বোমা-কিশাম প্রিয়কুমার, অনুবাদ : আন্দালিব রাশদী

মোহন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বোমাটা বিস্ফোরণের জন্য একটা জায়গা তাকে খুঁজে বের করতেই হবে।এ চিন্তাটা কয়েক দিন ধরে তাকে জ্বালিয়ে মারছে, রাতে ঘুমাতে দিচ্ছে না। ক্লান্ত হয়ে, এমনকি দিনের বেলাও নিজেকে আটকে রাখছে, সময়ের বড় অংশটাই কাটছে জানালার পাশের চেয়ারে বসে, আসন্ন দৃষ্টিতে পথচারীদের যাওয়া-আসা দেখে। এর সবই মোহনের জন্য নতুন। এটা তার জন্য বড় যন্ত্রণারও কারণ।


যখন ঘুমাতে গেল, ভোর হয় হয় অবস্থা। কিন্তু শিগগিরই মনে হলো, বাবার অবিরাম কাশির শব্দ তাকে আবার ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়েছে। সকাল ততক্ষণে বেশ খানিকটা এগিয়েছে। পাশের কক্ষটিতে বাবা সম্ভবত তখনো বিছানায়। বেশ কয়েক দিন ধরে বাবা এভাবেই কেশে চলেছেন।
মোহন ভাবল, একবার উঠে গিয়ে বাবাকে দেখে আসবে। যদি সে যায়ই তাহলে কী-ই বা করতে পারবে? বাহ্যিক এ সহানুভূতি কী কাজে আসে? মোহন চোখ বন্ধ করে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে।
কিন্তু বোমার চিন্তা তাকে আবার পেয়ে বসে। বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো কি সঠিক কাজ_নিরপরাধ মানুষে ভরপুর একটি ট্রেনে? শহরের কোনো জনাকীর্ণ প্রান্তে? প্রতিটি কাজের একটা কারণ রয়েছে। কিন্তু সব কারণই কি সঠিক কারণ? অন্যের ভেতরের ভাবনা পরিমাপের উপায় কী? হতে পারে এগুলো সব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে চিন্তা, তার পরও ব্যাপারটা বোমা_হঠাৎ করে বোমার বিস্ফোরণে মানুষের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, অন্যরা পঙ্গু, মরতে বসেছে। নিজের চোখে এসব দেখা কিংবা রেডিওতে বিবরণ শোনা!
এটাকে বেশ একটা মজার ব্যাপার হিসেবেও দেখা যেতে পারে। কিন্তু মোহন তো তা চাইছে না। মোহন চায়, প্রতিটি কাজের একটি সঠিক ও ন্যায্য কারণ থাকতে হবে।
বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছে যে যুবক, সে কোথায় ছিল? আর কোন কারণে সে এই অবিস্ফোরিত বোমা তার কাছে হস্তান্তর করল?
'আমার পথটা বেশ ঝামেলার মনে হচ্ছে। এটা তোমার কাছে রেখে যাই। আমি আবার ফিরে আসব, দু-এক দিনের মধ্যেই তোমার কাছ থেকে এটা নিয়ে যাব।' তখন বিকেলের মধ্যভাগ, আশপাশে কেউ নেই। যুবক দ্রুত তার রুমে ঢুকে ব্যাগটা তার দিকে ঠেলে দিল এবং মোহনকে বিস্মিত হওয়ার বা কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল।
মোহন ব্যাগ খুলেছে। খুলেই ভেতরে বোমাটা দেখে। বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যায়। ভয় ধরে। এখন কী করণীয়, এ সিদ্ধান্ত নিতে প্রথম কয়টি মুহূর্ত তার এমনিতে কেটে যায়। তারপর নিজেকে ঠাণ্ডা করে মোহন বোমাটা প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে চুপি চুপি বাড়ির পেছনে শৌচাগারের ভেতর ডুবিয়ে দেয়।
যুবক পরদিন কিংবা তার পরদিন আসেনি। অনেক দিন কেটে যায়। মোহন অস্বস্তিতে ভোগে। উত্তেজিত অবস্থায় থাকে। পুরোপুরি আতঙ্কগ্রস্ত। খেতে পারছে না, ঘুমাতেও না।
এটা তো এতক্ষণে মোহনের বাড়ির পেছন দিকটায় কবরস্থ হয়ে গেছে। তার এত ভয় পাওয়ার কী আছে? কিন্তু যখনই সে রাস্তায় সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য কিংবা পুলিশের কাউকে দেখে, মনে হয় শীতল ঘাম তাকে ভিজিয়ে দেয়। এখন, বোমাটা সমাহিত করার বেশ কিছুদিন পর নিজেকে কিছুটা শান্ত করতে পেরেছে।
ইদানীং কখনো কখনো মনে হয়, সে-ই বোমাটার নতুন মালিক।
'বাবা এত সকালে কাপড় পরে তৈরি হচ্ছ যে? কোথায় যাচ্ছে? আর আমি বসে আছি তোমাকে বলব, আমার সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যাবে।' বোনের কণ্ঠস্বর মোহনকে বর্তমানে ফিরিয়ে আনে।
'রাখ তোর ডাক্তার। আমাকে আন্ডার-সেক্রেটারির বাড়ি যেতে হবে, শুনেছি ফাইলটা তাঁর কাছে আবার পাঠানো হয়েছে।' তার বাবা জবাব দেন।
'দুপুরের খাওয়াটা সেরে তাঁর সঙ্গে দেখা করলে ভালো হয় না। তোমাকে তো তেমন সুস্থ দেখাচ্ছে না।'
'আমার কিছুই হয়নি। অফিসে আমাকে গেটে ঢোকার জায়গাটায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। দারোয়ান কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেয় না। আমি যতক্ষণ সেক্রেটারিয়েটের সামনে গাছের ছায়ায় অপেক্ষা করব, ফাইলটা তখন ওঠানামা করবে।'
'কিন্তু তুমি যদি টাকা ছাড়া তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখাও করো, তাতে তো কোনো কাজ হবে না।'
'আন্ডার-সেক্রেটারির বাবা আর আমি একসঙ্গে শিক্ষকতা করেছি। আমরা খুব ঘনিষ্ঠও ছিলাম। আমার জন্য একটু তদ্বির করতে তাঁর বাবাকে বলব।'
'তোমার তবু দরকার হতে পারে, এটা রাখো।'
'তুই টাকা পেলি কোথায়?'
'আমার কানের দুল বিক্রি করে দিয়েছি।'
দুজন কতক্ষণ নিশ্চুপ থাকে। তারপর তার বোন বলে, 'সোনার অলংকার পরা তো বাধ্যতামূলক কিছু নয়...যখন দরকার হয়, বেচার জন্যই তো অলংকার।' তার বাবা কোনো জবাব দেন না।
মোহন শুনতে পায়, কাঠের সিঁড়িতে ভারী পা ফেলে দুজন নেমে যাচ্ছে। সে বিছানায় শুয়েই থাকে। ঘুমানোর চেষ্টা করে, কাজ হয় না।
অবসরে যাওয়ার সময় বাবা হাতে কিছু নগদ টাকা পেয়েছিলেন। টাকা তখনই মন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে মোহনের জন্য একটা চাকরি ঠিক করে রাখতে। পানিতে ছোট্ট নূড়ি ফেললে যা হয়, টাকাটারও একই পরিণতি, আস্তে করে ডুবে গেছে। অসংখ্যবার টাকাটা উদ্ধার করার চেষ্টা করেছেন।
একজন সামান্য শিক্ষক তো আর অনেক টাকা জমাতে পারেন না, তাঁর ওপর দুটি সন্তানকে পড়াশোনা করাতে হয়। মোহনের বাবা অতি সাধারণ এবং সৎ শিক্ষক হিসেবে জীবনটা কাটিয়ে দিয়েছেন। আর এখন? এগুলো কি আর তিনি মেনে নিতে পারবেন? ট্রেজারিতে, ব্যাংকে, কড়া রোদে বুড়ো নর-নারীর মাঝখানে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন?
মোহন এতক্ষণ পিঠের ওপর শুয়ে ছিল, এখন একদিকে কাত হয়। বাবাকে নিয়ে সে আর ভাবতে চায় না। তার বদলে বোমাটার কথা আবার ভাবতে শুরু করেছে।
'দাদা, তুমি এখনো ঘুম থেকে ওঠোনি?'
মোহন চোখ মেলে।
টেবিলে খাবারটা রেখে তার বোন বলে, 'তোমার চা আর নাশতা।'
অবাক ব্যাপার। চা! সেই কবে এ বাড়িতে শেষ সকাল_চা হয়েছে। কখনো সে নিচে রাম প্রসাদের হোটেলে চায়ের জন্য ঢুকেছে।
জানালাপথে বাইরে তাকায়। আকাশ স্বচ্ছ ও সবুজাভ। সে দেখতে পাচ্ছে, দূরে থাঙ্গাল বাজারের বহুতল ভবনগুলোর চূড়ায় রোদের মুকুট। আর একবার টেবিলে রাখা চায়ের ওপর চোখ পড়ে...কানের দুলগুলোর কথা মনে হয়।
'আজকাল দাদা তুমি ঘর থেকে বেরই হও না। কিছু হয়েছে নাকি?'
'কিচ্ছু হয়নি।'
এর বেশি কিছু বলেনি। কিছুক্ষণ পর দ্বিধান্বিতভাবে বোনটি বলল, 'দাদা, আমি ভাবছিলাম, নিচতলার রান্নাঘরের মাঝখানে একটা দেয়াল দিয়ে দুই ভাগ করে সামনের দিকটাতে একটা ছোট্ট দোকান চালাতে শুরু করব। কিন্তু বাবাকে রাজি করাতে পারছি না যে।'
বোনটিও নীরব হয়ে যায়। তার চোখও টেবিলের ওপর। এমনকি দিনের আলোতেই তার মুখমণ্ডল ছাইবর্ণ ধারণ করেছে। তারপর হঠাৎ সে হেসে ওঠে এবং বলে, 'দাদা, আমি তোমাকে কী যেন বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভুলে গেছি...শোনো, তুমি যেসব বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছ, এগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। আমি আসলে তোমাকে নিয়েই চিন্তিত।'
মোহন হাসেনি। বেশ বুঝতে পারছে, বোনটি তার দর্শন ও মনস্তত্ত্ব পড়া নিয়ে ঠাট্টা করছে। কিন্তু আসলেই সে অন্য কিছু বলতে চেয়েছিল।
নিচতলায় দুটি রুম। বড়টা রাম প্রসাদের হোটেল। এটা রাম প্রসাদের ঘরও_তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে এখানেই থাকে। দিনের বেলা এটা খদ্দেরদের খাবারঘর। আর রাতের বেলা এক কোনায় ভাঁজ করে রাখা কাপড়, কাঁথা লম্বা বেঞ্চের ওপর ছড়িয়ে ঘুম দেয়।
একবার জন্মগ্রহণ করলে তো বেঁচে থাকতে হবে...সমাজে বাস করতে হবে। ছাত্র অবস্থায় সে জানত শঙ্করাচার্য, আলোচনা করত গীতা ও বেদান্ত, আত্মা ও পরমাত্মা, মহাজগৎ ও মায়া। কিন্তু পৃথিবী কেবলই মায়া_এ কথা বলে কি কেউ সমাজ থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে পারে? অর্জুন, কাজ করে যাও। মানুষকে বেঁচে থকতে হবে। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কী চাই? এটাই কি তার বোন বলতে চাইছে না? কিন্তু সে জিজ্ঞেস করেনি।
'তোমার কি মন খারাপ, দাদা? তুমি কী নিয়ে এত ভাবছ?'
'কিছুই না।'
'ভেবো না। জীবন নিয়ে এত গভীরভাবে ভাবার কিছু নেই। তুমি তো এখনো দাঁত মাজোনি। ঠিক আছে, অসুবিধা হবে না, চা নাও।'
বোনটি ঘর ছেড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়, সম্ভবত রান্নাঘরে। মোহন আবার নিজেকেই জিজ্ঞেস করে, বোনটিকে সে কতটুকু বোঝে? এটা কি বলা যায় যে একই মানের সন্তানরা একজন অন্যজনকে চেনে?
বিয়ের এক বছর হতে তখনো এক দিন বাকি, বোনটা অপ্রত্যাশিতভাবে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসে। তারটা প্রেমের বিয়ে। আসলে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। বোনের ফিরে আসায় মোহন অবাক হয়েছে। তার পরও ভেবেছে, ছোটখাটো ঝগড়া হয়েছে, রেশটা বেশিদিন থাকবে না। দুই দিন পরই বোনের জামাই তাকে ফিরিয়ে নিতে আসে। কিন্তু সে যায়নি। বোনের জামাইটি কম কথার মানুষ। তারও অহংকার আছে, যত ছোট র‌্যাংকেরই হোক, সেও একজন অফিসার, সেই মর্যাদাটা ধরে রাখতে চাইছে। কিন্তু এখন মোহন অন্য কোনো মানুষকে নিয়ে চিন্তা করতে এতটুকুও আগ্রহী নয়। অনেক দিন ধরে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বাবা তার বোনকে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। এমনও বলেছেন, একা যেতে যদি বিব্রত বোধ করে, তাহলে বাবা নিজেই সঙ্গে যাবেন। সে রাজি হয়, হয়নি, বাবা এটা নিয়ে আর জোর করেননি। তার বোনের জামাইটিও আর ফিরে আসেনি।
মোহন বোনকে একদিন জিজ্ঞেস করল, 'কিরে, জামাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করলি কেন?'
'করিনি তো।'
'যদি না করিস, তাহলে সে আসছে না কেন?'
বোনটি খুব কড়া চোখে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, 'আমি এখানে থাকায় তোমার অসুবিধা হচ্ছে?'
কয়েক মুহূর্ত মোহন নিরুত্তর। বোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, 'আমি তো তা বলিনি।'
মোহনের মনে ভয় জেগে ওঠে। বোন আর কথা বাড়ায় না, বেরিয়ে পড়ে। নিঃসঙ্গ মোহন হারিয়ে যায় নিজের ভেতর, ভাবতে থাকে। একজন মানুষের সঙ্গে অন্য একজন মানুষের দূরত্ব কেবলই বাড়তে থাকে। ভালোবাসা একটা বড় তামাশা। যেকোনো কিছু ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে। মোহনের চিন্তা আবার বোমার কাছে ফিরে আসে। টেবিলে রাখা চা আর ধরাই হয় না।
জানালার পাশে চেয়ারে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রাম প্রসাদের হোটেলটা বাস পার্কিংয়ের কাছে হওয়ায় অনেক মানুষ ভেতরে ঢুকছে আবার বেরিয়ে আসছে। অনেকে বাসেও চড়ছে। অন্য কোনো জায়গা থেকে আরো একটি বাস এসে হাজির হলো। অনেকে বাস থেকে নামল। তারা কোত্থেকে এসেছে আর কোথায়ই বা গেল? সব ভ্রমণেরই একটি কারণ থাকার কথা। পাখা পতপত করে দূরে একটি পাখি উড়ে গেল। কোথায় তার গন্তব্য_আর সফরটা...।
বাবার কাশি শুনে মোহন আবার বাস্তবতায় ফিরে আসে। কখন বাবা ফিরেছেন?
'বাবা, তোমার সঙ্গে কি লোকটার দেখা হয়েছে?'
বাবার সঙ্গে আছে তার বোন। প্রশ্নটা বোনের।
'হ্যাঁ।' তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিল। একটু পর বলল, 'আমাদের ১০ হাজার টাকার মতো লাগবে। টাকাটা কি রাম প্রসাদের কাছ থেকে কর্জ নেব?'
'ইবুঙ্গুর চাকরির জন্য যে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছি, তা তো এখনো ফেরত দিতে পারিনি। রাম প্রসাদ ঘরের ভাড়া দেয়, আর তার ওপরই তো আমরা টিকে আছি।' তার বোনটি বলল।
বাবা বললেন, 'আমি যখন জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি এবং পাওনা আর সব টাকা পাব_সব শোধ করে দেব।'
মোহন শুনতে পাচ্ছে, তারা নিচতলার দিকে যাচ্ছে, এবার মোহন জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়নি। কিন্তু খুব নিকট-দূরত্বে সিলিংয়ের দিকে নিবিড়ভাবে তাকিয়ে আছে। বাবা যে রাম প্রসাদের কক্ষে ঢুকেছেন সে দেখেনি।
মোহন রাম প্রসাদের হোটেলে মথা আটা চ্যাপটা করছে। চুলায় লাগানো অগি্নশিখার পাশে একটি বেতের টুলে তার বাবা বসা, তাওয়ায় কাচা রুটি নিক্ষেপ করছে। বাবা ও ছেলে দুজনই ঘামে ভিজে গেছে। ধবধবে সাদা শার্ট আর ধুতি পরে দুই পা আড়াআড়ি রেখে দরজার পাশে একটি চেয়ারে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। যখনই রাম প্রসাদের দিকে চোখ পড়ে, মোহন আতঙ্কিত হয়। তার হাতের কাজ চলতেই থাকে, পাশে বোনের দোকানে যুবকদের হৈ-হল্লাও তার কানে আসে।
আত্মা মরুক কি বাঁচুক, শরীরের মৃত্যু হোক কি শরীর বেঁচে থাকুক_আজ রাতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতেই হবে। তার বোমার ব্যবহার হবে আজই। যেকোনো স্থানে বিস্ফোরণ হতে পারে। মোহন তারপর হঠাৎ থেমে যায়।
'এই যে ভাইজান, শুনছেন ভাইজান!'
মোহনের ঘুম হঠাৎ ভেঙে যায়। মোহন বিস্মিত, তার চোখ উজ্জ্বল, দৃষ্টি অনির্দিষ্ট। তারপর বুঝতে পারে, সে নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সারাটা শরীর ঘামে ভিজে আছে। জানালার দিকে তাকায়। বাইরে সূর্য জ্বলছে।
'ভাইজান, এই যে আমি। আমার ওই জিনিসটা আমাকে ফিরিয়ে দিন। আমাকে কিছু সময়ের জন্য অনেক দূরে চলে যেতে হয়েছিল। কিছু মনে করবেন না।'
মোহন যুবকের দিকে ফিরে তাকায়, তার মুখ থেকে আর একটি শব্দও বের হয় না।
[কিশাম প্রিয়কুমার ভারতীয় সাহিত্য একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক। আধুনিক মণিপুরি সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক তিনি। 'বোমা' মণিপুরি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন তায়েনজাম বিজয় কুমার। গল্পটি ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়। বর্তমান অনুবাদটি ইংরেজি থেকে করা হয়েছে।]

No comments

Powered by Blogger.