৭০০ কোটি মানুষ-ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই_ ছোট সে তরী

ক্ষ গ্রহ-নক্ষত্রের অসীম বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এখন পর্যন্ত মানুষের বসবাসযোগ্য গ্রহ মাত্র একটিই। শুধু মানুষের জন্যই নয়, যে কোনো প্রাণের বিকাশের জন্য উপযোগী একমাত্র গ্রহটির নাম পৃথিবী। প্রাণের জন্য অনুকূল পরিবেশ এ গ্রহে কোটি প্রাণীর উদ্ভব ও বিকাশকে সম্ভব করে তুলেছে। পৃথিবী লক্ষ প্রজাতির প্রাণের উন্মেষে আকীর্ণ ও ঋদ্ধ হয়েছে। নতুন প্রাণের উদ্ভব যেমন এ পৃথিবীর জন্য নতুন খবর নয়, তেমনি প্রাণীগুলোর বংশবিস্তারও নয় নতুন ঘটনা।


একদা এ গ্রহে মানুষ ছিল সংখ্যালঘু। লক্ষ প্রাণের মহোৎসবে একাকী, নিঃসঙ্গ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় মানব প্রজাতি এ গ্রহকে জয় করেছে। শুধু গুণগতভাবেই নয়, নিজেদের বিস্তৃতি ও স্পর্শ দিয়ে গ্রহটির কোনায় কোনায় রেখেছে আধিপত্যের স্বাক্ষর। মানুষের এই বিস্তার শুধু একটি প্রজাতির বিস্তার নয়। মানুষের ক্রমবিকাশের দীর্ঘ ইতিহাসে মানব প্রজাতি প্রকৃতির বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রাণ ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের অবিরাম যুদ্ধের ফল হিসেবে গড়ে উঠেছে শহর, সভ্যতা, রাষ্ট্র, সমাজসহ মানবিক বহু প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ক্রমে প্রকৃতি হারিয়েছে সম্পদ, প্রাণশক্তি এবং প্রাণপ্রাচুর্যও। সবক্ষেত্রে মানুষের উত্থান পৃথিবী গ্রহটির জন্য সুখকর হয়নি। তাই মানুষই এখন মানব প্রজাতিটিকে নিয়ে চিন্তিত। এভাবে লোকসংখ্যা বেড়ে মানববসতির বিস্তার ঘটতে থাকলে, মানুষের দরকারে এত কলকারখানা বাড়তে থাকলে শেষ পর্যন্ত পৃথিবী বসবাসযোগ্য গ্রহ হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি-না সে প্রশ্ন আজ জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে অক্টোবরের ৩১ তারিখে পৃথিবীর লোকসংখ্যা ৭০০ কোটি ছুঁয়েছে, এ খবরটি পৃথিবীর দিকে দিকে নতুন বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে। ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড বা ইউএনএফপিএর প্রতিবেদন অনুসারে এখন পৃথিবীতে ৭০০ কোটি মানুষের বাস। নানা দেশে ৭০০ কোটিতম শিশুদের স্বাগত জানানো হয়েছে। কোথাও-বা রীতিমতো উৎসব পালিত হয়েছে। দিন-তারিখ গণনা করে ৩১ অক্টোবর জন্মানো শিশুদের আলাদা করে স্বাগত জানানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি কোনো উদযাপনের সংবাদ? বৈষম্যের পৃথিবীতে কোথাও নিশ্চয় খবরটি উৎসবের। কিন্তু সীমিত আয়ের, সীমিত সম্পদের জনাকীর্ণ দেশগুলোতে এটি কখনও কখনও দুঃসংবাদ হিসেবেও হাজির হতে পারে। ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে সে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা রীতিমতো শঙ্কিত করে তোলার মতো। মাত্র ২০০ বছর আগে পৃথিবীর লোকসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি। ১৫০ বছরে লোকসংখ্যা হয়েছে ৩০০ কোটি। আর গত ৫০ বছরে সংখ্যাটি দ্বিগুণ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২১০০ সালে লোকসংখ্যা হবে ১৫শ' কোটি। ভীষণ উদ্বেগের খবর বটে। পৃথিবী কি এত নতুন শিশুকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত? নতুন শিশুর জন্য বসবাসযোগ্য পৃথিবীতে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের সংস্থান দরকার। বহু দেশ এখনি নতুন শিশুর খাদ্য জোগান দিতে পারছে না। এ হারে লোকসংখ্যা বাড়তে থাকলে নতুন শিশুদের জন্য আগামী পৃথিবী সুখকর হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। তাই লোকসংখ্যা কমানোর জন্য উদ্যোগ দরকার। আর তা হতে হবে জোরেশোরে। বৈশ্বিক সচেতনতার অংশ হিসেবে। আর যারা জন্ম নিয়েছে, জন্ম নিচ্ছে তাদের জন্য সরকারগুলোর বাড়তি মনোযোগ দরকার। খাদ্য, পানি, পুষ্টি ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে দেশগুলোর বাড়তি বিনিয়োগ দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, যে প্রকৃতি ও প্রাণসম্পদের ওপর মানুষের অস্তিত্ব নির্ভরশীল জনসংখ্যার বাড়তি চাপ যেন সে প্রাণ ও প্রকৃতিকে নিঃশেষিত করে না ফেলে সে জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.