রেকর্ড পরিমাণ চাল আমদানি-বিতরণব্যবস্থাও সুষ্ঠু করতে হবে

রকার মাত্র পাঁচ মাসে চাল আমদানির ক্ষেত্রে গত ১০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এ পর্যন্ত সরকার ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন চাল কিনেছে। অথচ গত অর্থবছরও সরকার চাল আমদানি করেছিল মাত্র সাত লাখ ২৪ হাজার ৯০ মেট্রিক টন। এ বছর বোরো মৌসুমেও অনেক চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিকে সরকারি গুদামগুলোতেও প্রায় ১২ লাখ টন চাল রয়েছে। এসব দেখে মনে হচ্ছে, সরকার চালের বাজারের অস্থিরতা, মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে


বদ্ধপরিকর হয়ে মাঠে নেমেছে। সরকারের এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। কারণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে চালের মূল্যবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।
আমদানি ছাড়াও এ বছর ধানের ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। উল্লেখ্য, দেশে পর পর তিন বছর ধরেই ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে। তার পরও চালের বাজারে গত বছরও আমরা চরম অস্থিরতা দেখেছি। তার পরও মজুদদারি, সিন্ডিকেট এবং অন্যান্য কারণে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছিল। বলে নেওয়া ভালো, ঠিকমতো ফলন হলে আমাদের নিজস্ব উৎপাদনই দেশের মোট চাহিদার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই পূরণ করে। তার পরও গত বছর সাত লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, গত বছর দেশে চালের কোনো সংকট ছিল না। তার পরও চালের বাজার এমন অস্থির হওয়ার কী কারণ ছিল? কারণ নিশ্চয়ই অসাধু ব্যবসায়ীচক্রের কারসাজি, মজুদদারি ইত্যাদি। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সেই মজুদদারিতে মদদ দিয়েছিল কিছু ব্যাংক। ফলে স্বাভাবিক বাজারের নিয়মে যে দামে চাল বিক্রি হওয়া উচিত ছিল, ক্ষেত্রবিশেষে কেজিপ্রতি তার চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি মুনাফা লুটে নেওয়া হয়েছিল।
জনগণের কল্যাণই যদি সরকারের কাম্য হয়, তাহলে চালের বাজার অবশ্যই স্থিতিশীল করতে হবে। আর সে কারণে কেবল আমদানি নয়, বিতরণব্যবস্থাও সুষ্ঠু করতে হবে। ওপেন মার্কেট সেল বা ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস কার্ড ও সীমিত পরিমাণে রেশনিংয়ের যে ব্যবস্থা আছে, তাকে আরো জোরদার করতে হবে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), টেস্ট রিলিফ (টিআর), ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিংসহ (ভিজিএফ) অন্যান্য কর্মসূচিও দুর্নীতিমুক্ত ও জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি মজুদবিরোধী আইন আরো শক্তিশালী করতে হবে এবং সে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। জানা গেছে, মজুদদারদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলেরও অনেক হোমরাচোমরা আছে। তারাও যাতে আইনের আওতায় আসে, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ এরা দলের জনপ্রিয়তার জন্যও ক্ষতিকর। পাশাপাশি ব্যাংকঋণের অপপ্রয়োগও বন্ধ করা প্রয়োজন। আশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল সেভাবেই অগ্রসর হবে।

No comments

Powered by Blogger.