প্রশাসকই বা কী করবেন? অলোকনাথদেরই বা কী হবে?

No comments

Powered by Blogger.