প্লে-অফ ম্যাচ থেকে ইতিহাসে

যুক্তরাষ্ট্রের পেসার আনাহিতা অরোরার বল সীমানার বাইরে পাঠিয়েই জয় নিশ্চিত করলেন শুকতারা রহমান। তবে এটাকে আর দশটা উইনিং স্ট্রোকের সঙ্গে মেলানো ঠিক হবে না। ওই এক বাউন্ডারিতেই যে পুরো দলকে নিয়ে নিজেও ইতিহাসে ঢুকে গেলেন শুকতারা। উন্নতির সিঁড়ি ভেঙে বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট যত ওপরেই উঠুক না কেন, ২০১১-এর ২৪ নভেম্বরে বারবার ফিরতেই হবে। এদিনই বিকেএসপির দুই নম্বর মাঠ থেকে 'প্রথমবারের মতো' ওয়ানডে খেলার ছাড়পত্র লেখালেন সালমা খাতুনরা।


'প্রথমবার' বলা এ জন্যই যে সেটি আবার চলে যাওয়ারও শঙ্কা আছে। তবে আপাতত পরবর্তী মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব পর্যন্ত এ ওয়ানডে স্ট্যাটাসটা থাকবে। ওই আসরে সেরা ছয়ে থাকতে পারলেই ধরে রাখা যাবে এ অর্জন। কাল যেমন পঞ্চম স্থানের জন্য অন্য প্লে-অফে জিতে ওয়ানডে স্ট্যাটাস ধরে রেখেছে আয়ারল্যান্ড। আর তাঁদের কাছে হেরে আরেক ইউরোপিয়ান দল নেদারল্যান্ডস ওয়ানডে স্ট্যাটাস খুইয়েছে। এটি পাওয়ার পর প্রত্যেক বছর তিনটি করে ওয়ানডে এবং টোয়েন্টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার বাধ্যবাধকতাও আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) নিশ্চয়ই সেসবের বন্দোবস্ত করবে। এর আগে কাল যুক্তরাষ্ট্রকে ৯ উইকেটে হারিয়ে ওয়ানডে স্ট্যাটাসের প্রথম বার্তা নিয়ে আসা দলটির প্রত্যেকেই নতুন এক ইতিহাসের অংশীদার।
সেই গৌরব নিয়েই আবার শনিবার প্রথম এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে পড়ছেন সালমারা। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেতে দেরি হয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে নিজেদের নাম লেখাতে মোটেও দেরি হচ্ছে না। কাল আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে বাছাই পর্বের পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থান নির্ধারণী ম্যাচটাই পেতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আরো আগেই অবশ্য স্বাগতিকদের ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়া নিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। এমনকি এ নিয়ে বাংলাদেশ দলও ছিল অন্ধকারে। আয়ারল্যান্ডকে হারানোর আনন্দের মাঝেই বিষাদ হয়ে এসেছিল তখনো ওয়ানডে স্ট্যাটাস নিশ্চিত না হওয়ার খবরটা। এরপর শ্রীলঙ্কা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টানা হারের কারণে একটু বিলম্বেই ঘটল ব্যাপারটা। তবে প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র বলেই খুব বেশি অনিশ্চয়তা ছিল না। পঞ্চম স্থানের জন্য এ প্লে-অফ সম্পর্কে বাংলাদেশ অধিনায়ক সালমা খাতুন বলেই রেখেছিলেন যে আগে ফিল্ডিং করলে প্রতিপক্ষকে এক শ'র নিচে গুটিয়ে দিতে চান। কাল যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক ডরিস ফ্রান্সিস টস জিতে ব্যাটিং নিতেই তাই সবে মিলে সে লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারলেন এবং এ ক্ষেত্রে সবার আগে থাকলেন সেই খাদিজাতুল কুবরা। মহিলা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে এ অফস্পিনার যেন নিজ দলের কাছে 'কুইন কোবরা'র মর্যাদাই পাচ্ছেন। আগের ৫ ম্যাচে (জাপানের বিপক্ষে বলই করতে হয়নি) নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। কাল এর সঙ্গে যোগ হলো আরো চারটি (১০-৩-২০-৪)। সঙ্গে অন্যরাও আঁটসাঁট বোলিংয়ে অবদান রাখলেন। আর সম্মিলিত এ পারফরম্যান্সে যুক্তরাষ্ট্র ৭৮ রানের বেশি করতেই পারল না। অধিনায়ক এবং ওপেনার ডরিস ফ্রান্সিসের (২৩) সংগ্রহকেই কেবল টেনেটুনে উল্লেখ করা যায়! এ রান তাড়া করতে নেমে ১২ রানে ওপেনার আয়েশা আক্তারের উইকেট হারালেও জয়ের তীরে নোঙর ফেলে শুকতারা (২৯*) ও ফারজানা হকের (২৭*) জুটি। তবে অর্জনের চৌকাঠ পেরিয়ে যাওয়া ক্ষণটি আসে শুকতারার ব্যাটেই। গুরুত্ব বিবেচনায় এ টুর্নামেন্টের পঞ্চম স্থানের জন্য লড়াইয়ের প্লে-অফ ম্যাচ এমন কিছুই নয়। তবুও বাংলাদেশের জন্য এটা প্লে-অফ থেকে ইতিহাসে ঢুকে যাওয়া ঐতিহাসিক ম্যাচই!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
যুক্তরাষ্ট্র : ৪৭.৩ ওভারে ৭৮/১০ (ডোরিস ২৩, শিবানি ১৩, দুর্গা ১১, অতিরিক্ত ২২; জাহানারা ১/১২, সালমা ১/২৩, শুকতারা ১/১৩, কুবরা ৪/২০, রুমানা ১/৩, সাথীরা ১/০)।
বাংলাদেশ : ১৮.৫ ওভারে ৭৯/১ (আয়েশা ৯, শুকতারা ২৯*, ফারজানা ২৭*, অতিরিক্ত ১৪; মার্শাল ১/৯)।
ফল : বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : খাদিজাতুল কুবরা (বাংলাদেশ)।

No comments

Powered by Blogger.