টিপাইমুখ বাঁধের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা

টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে সিলেট, জকিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব প্রতিবাদ সমাবেশে বাঁধ নির্মাণ রোধে হরতাল, রোডমার্চসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।সিলেটে গতকাল বৃহস্পতিবার রক্ত দিয়ে হলেও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ


মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তারা এ আহ্বান জানান। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ইলিয়াস আলী। তিনি বলেন, 'ভারত সরকার বলছে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ করছে। অথচ শেখ হাসিনা গত বুধবার সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ভারত এককভাবে কিছুই করতে পারবে না। কিছুদিন আগেও শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আগে বাঁধ নির্মাণ হোক, এরপর প্রতিক্রিয়া কী হয় তা দেখা যাবে। তাঁর মন্ত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের বহুমুখী ভূমিকায় আমরা স্তম্ভিত।' তিনি বলেন, সরকার আজ কী করল না করল তা না দেখে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জীবন ও রক্ত দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য সিলেটসহ সারা দেশের দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত চৌধুরী সাদেকের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল গফফার, আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী, নাসিম হোসাইন, শেখ মো. মখন মিয়া চেয়ারম্যান, বদরুজ্জামান সেলিম, তারেক আহমদ চৌধুরী, মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়ছল, অ্যাডভোকেট শামুসজ্জামান জামান, কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জিয়াউল গনি আরেফিন জিল্লুর প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল কোর্ট পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
এ ছাড়া টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ হলে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে তা নিয়ে বিএনপি একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করেছে। বাঁধের প্রতিবাদে আগামী ১ ডিসেম্বর হরতাল ডেকেছে বিএনপি। হরতালে সমর্থন দিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। সংগঠনটি ৮ ডিসেম্বর সিলেট থেকে জকিগঞ্জ অভিমুখী রোডমার্চ করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব সাবেক এমপি শাহীনূর পাশা চৌধুরী।
এদিকে টিপাইমুখে বাঁধের প্রতিবাদে জকিগঞ্জ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল গত বুধবার পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাফিকুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সিলেট জেলা যুবদলের সভাপতি আবদুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল আহমদ, অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক, মাওলানা বদরুল হক, এনামুল হক শাহীন। বক্তব্য দেন এ জি এম জয়নাল, রিপন আহমদ, আহমদ রেজা মানিক প্রমুখ।
বক্তারা সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে বলেন, সরকারের নীরবতার কারণে আধিপত্যবাদী ভারত সরকার আন্তর্জাতিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে সিলেটকে মরুভূমিতে পরিণত করতে চায়। এ জন্য সিলেটবাসীকে সবার আগে সোচ্চার হতে হবে।
অন্যদিকে টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ আন্দোলনের উদ্যোগে মৌলভীবাজার জেলা শহরের চৌমোহনায় মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধন শেষে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মৌলভীবাজারের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান আবুল খয়ের চৌধুরী, সিপিবি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিলিমেষ ঘোষ বলু, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর মিজানুর রহমান, বাসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সদস্যসচিব মামুনুর রশীদ সোহেল, যুব ইউনিয়ন মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ, ছাত্র ইউনিয়ন জেলা কমিটির সহসভাপতি আবদুর রব, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের প্রীতম দাশ, বন্ধুসভা মৌলভীবাজারের নূর হোসেন নয়ন ও টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ আন্দোলন মৌলভীবাজারের সদস্যসচিব মাহবুবুল আলম রুহেল।
সমাবেশ থেকে টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ আন্দোলন মৌলভীবাজার আগামী ১১ ডিসেম্বর জেলার সাধারণ মানুষকে নিয়ে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

No comments

Powered by Blogger.