টেন্ডুলকারের 'পয়া' চব্বিশ

সংখ্যাতত্ত্বে শচীন টেন্ডুলকারের বিশ্বাস কতটা জানা যায়নি। তবে ২৪ তারিখটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯৯টি সেঞ্চুরি করে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা এ ব্যাটসম্যানের জীবনে। তাঁর জন্ম ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল। সেই থেকে শুরু। জন্মের পর থেকে ২৪ তারিখটা অনেকবারই নতুন কিছু নিয়ে এসেছে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরিসহ অনেক রেকর্ডের মালিকের জীবনে।
গতকাল আরেকটা ২৪ তারিখ (২৪ নভেম্বর) এসেছিল, সকাল থেকে সুযোগটা পেলে কী হতো কে জানে, তবে গৌতম গম্ভীর আউট হওয়ার পর ব্যাট করতে নেমে দিন শেষে ৬৭ রানে অপরাজিত 'এ যুগের ব্র্যাডম্যান'। আজ যদি কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরিটা হয়ে যায় তাহলে এর পেছনেও ২৪-এর খানিকটা 'কৃতিত্ব' কিন্তু মানতেই হবে। অনেকের বেলায় থারটিন নাকি আনলাকি আর সেভেন লাকি, টেন্ডুলকারের জীবনে পয়া তারিখ সাত নয়,চব্বিশ!
২৪ নভেম্বর, ১৯৮৯
কপিল দেবের শততম টেস্ট। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের পাঁচ ক্যাচ নিয়ে রেকর্ড করা। আর ১৬ বছর ২০৪ দিন বয়সী শচীন টেন্ডুলকারের টেস্ট অভিষেক। ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর শুরু হওয়া করাচি টেস্টটা আলোচিত অনেক কারণেই। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ইনিংসে টেন্ডুলকার সেই ম্যাচেই টেস্ট আঙিনায় পা রাখা ওয়াকার ইউনুসের বলে বোল্ড হয়ে গিয়েছিলেন ১৫ রান করে। তবে ওই ১৫ রানের ইনিংসেই জানান দিয়েছিলেন ক্রিকেটবিশ্বকে অনেক দিন শাসন করার জন্যই এসেছেন তিনি। ওয়াকারের বাউন্সারে নাক ফেটে রক্ত বেরোলেও নির্ভয়ে তাঁকে ব্যাট করতে দেখে ইমরান খান তখনই বলেছিলেন, এ ছেলে বড় ক্রিকেটার হবেই। হয়েছেনই তো! ফয়সালাবাদে দ্বিতীয় টেস্টেই ফিফটি করেছিলেন টেন্ডুলকার। ম্যাচের প্রথম দিন ২৩ নভেম্বর ভারত ৪ উইকেটে করে ২০০ রান আর টেন্ডুলকার অপরাজিত ছিলেন ৩৫ রানে। পরের দিন, অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ফিফটি।
২৪ নভেম্বর, ১৯৯৩
ক্রিকেটে লোকগাথা হয়ে আছে ২৪ নভেম্বর '৯৩-এর ইডেনে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার হিরো কাপের সেমিফাইনালটা। ওই ম্যাচেই প্রথমবারের মতো ইডেনে খেলা হয় ফ্লাডলাইটে। ভারতের মাটিতে প্রথম কোনো ম্যাচে ভিডিও রিপ্লের'ও প্রবর্তন হয়েছিল ম্যাচটিতে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৯৫ রানেই গুটিয়ে যায় আজহারের ভারত। টেন্ডুলকার করেন ১৫ রান। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৪৫। ৪ ওভারে ৩৯ তুলে ফেলায় শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল মাত্র ৬ রানের, হাতে ৩ উইকেট। অনেকটা জুয়া খেলার মতোই কপিল দেব, মনোজ প্রভাকর বা জাভাগাল শ্রীনাথের বদলে আজহার শেষ ওভারটা করার জন্য ডাকেন টেন্ডুলকারকে! অবাক হওয়ার মতো সিদ্ধান্ত। তবে এমন 'জুয়া' খেলেও জিতে যান আজহার। ইনিংসের শেষ ও সেই ম্যাচে নিজের একমাত্র ওভারটিতে মাত্র ৩ রান দেন টেন্ডুলকার! নাটকীয়ভাবে ২ রানে ম্যাচ জিতে ফাইনালে নাম লেখায় ভারত।
২৪ এপ্রিল, ১৯৯৮
সেদিন ছিল টেন্ডুলকারের ২৫তম জন্মদিন। দিনটাকে স্মরণীয় করে রেখেছিলেন অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে ভারতকে কোকাকোলা কাপের শিরোপা জিতিয়ে। শারজায় কোকাকোলা কাপ ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেটে ২৭২ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় ভারতকে। টেন্ডুলকারের ১৩১ বলে ১২ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় সাজানো ১৩৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ভারত জয় পায় ৯ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০০
অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, জ্যাক ক্যালিসদের তোপে মুম্বাই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২২৫ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মাঝেও ব্যতিক্রম ছিলেন টেন্ডুলকার। ২০৮ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৬৩ বলে ১২ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় করেছিলেন ৯৭ রান। পরের দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকাও অল আউট হয়েছিল ১৭৬ রানে। টেন্ডুলকার নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ১১৩-তে গুটিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটি জিতে যায় ৪ উইকেটে।
২৪ অক্টোবর, ২০০১
দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের ৯ম ম্যাচে সেদিন কেনিয়ার বিপক্ষে ১৮৬ রানের জয় পায় ভারত। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে টেন্ডুলকারের ১৩২ বলে ১৪৬ ও সৌরভ গাঙ্গুলীর ১১১ রানের সুবাদে ৩ উইকেটে ৩৫১ রান করে ভারত। জবাবে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে মাত্র ১৬৫ রান করতে পেরেছিল কেনিয়া।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০২
২১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া নাগপুর টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০১ রানে জিতেছিল ভারত। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ২৮৭ রানের জবাবে ভারত ইনিংস ঘোষণা করে ৭ উইকেটে ৫৭০ রান তুলে। তৃতীয় দিন শেষে টেন্ডুলকার অপরাজিত ছিলেন ১৩৭ রানে। পরের দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি আউট হন ১৭৬ করে।
২৪ আগস্ট, ২০০৭
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সৌরভ গাঙ্গুলীর দল করেছিল ৭ উইকেটে ৩২৯। ১১২ বলে ১৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৯৯ রান করে টেন্ডুলকার আউট হন ফ্লিনটফের বলে। ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিসের আফসোসটা অবশ্য ভুলে গিয়েছিলেন ভারত রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটিতে ৯ রানের জয় পাওয়ায়।
২৪ জানুয়ারি, ২০০৮
অস্ট্রেলিয়া-ভারতের বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের শেষ টেস্টটি অ্যাডিলেডে শুরু হয়েছিল ২৪ জানুয়ারি। টেন্ডুলকার প্রথম দিনে অপরাজিত থাকেন ১২৪ রান করে। তাঁর ২০৫ বলে ১৫৩ রানের ইনিংসের ওপর করে ভারত তোলে ৫২৬ রান। অস্ট্রেলিয়াও প্রথম ইনিংসে ৫৬৩ করলে ড্র হয়ে যায় ম্যাচটি।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১০
গোয়ালিয়রে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেদিন নতুন ইতিহাস গড়েন টেন্ডুলকার। ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি। ১৪৭ বলে ২৫ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ঠিক ২০০ করে অপরাজিত থাকেন 'ব্যাটিং জাদুকর'। ৪৯.৩ ওভারে ল্যাঙ্গেভেল্টের বলে ১ রান নিয়ে পেঁৗছেছিলেন দুই শ' রানে। ম্যাচটিতে ভারতের ৩ উইকেটে ৪০১ রানের জবাবে প্রোটিয়ারা অল আউট হয়ে যায় ২৪৮-এ।
২৪ মার্চ, ২০১১
বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার ২৬০ রানের চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে যাওয়ার পথটা প্রশস্ত হওয়ার শুরু টেন্ডুলকারের ব্যাটে। তাঁর ৬৮ বলে ৭ বাউন্ডারিতে করা ৫৩য় ১৮ ওভারে ১ উইকেটে ৯৪ রান করে ফেলেছিল ভারত। এরপর গম্ভীরের ৬৪ বলে ৫০ ও যুবরাজ সিংয়ের ৬৫ বলে ৫৭ রানের ইনিংসের সহায়তায় ৫ উইকেটের সহজ জয়ই পায় মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। টানা তিনটি বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া বিদায় নেয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই। ওয়েবসাইট

জন্ম : ২৪ এপ্রিল, ১৯৭৩
প্রথম টেস্ট ফিফটি : ২৪ নভেম্বর, ১৯৮৯
বল হাতে 'ম্যাজিক' : ২৪ নভেম্বর, ১৯৯৩
কোকাকোলা কাপ জেতানো : ২৪ এপ্রিল, ১৯৯৮
ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি : ২৪ মার্চ, ২০১১

No comments

Powered by Blogger.