শিক্ষাই নারী নির্যাতন রোধের হাতিয়ার by হেলাল হোসেন ঢালী

মাদের সদ্য প্রণীত শিক্ষানীতিতে প্রজনন স্বাস্থ্য ও জেন্ডার বিষয়ক কোর্সের কথা বলা হয়েছে। যদিও শিক্ষানীতির শেষাংশে মাধ্যমিক স্তরের কোর্স তালিকায় কোথাও এ বিষয়ক কোর্সের উল্লেখ নেই। যা হোক, এ বিষয়ক কোর্স পাঠের প্রয়োজনীয়তা এই শিক্ষানীতিতেই প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়, যেটা বর্তমান সরকারের প্রগতিশীল ও দূরদর্শী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। তবে শুধু মাধ্যমিক স্তরে নয়, এ বিষয়ক আলোচনা বা পাঠ্যবই প্রাথমিক স্তরেও থাকা উচিত।


কেননা মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠনের সময়ে এ বিষয়ক শিক্ষা প্রদান করা না হলে এক ধরনের শূন্যতা নিয়েই একটি শিশু বেড়ে ওঠে। শিশুকালটা এমন একটা সময় যখন শিক্ষকদের কথা, পাঠ্যপুস্তকের কথা 'বেদবাক্য' বলে মনে হয়। সেই স্তরে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ শীর্ষক বিষয়টি না থেকে শুধু উচ্চশিক্ষার বিষয় হতে পারে না।
আবার এ কথাও সত্যি, বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ারও সুযোগ নেই। যতটুকু সুযোগও আছে, তা প্রতুল নয়। কয়েক লাখ শিক্ষার্থী প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বের হয়। সেখান থেকে এ বিষয়ক শিক্ষা নেওয়ার সুুযোগ পায় জনা পঞ্চাশেক। একদিকে এত কমসংখ্যক জেন্ডার সচেতন শিক্ষার্থী দিয়ে নির্যাতনবিহীন একটি আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়াটা যেমন সম্ভব নয় অন্যদিকে যারা সুযোগ পাচ্ছে প্রাথমিক স্তর থেকে সুযোগটা না থাকায় তাদের মানসিক পরিবর্তনটাও কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
তাই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের একটা অন্যতম উপায় হতে পারে শিক্ষা। প্রচারমাধ্যম, পরিবার তথা সামাজিকীকরণের অন্যান্য মাধ্যম নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। তবে কাজটি শুরু করতে হবে 'শিক্ষা'কে ঘিরেই। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, পাঠ্যসূচির পরিবর্তন, অন্যান্য বিষয়ের জন্য ব্যবহৃত চিত্র, সূচি প্রভৃতি বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে যে জেন্ডার বৈষম্যমূলক চিত্র থাকে (যদিও এ ধরনের বৈষম্যমূলক চিত্রের ব্যবহার এখন অনেক কম) তা একটি শিশুর মনে একবার গেঁথে গেলে সেখান থেকে বের হয়ে আসাটা কষ্টসাধ্য। সে কারণে জেন্ডার বিষয়ক সুনির্দিষ্ট কোর্স প্রণয়নের পাশাপাশি অন্যান্য পাঠ্য বইয়ে জেন্ডার বৈষম্যমূলক চিত্র, পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করা জরুরি।
নারী নির্যাতন, জেন্ডার বৈষম্য প্রভৃতি আলোচনা যখন আসে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের অনেক সহকর্মীই উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের দিকে তাকান এবং এটাও বলেন, এটা তো আপনাদেরই বিষয়। কিন্তু এটা কি শুধু একটা বিভাগের বিষয়? এটা ঠিক, এই বিভাগ জেন্ডার সহিংসতা প্রতিরোধের আলোকবর্তিকা সব জায়গায় পেঁৗছে দিতে পারে। তবে এ দায়িত্ব সবার। এবং সেটা শুধু উচ্চশিক্ষার পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থেকে সম্ভব নয়। এটা ছড়িয়ে দিতে হবে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে সর্বস্তরের শিক্ষায়।
আজ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক দিবসে, সংশ্লিষ্টদের এই তাগিদই দিতে চাই।

হেলাল হোসেন ঢালী : শিক্ষক, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
helaldhali@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.