বেসরকারি মেডিকেল কলেজ-গলাকাটা ভর্তি ফি কেন?
'বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-১১' নামে সংশোধিত নীতিমালায় ভর্তি ফি সংক্রান্ত কোনো সরকারি নির্দেশনা নেই। এ কারণে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ইচ্ছামতো ভর্তি ফি আদায়ের আলামত দেখা যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তিচ্ছুদের চাপে ফেলে নিজেদের পূর্বঘোষিত ভর্তি ফির অঙ্ক আরও বাড়িয়ে নেওয়ার কৌশল নিয়েছে।
কলেজভেদে ভর্তি ফি ১২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার পর্দার আড়ালে উলি্লখিত অঙ্কের চেয়েও বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ কারণে নিম্ন-মধ্যবিত্ত, এমনকি মধ্য-মধ্যবিত্তের সন্তানদেরও মেডিকেলে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মারাত্মক আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গরিবের মেধাবী সন্তানদের তো বেসরকারি মেডিকেলে পড়ার অবস্থাই নেই। এভাবে বেসরকারি কলেজগুলো মেডিকেল শিক্ষাকে মহার্ঘ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের নূ্যনতম মানবসেবার মানসিকতাকে টুঁটি টিপে অঙ্কুরেই হত্যা করছে। বিপুল অর্থ ব্যয়ের পর একজন ছাত্র যখন শিক্ষাজীবন শেষে চিকিৎসক হয়ে বেরোবেন তখন তার নজর থাকবে অতি দ্রুত মাত্রাতিরিক্ত উপার্জন করার দিকে। এ কারণে তারা অনেকেই মানবসেবার পরিবর্তে নিজেদের নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা ভেবে গরিব রোগীদের কাছ থেকেও নানাভাবে বাড়তি অর্থ আদায়ের চেষ্টা করবেন। দেশের সবক'টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ উন্নত পাঠদান, উন্নত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণসমৃদ্ধ এটা দাবি করা যাবে না। এ কারণে এসব কলেজ থেকে যারা পাস করে বেরোবেন, চিকিৎসক হিসেবে তারা সবাই একই রকম পসার জমাতে পারবেন তেমন নিশ্চয়তাও নেই। তাই যেসব পরিবার তাদের সন্তানের পেছনে ঋণ করা অর্থ ব্যয় করবে, তারা পারিবারিকভাবেই ভবিষ্যতে আর্থিকসহ নানা ধরনের সংকটের মুখোমুখি হতে পারেন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো উন্নত শিক্ষার প্রয়োজনে ভর্তির সময় বেশি অর্থ নেওয়ার যুক্তি দিচ্ছে। এ ধরনের যুক্তি কতটা বাস্তবসম্মত? একজন শিক্ষার্থীর পেছনে ডাক্তার হওয়া পর্যন্ত গড়ে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করা কতজন অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব? তাই সরকারের উচিত বেসরকারি কলেজগুলোর ভর্তি ফিকেও নিয়মনীতির মধ্যে নিয়ে আসা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ব্যক্তির পকেটে লাভ পোরার জন্য নয়।
No comments