মর্যাদা ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি by সঞ্জয় সাহা পিয়াল

কের পর এক সাংবাদিকের ইন্টারভিউ, ফটোগ্রাফারদের আবদার মিটিয়ে বিভিন্ন ফ্রেমের ছবি। দূর থেকে দাঁড়িয়ে মেয়ের সেলিব্রেটি হয়ে যাওয়া মেয়েকে দেখে কেমন লাগছিল মা পারভীন রহমানের? 'ভালো, ভীষণ ভালো...।' চোখের জল আড়াল করেই ছোট্ট প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন খুলনা থেকে খেলা দেখতে আসা শুকতারা রহমানের মা। আপনার মেয়ে দেশের জন্য একটি সম্মান এনে দিয়েছেন, কতটা গর্বিত বোধ করছেন? এবার আর ভেতরে জমে থাকা কষ্টটা


চাপা রাখতে পারেননি পারভীন রহমান। 'আগে ও যখন খেলতে মাঠে যেত, তখন পাড়ার অনেকেই অনেক কথা বলত। তবে ও যেদিন থেকে জাতীয় দলে খেলা শুরু করে, তখন তারাই দূর থেকে আমাকে দেখিয়ে বলত_ ওই দেখো শুকতারার মা...।' মেয়েকে বুকে জড়িয়েই কেঁদে ফেলেছিলেন মা। সফল একটি মায়ের মতোই আরও অনেক মা'কে দেখার অপেক্ষায় এখন বাংলাদেশ। কারণ এদিন যুক্তরাষ্ট্রকে ৯ উইকেটে হারিয়ে নারী ক্রিকেট ওয়ানডে এবং টি২০ ম্যাচের মর্যাদা আদায় করেছে। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা যেমন ধরে রাখা কঠিন, তেমনি ওয়ানডে মর্যাদাও ধরে রাখা সহজ নয়। তবে এজন্য আরও ক্রিকেটারের প্রয়োজন। 'যেটা অর্জন করেছি অনেক কষ্ট করে, সেটা ধরেও রাখতে পারব আমরা। আমাদের এ অর্জনের পর হয়তো অনেকেই আগ্রহ দেখাবে মাঠে আসার। সুযোগ- সুবিধা পেলে আরও অনেক ক্রিকেটার পাব আমরা। দেশে যেসব মেয়ে ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী, তাদের কাছে আমার আবেদন_ আপনারা এগিয়ে আসুন। আমরা যে পথে পা দিয়েছি, সেটা লম্বা করতে হবে।' ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাইক টেনে এভাবেই ওয়ানডে স্ট্যাটাস ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অধিনায়ক সালমা খাতুন।
হাতেগোনা কয়েক ক্রিকেটারকে নিয়ে এ আসরের দল ঘোষণা করতে হয়েছিল নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে। কোচ মমতা মাবেনও বিভিন্ন সময় ক্রিকেট সংকটের কথা বলেছেন। 'আমার দলে হাফ সেঞ্চুরি করার মতো একাধিক ক্রিকেটার নেই। আরও মেয়েকে এগিয়ে আসতে হবে।' ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বছরে এখন অনেকগুলো সিরিজ খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মতো দেশের বিপক্ষেও খেলতে হবে বাংলাদেশিদের। সেজন্যই নিজেদের আরও প্রস্তুত করতে হবে বলে মনে করেন শুকতারা আহমেদ। 'এ আসর থেকে অনেক কিছু শিখেছি আমরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তানের মতো বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলেছি। খেয়াল করেছি ওদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা। আমাদের ব্যাটিং আরও ভালো করতে হবে। ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার পর আমাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।' বিসিবির উইমেন উইং চেয়ারম্যান আবদুুল্লাহ আল ফুয়াদ রিদোয়ানও স্বীকার করেন_ এখন আর আগের অবস্থায় নেই নারী দল। আগে যেখানে ছেলেরা কখন জিম করে বেরোবে তার অপেক্ষা করতে হতো, তা আর করা যাবে না। মুশফিক-সাকিবদের মতোই এখন সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে সালমা-শুকতারাদের। তাদের জন্যও আলাদা মাঠ, আলাদা হোস্টেল দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন জেলায় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে। 'শুধু ক্রিকেটারদেরই দায়িত্ব বাড়েনি, আমাদেরও বেড়েছে। মেয়েদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে আমাদেরই।'
ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর শনিবারই বিকেএসপির মাঠে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন সালমারা। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারলে আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়েও ৯ নম্বরে উঠে আসবে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ম্যাচ খেলার শুরুর দিন থেকে প্রতি বারো মাস অন্তর রিভিউ করবে আইসিসি। বছরে অন্তত তিনটি ওয়ানডে এবং টি২০ খেলতে হবে সালমাদের। হারলে অসুবিধা নেই, ওয়ানডে স্ট্যাটাস টিকিয়ে রাখার জন্য এখন শুধু নিয়মিত খেলতে হবে। তাই এখন আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই, এগিয়ে যেতে হবে শুধু সামনেই। 'বড় একটা মাইলফলকে পেঁৗছেছে মেয়েরা। এখন আর পিছিয়ে তাকানোর সময় নেই। এখন জিতলে যেমন রেকর্ড বুকে লেখা থাকবে, তেমনি হারলেও জাবাবদিহি করতে হবে। তবে আমার বিশ্বাস, ওয়ানডে স্ট্যাটাস ধরে রাখতে পারবে বাংলাদেশ। শুভেচ্ছা থাকল সালমাদের জন্য।'

No comments

Powered by Blogger.