প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের প্রতিবেদন-রাষ্ট্রায়ত্ত ৩৯ কারখানা লোকসানে-* বার্ষিক দায়দেনা চার হাজার ৩০৫ কোটি টাকা -* লোকসানের পরিমাণ তিন হাজার ৩৪ কোটি টাকা -* লোকসানি কারখানাগুলোকে বেসরকারীকরণের সুপারিশ by ফারজানা লাবনী

স্ত্র ও পাট এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত ৩৯টি কারখানাই লোকসানি। এসব কারখানার বার্ষিক দায়-দেনা রয়েছে চার হাজার ৩০৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। লোকসানের পরিমাণ তিন হাজার ৩৪ কোটি দুই লাখ টাকা। ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দীর্ঘদিন বন্ধ ১৩টি, পাঁচটি আংশিকভাবে চলছে। বাকি ২১টি চালু আছে। প্রাইভেটাইজেশন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।


কমিশনের চেয়ারম্যান মির্জা জলিল গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রাইভেটাইজেশন কমিশন থেকে সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেমন চলছে, তার ওপর ধারাবাহিকভাবে সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। প্রথমপর্যায়ে দুটি মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৯০টি কারখানার মধ্যে ৩৯টি নিয়ে কাজ করা হয়েছে। বাকিগুলো নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করা হবে, জানান তিনি।
তিনি বলেন, কমিশন থেকে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল সরেজমিনে বিভিন্ন কারখানায় যায়। সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে। এর পরই বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া রিপোর্টগুলো একত্রে সমীক্ষা আকারে গত মাসে প্রকাশ করেছে, যা চলতি সপ্তাহে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তা।
মির্জা জলিল আরো বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অধীন কমিশন পরিচালিত হয়। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে সরকারি কল-কারখানার হালচাল সম্পর্কে অবহিত করা। ঈদের আগেই প্রধানমন্ত্রীকে এ সমীক্ষা রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, চলতি সপ্তাহে তিনি এ বিষয়ে ইতিবাচক গঠনমূলক সুপারিশমালা প্রদান করবেন।'
মির্জা জলিল চ্যালেঞ্জ করে বলেন, সমীক্ষা প্রতিবেদনে প্রকাশিত প্রতিটি তথ্য সঠিক। দিনের পর দিন এসব কারখানা সচল রাখতে সরকারি তহবিল থেকে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, যা সমগ্র অর্থনীতিতে নেতিবাচব প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া বন্ধ একাধিক কারখানায় হাজার হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের গরিব দেশের পক্ষে বছরের পর বছর এসব প্রতিষ্ঠানের দায়দেনা এবং লোকসান বহন করা সম্ভব নয় বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
লোকসানি কারখানাগুলোকে বেসরকারীকরণের সুপারিশ করে মির্জা জলিল বলেন, ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করা হলে ৩৯টি কারখানায়ই মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে। সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেঙ্টাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি) পরিচালিত ১৫টি টেঙ্টাইল মিলের মধ্যে একমাত্র ভালিকা উলেন মিলস করপোরেশন বর্তমানে চালু আছে। পাঁচটি মিল রাজশাহী টেঙ্টাইল, সুন্দরবন টেঙ্টাইল, বেঙ্গল টেঙ্টাইল, কুড়িগ্রাম টেঙ্টাইল এবং দারোয়ানি টেঙ্টাইল আংশিকভাবে সার্ভিস চার্জে চলছে। সার্ভিস চার্জে চলা এ পাঁচটির মধ্যে চারটিই লোকসানি। একমাত্র সুন্দরবন টেঙ্টাইল না লাভ না ক্ষতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। বিটিএমসির বাকি ৯টি মিল দীর্ঘদিন বন্ধ।
করপোরেশনের ১৪টি মিলের দায়দেনার পরিমাণ ৮৮২ কোটি ১৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা এবং লোকসানের পরিমাণ ৮৬২ কোটি দুই লাখ ১৯ হাজার টাকা। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন রাজশাহী জুটমিলের দায়দেনার পরিমাণ ১৯৪ কোটি ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। লোকসানের পরিমাণ ১২৬ কোটি ২৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) পরিচালিত কাগজ, চামড়া, সিমেন্ট খাতের মোট ৯টি মিলের চলতি ও দীর্ঘমেয়াদি দায়দেনার পরিমাণ এক হাজার ৯৭৩ কোটি ৫১ লাখ ২১ হাজার টাকা। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। চালু পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটিই লোকসানি। উসমানিয়া গ্লাসশিট ফ্যাক্টরি এ করপোরেশনের অধীন একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান। লোকসানি এ আটটি প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণ এক হাজার ২১০ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার টাকা।
একই মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল সংস্থা পরিচালিত চারটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দায়দেনার পরিমাণ ৪৬০ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ আছে, শিল্প মন্ত্রণালয়েরই অধীন থাকা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বন্ধ ১০টি মিলের সব কয়টিই বছরের চার মাস চালু অবস্থায় থাকে। এ সংস্থার ৯টিই লোকসানি প্রতিষ্ঠান। কেরু অ্যান্ড কম্পানি এ খাতের একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বাকি ৯টি প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণ ৮২৯ কোটি ৪২ লাখ ২৬ হাজার টাকা এবং দায়দেনার পরিমাণ ৭৯৪ কোটি ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

No comments

Powered by Blogger.